‘লাশও তোর পরিবার খুঁজে পাবে না’ ছাত্রলীগ নেতার হুমকি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শাহ মাখদুম হলের এক আবাসিক শিক্ষার্থীকে মধ্যরাতে মারধর করে মানিব্যাগ থেকে টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ওই হল ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে কাউকে বললে প্রাণনাশের হুমকি দেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) রাত ১১টায় হলটির ২১৪ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর নাম সামিউল ইসলাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফোকলোর বিভাগের বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
অভিযুক্ত ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী তাজবিউল হাসান অপূর্ব। তিনি শাহ মাখদুম হল ছাত্রলীগের সভাপতি। অপূর্ব বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন: আওয়ামী লীগের দুই নেতায় বন্দি বগুড়া ছাত্রলীগ
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি ২১৪ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী। তা সত্ত্বেও বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তাজবিউল হাসান অপূর্ব ও তার অনুসারীরা তার কক্ষে প্রবেশ করে সিটের জন্য ১০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাৎক্ষণিকভাবে সেই টাকা দেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করেন। একপর্যায়ে ম্যানিব্যাগ থেকে জোর করে তিন হাজার ৭৭২ টাকা ছিনিয়ে নেন এবং বাসা থেকে বাকি টাকা দ্রুত আনতে হুমকি দেন।
অভিযুক্ত হল সভাপতি অপূর্ব এসময় বলেন, এই সিটে থাকতে হলে বাকি টাকা আজকেই দিতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে আমার বাবা-মায়ের নাম তুলে গালিগালাজ করতে থাকেন। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে অপূর্ব আমার গায়ে হাত তোলেন এবং তার অনুসারীরা মেঝেতে ফেলে এলোপাতাড়ি কিল, ঘুসি মারতে থাকেন। আগামীকালের মধ্যে বাকি টাকা দিতে না পারলে হল থেকে চলে যেতে হবে বলে জানান তারা। এসব বিষয় কাউকে জানালে ‘তোর লাশও তোর পরিবার খুঁজে পাবে না’ বলে হুমকি দেন।
এরআগেও হল সভাপতি অপূর্ব ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রুমে থাকার জন্য তিন হাজার টাকা চাপ প্রয়োগ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
তবে বিষয়টি অস্বীকার করেছেন ছাত্রলীগ নেতা তাজবিউল হাসান অপূর্ব। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘কাল রাতে এমন কোনো ঘটনা ঘটেনি। ওই শিক্ষার্থীর (ভুক্তভোগী) রুম একচেঞ্জ করার কথা ছিল কিন্তু করেনি। এ বিষয়ে তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে কথা-কাটাকাটি হয়।’
আরও পড়ুন: সভাপতি স্যানিটারি মিস্ত্রি, সম্পাদক চা দোকানি
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিষয়টি শুনে আমি খোঁজখবর নিয়েছি। আমার মনে হয়েছে তাকে দিয়ে কেউ জোর করে লিখিত অভিযোগ করিয়েছেন। তারপরও যদি অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আমরা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবো।
জানতে চাইলে শাহ মাখদুম হলের প্রাধ্যক্ষ রুহুল আমিন জাগো নিউজকে বলেন, আমরা বিষয়টি জেনে দুজনকেই ডেকেছি। তাদের কথা শুনে আমরা তদন্ত করার জন্য সময় নিয়েছি।
এ বিষয়ে ছাত্র উপদেষ্টা এম তারেক নূর জাগো নিউজকে বলেন, ‘লিখিত অভিযোগ হাতে পাইনি তবে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আমাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়েছে। তাকে বিকেল ৪টায় লিখিত অভিযোগ হাতে নিয়ে দেখা করতে বলেছি। যদি মারধর ও প্রাণনাশের হুমকির ঘটনার সত্যতা প্রমাণিত হয় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আরও পড়ুন: বহিষ্কারের পরও পরীক্ষা দিচ্ছেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা
প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘এটা হলের বিষয়, হল প্রশাসন দেখবে। আমি সকারে হল প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি এবং দুজন সহকারী প্রক্টরকে হল প্রাধ্যক্ষকের কাছে পাঠিয়েছি। এখনো হয়তো সিদ্ধান্ত আসেনি।’
মনির হোসেন মাহিন/এসআর/এএসএম