শেকৃবিতে খাবারের মূল্যবৃদ্ধি, চিন্তায় শিক্ষার্থীরা
রমজানে রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে পেট চালানো দায় হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীদের। হলের ডাইনিং বা ক্যান্টিন থেকে খাবার কিনতে গিয়ে পকেট ফাঁকা হচ্ছে তাদের। এতে বেকায়দায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। খাবারের চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটছে পড়াশোনা ও অন্যান্য কাজে। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খাবারের মান বাড়ানোর জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি। তবে শিক্ষার্থীরা বলছেন, অস্থির বাজারে হঠাৎ এই মূল্যবৃদ্ধি আগুনে ঘি দেওয়ার মতো।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, করোনা মহামারির পর থেকেই শেকৃবির হলগুলোতে খাবারের দাম বাড়ানো হচ্ছে। ১০-১৫ টাকা করে বেড়েছে প্রতি হলে। তবে রমজান মাসে এ দাম আরও বাড়ে। অতিরিক্ত দামের ফলে শিক্ষার্থীরা রুমে রান্না করে খাওয়ার দিকে ধাবিত হচ্ছেন। ফলে তাদের নষ্ট হচ্ছে মূল্যবান সময়। একই সঙ্গে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের তিনটি ও মেয়েদের দুটি আবাসিক হলের ডাইনিংয়ে প্রতিবেলা খাবারের দাম ছিল ৩৫ টাকা। এই টাকায় মিলতো মাছ, ডিম ও মুরগির মাংসের যে কোনো একটি পদ। সঙ্গে ছিল সবজি ও ডাল-ভাত। আর হলের ক্যান্টিনে মাছের টুকরাসহ ভাত-ডালের দাম ছিল ৪৫ টাকা, আর ডিম নিলে হতো ৪০ টাকা। যদি কেউ মুরগি ও ভাত-ডাল নিতেন তাহলে গুনতে হতো ৫০-৫৫ টাকা। কিন্তু রমজানে এসে হলগুলোতে প্রতি পদের খাবারে দাম বেড়েছে ২৫-৩৫ টাকা।
আরও পড়ুন: দেশের তৃতীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠান শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
ছেলেদের হলের ডাইনিংয়ে সেহরির টোকেন মূল্য ৩৫ থেকে বাড়িয়ে ৬০ করা হয়েছে। যেখানে এক টুকরা মাছ অথবা মাংসের সঙ্গে সবজি ও ডাল-ভাত থাকবে। অন্যদিকে ক্যান্টিনে মুরগি ৭০ টাকা, মাছ ৬০ টাকা এবং গরুর মাংস ১০০ টাকা করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে ডাল-ভাত এবং সবজি।
তবে হল ভেদে রয়েছে দামের পার্থক্য। যেমন শেরেবাংলা হলের ক্যান্টিনে গরুর মাংসের দাম ধরা হয়েছে ৯০ টাকা। অন্যদিকে কৃষকরত্ন সেখ হাসিনা হলে সেহরিতে টোকেন মূল্য ৬০ টাকা করা হয়েছে। সঙ্গে থাকবে দুধ-কলা। তবে রমজানের আগে প্রতি হলে ৪০ টাকায় ডিমের তরকারি চালু থাকলেও তা এখন বাদ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়াতে সেহরিতে প্যাকেজ পদ্ধতিতে খাবার দেওয়া হয়। যার মূল্য ১০০ টাকা। এই প্যাকেজে রয়েছে মুরগি, গরু ও মাছের যে কোনো একটি পদ। সঙ্গে ভর্তা ও দুধ।
ক্যান্টিনে নিয়মিত খাবার খান এমন শিক্ষার্থীরা জানান, সারাবছর ডিম থাকলেও প্রায় সবগুলো হলে সেহরিতে ডিম বাদ দেওয়া হয়েছে। এই কারণে সেহরিতে ৬০ টাকার কমে কোনো খাবার পাওয়া সম্ভব নয়। এমনিতেই সবকিছুর দাম বেশি। সংবাদে দেখি দাম বেশি হওয়ায় অনেক জায়গায় ৫-১০ টাকার বাজারও দিচ্ছে, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ৬০ টাকার নিচে খাবারের কোনো সুযোগই রাখেনি। সেহরিতে প্রতিদিন ৬০ টাকা দিয়ে খাবার কিনে খাওয়া মধ্যবিত্ত ছাত্রদের জন্য অনেকটাই কষ্টের।
আরও পড়ুন: হলের সিঁড়িতে বসে গাঁজা সেবন, শেকৃবির দুই শিক্ষার্থী আটক
