জুতা পালিশে দেরি, দোকানি-কর্মচারীকে পেটালেন ২ ছাত্রলীগ নেতা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) পাশের বাজারে জুতা পালিশ করতে দেরি হওয়ায় ব্যবসায়ী ও দোকানের কর্মচারীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুই নেতার বিরুদ্ধে। শুক্রবার (৬ মে) রাতে ইসলামনগর বাজারের ‘মেসমেরাইজ’ নামে জুতার দোকানে এ ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগীরা হলেন দোকানের মালিক রোমেন রায়হান, তার বড় ভাই নেওয়াজ রাসেল বাপ্পি ও দোকানের কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম মিরাজ।
মারধরে অভিযুক্তরা হলেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সাব্বির হোসেন নাহিদ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান জয়। সাব্বির বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও শহীদ রফিক-জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র এবং মেহেদী হাসান জয় একই ব্যাচের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও মওলানা ভাসানী হলের আবাসিক ছাত্র।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ওই দোকানে জুতা কিনতে যান সাব্বির ও মেহেদী। তবে জুতা বিক্রি করার পর পালিশ করতে দেরি করেন দোকানের কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম। এতে সাব্বির উত্তেজিত হয়ে যান এবং দ্রুত পালিশ করার জন্য ধমক দিতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই কর্মচারীর সঙ্গে সাব্বিরের কথা কাটাকাটি হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে মারতে মারতে দোকানের মধ্যে থেকে বাইরে নিয়ে আসেন সাব্বির। পরে রাস্তায় কয়েক দফা মারধর করেন।
মারধরের পর ওই কর্মচারীকে কান ধরিয়ে ওঠবস করানো এবং পা ধরে মাফ চাওয়ানো হয়। এসময় দোকান মালিকের বড় ভাই নেওয়াজ বাপ্পি তাদের থামানোর চেষ্টা করলে তাকেও থাপ্পড় মারেন মেহেদী হাসান জয়।
ভুক্তভোগী কর্মচারী মিরাজুল ইসলাম বলেন, জুতা কেনার পর নিয়ম অনুযায়ী জুতা পালিশ করতে শুরু করি। এসময় তারা তাড়াহুড়ো শুরু করলে একটু সময় লাগবে বলে তাদের জানাই। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আমাকে বেধড়ক কিল-ঘুসি ও লাথি মারতে থাকে।
দোকান মালিকের বড় ভাই নেওয়াজ রাসেল বাপ্পি বলেন, ওই দুইজন মিরাজকে মারধর করছিল। এসময় আমি তাদের বাধা দিলে আমাকেও মারধর করে।
দোকান মালিক রোমেন রায়হান বলেন, আমি বাইরে ছিলাম। দোকানে গিয়ে দেখি তারা কর্মচারীকে পেটাচ্ছে। আমি তাদের ক্যাম্পাসের বড় ভাই পরিচয় দেওয়ার পরও তারা মারতে থাকে। তারা আমার বড় ভাইকেও মারধর করেছে। এছাড়া দোকান বন্ধ রাখার জন্য হুমকি দিয়ে গেছে। এ ঘটনায় আশুলিয়া থানায় মামলা করেছি।
তবে অভিযুক্ত সাব্বির হোসেন নাহিদ বলেন, মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি। উল্টো তারা আমাদের ভাঙতি টাকা দিতে ঝামেলা করে। এমনকী আমাদের জুতা কেনার কোনো রশিদ তারা দেয়নি। আমরা ভোক্তা অধিকারে অভিযোগ দেব।
আরেক অভিযুক্ত মেহেদী হাসান জয় বলেন, আমাদের তাড়া থাকায় দোকানের কর্মচারীকে দ্রুত জুতা পালিশ করতে বলি। তখন সে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি হয়েছে তবে মারধরের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান সোহেল বলেন, মারধরের খবর পেয়েছি। সাংগঠনিক নিয়মানুযায়ী অন্যের গায়ে হাত তোলার এখতিয়ার কারও নেই। তারা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে পারতো। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সোহেল খন্দকার বলেন, অভিযোগের বিষয়ে শুনেছি। তদন্তের জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। থানায় গেলে পুরো ঘটনা জানতে পারব।
মাহবুব সরদার/এমআরআর/জেআইএম