ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

ভিডিও ভাইরালের হুমকি

ইবিতে নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতন ছাত্রলীগ নেত্রীর

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০২:৪৮ পিএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে এক নবীন ছাত্রীকে রাতভর নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) রাতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) হল প্রভোস্ট, প্রক্টর ও ছাত্র উপদেষ্টা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী ছাত্রী।

অভিযুক্ত শিক্ষার্থী শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সানজিদা চৌধুরী অন্তরা। তিনি পরিসংখ্যান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্রী। এসময় তার সঙ্গে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাবাসসুমসহ আরও কয়েকজন ছিলেন বলে জানা গেছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে করা লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, প্রথমবর্ষের ক্লাস শুরুর আগে এক সিনিয়রের কক্ষে (৩০৬ নম্বর) গেস্ট হিসেবে থাকতেন ওই ছাত্রী। ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে ওই কক্ষে যান ফিন্যান্স বিভাগের তাবাসসুম। এসময় নবীন শিক্ষার্থীদের কারা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে থাকেন তা জানতে চান। ভুক্তভোগী ছাত্রী হাত তোলেন। তিনি হলে ওঠার আগে না জানানোয় চটে যান এবং তাকে হলের কক্ষে (প্রজাপতি-২) দেখা করতে বলেন তাবাসসুম।

ভুক্তভোগী অসুস্থ থাকায় যেতে অপারগ হলে দেখা না করার কারণে শনিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) ক্লাসে ফের বকাঝকা করেন। পরে সেদিন রাতে দেখা করলে ছাত্রলীগ নেত্রী অন্তরার কাছে নিয়ে যান। সেখানে রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত নানাভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়। নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে ভুক্তভোগী একপর্যায়ে তাদের পা পর্যন্ত ধরেন।

পরদিন (রোববার) ভুক্তভোগীর বিরুদ্ধে ‘বেয়াদবি’ ও ‘অবৈধভাবে হলে থাকা’র অভিযোগ তুলে তাকে হল থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে প্রাধ্যক্ষসহ অন্যরা এসে তাকে হলে তুলে অন্তরার দায়িত্বে দিয়ে যান। একই সঙ্গে সিনিয়রদের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করবেন না বলেও মুচলেকা দেন ভুক্তভোগী। পরে রাত ১১টার দিকে তাবাসসুম ফের ভুক্তভোগীকে গণরুমে ডেকে নেন। সেখানে অন্তরাসহ পাঁচ-ছয়জন ছাত্রী ছিলেন। তারা রাত প্রায় ৪টা পর্যন্ত ভুক্তভোগীকে নির্যাতন করেন। মারধর, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ, বিবস্ত্র করাসহ নানাভাবে তাকে নির্যাতন করা হয়।

ভুক্তভোগী বলেন, ‘গণরুমে এনে সবাই মিলে আমাকে মেরেছে। রাত ১১টা থেকে রাত প্রায় ৪টা পর্যন্ত আমাকে থাপড়ায়, গায়ে-মাথায় মেরেছে, পায়ে পিন ফুটিয়েছে, অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেছে, জামা খুলতে বলেছে। আপুরা প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন বিষয় লিখে দিয়ে বলেছে, ‘হাসবি আর এগুলা বলবি’। সব তারা ভিডিও করে রেখেছে।”

তিনি আরও বলেন, “অন্তরা আপু, তাবাসসুম আপুসহ ৫-৬ ছিল। তারা নানাভাবে আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আপুরা হুমকি দিয়ে বলছিল, ‘এসব বাইরে বললে একেবারে মেরে ফেলবো। তোকে ন্যাংটা করে এখান থেকে বের করে দেবো। এই কথা বাইরে গেলে ভিডিও ভাইরাল করে দেবো। তুই হলের প্রভোস্ট স্যারকে বলবি সব আমার দোষ। এই হলে থাকবো না। এসব বলে হল থেকে একেবারে চলে যাবি। এই কথা ১৪ তারিখ বলবি’।”

জানতে চাইলে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বলেন, ‘সে সিনিয়রদের সঙ্গে বেয়াদবি করেছিল। ও আমাকে চেনেও না। নবীন ওই ছাত্রী ওর এক ভাইকে দিয়ে ওর বিভাগের সিনিয়রকে (তাবাসসুম) হুমকি-ধমকি দিয়েছিল। গত রোববার প্রক্টর স্যার, প্রভোস্ট স্যার থাকাকালীন একটা মীমাংসা হয়েছে। রাতের মধ্যে আর কোনো কিছুই হয়নি। এ ঘটনা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের শিক্ষার্থী তাবাসসুমের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত জাগো নিউজকে বলেন, ‘রোববার রাতের ঘটনা যতটুকু জেনেছি নবীন ওই ছাত্রী অবৈধভাবে এক সিটে থাকছে। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তাকে হল থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি জানার পর ওই ছাত্রীর পারিবারিক অবস্থা শুনে আবার হলে রাখতে প্রভোস্টের কাছে অনুরোধ করি। তবে গত রাতের ঘটনা আমি জানি না।’

হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, রোববার ঝামেলা হওয়ার পর আমরা উভয়পক্ষকে ডেকেছিলাম। নবীন ওই ছাত্রী তার বোনের পরিচিত একজনের রুমে থাকছে। যেহেতু ও আবাসিক না তাই বলেছিলাম কয়েকদিন হলের বাইরে থাকতে। পরে পরিবারের অবস্থা শুনে হলেই থাকতে বলেছিলাম।

র‍্যাগিংয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমাদের হলে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। এবারই প্রথম শুনছি। ঘটনা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রুমি নোমান/এসআর/জিকেএস