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, ক্যান্টিনগুলোতে প্রায় সেহরিতে খাবার শেষ হয়ে যায়। তখন তাড়াতাড়ি করে পানি ও মশলা দিয়ে তৈরি করা হয় ঝোল। এসব খাওয়ার অনুপযোগী হলেও মূল্য রাখে একই পরিমাণ। প্রশাসনের কাছে আবেদন বেশি দামের খাবারের পাশাপাশি, কম দামের খাবার ডিম বা অন্যান্য যেমন তেলাপিয়া, পাঙাশ বা কম দামের মাছও যেন রাখা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরে অধ্যয়নরত ও সরকারি চাকরি প্রার্থী ইয়াসির আরাফাত (ছদ্মনাম) জাগো নিউজকে বলেন, বাবার বয়স বেশি, তিনি এখন অসুস্থ। তার আর্থিক অবস্থার কথা চিন্তা করে বাড়ি থেকে টাকা চাইতে লজ্জা লাগে। তাই নিজের খরচ নিজেই চালাই। বর্তমানে একটি টিউশন করে চার হাজার টাকা আয় হয়। এরমধ্যে যাতায়াতে খরচ হয় ৪০০-৫০০ টাকা। হলের ডাইনিংয়ে সেহরিতে ৬০ এবং রাতে খেতে ৩৫ টাকায়। ইফতারে সর্বনিম্ন খরচ করলেও ৩০-৪০ এর নিচে হয় না। তাতে শুধু খাবারেই প্রতিদিন খরচ পড়ে যায় ১৩০-১৪০ টাকা। এতে করে দেখা যায় রমজান মাসে খাবারেই খরচ হবে ৩৫০০-৩৬০০ টাকা।
আরও পড়ুন: শেকৃবির গবেষণার মাঠ যেন মাদকের ‘আড্ডাখানা’
এই শিক্ষার্থী বলেন, পুরো মাসে খাবার ও যাতায়াতেই চার হাজার টাকা শেষ। অন্যদিকে নতুন বই ও চাকরির ফর্ম পূরণের খরচ তো আছে। ঈদে কেনাকাটা বা বাড়ি যাওয়ার গাড়ি ভাড়ার কথা চিন্তা করতে হয়। সব মিলিয়ে হয়তো কারও থেকে ধার পেলে বাড়ি যাওয়া সম্ভব হবে। নতুবা আমার মতো অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ঈদ করতে হবে।
তিনি বলেন, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ থাকবে, ডাইনিংয়ের খাবারে ভর্তুকি বাড়িয়ে জনগণের টাকায় চলা বিশ্ববিদ্যালয়ে শ্রমিক-কৃষকের সন্তানরা যেন দুবেলা খেয়ে লেখাপড়া করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, বাজারে দ্রব্যমূল্যের দাম একটু বাড়লে, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিং-ক্যান্টিন ম্যানেজাররা খাবারের দাম এমনভাবে বাড়িয়ে দেন বা পরিমাণ কমিয়ে দেন যেন তাদের লাভ আগের চেয়েও বেশি হয়। কিছু বলতে গেলেই বলে বাজার চড়া। বাজার কতটা চড়া এবং তারা দাম কতটুকু বাড়লো এটা তদারকির কেউ নেই।
তবে ক্যান্টিন পরিচালনায় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারের পরিস্থিতির কারণেই খাবারের দাম বাড়ানো হয়েছে। মাছ, মুরগি, ডিমসহ সব জিনিসের দাম প্রথম রোজা থেকে বাড়তি।
আরও পড়ুন: শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম নগর কৃষি মেলা
কবি কাজী নজরুল হলের ডাইনিং ম্যানেজার জুয়েল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিদিন দুপুরে ডাইনিংয়ে প্রায় ২৭০-৩০০ ছাত্র খাবার খেতো। গত রমজানেও ২৭০-২৮০টি টোকেন বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এ বছর সেহরিতে ১০০ এর মতো টোকেন বিক্রি হচ্ছে।
এ বিষয়ে শেকৃবির প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক ও নজরুল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, দাম বাড়ানো হয়েছে যাতে শিক্ষার্থীরা ভালো মানের খাবার পায়। এরপরও মান না বাড়লে আমরা ডাইনিং-ক্যান্টিন ম্যানেজারদের সঙ্গে কথা বলবো। খাবারের মান ভালো করতে নানাভাবে তাদের বলেছি। পরামর্শ, উপদেশ সবই দেওয়া হয়েছে। তারপরও মান ভালো না করলে আমরা একশনে যাবো।
তাসনিম আহমেদ তানিম/জেডএইচ/জিকেএস