জাবিতে প্রতিদিন গড়ে ৩-৪ জন আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে মশার উপদ্রব। ফলে প্রতিদিন ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য আসছেন সাত-আটজন। তাদের মধ্যে গড়ে তিন-চারজন ডেঙ্গু পজিটিভ হচ্ছেন।
রোববার (৬ নভেম্বর) জাবি মেডিকেল সেন্টার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, গত চারদিনে প্রায় ১২ জন ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। আক্রান্তদের ৮০ শতাংশই শিক্ষার্থী।
মেডিকেল সেন্টারের ল্যাব ইনচার্জ নাইমুল ইসলাম জানান, অক্টোবরে পরীক্ষা করতে আসাদের ৩০ জনের বেশি ডেঙ্গু পজিটিভ। প্লাটিলেট সংখ্যার ভিত্তিতে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০০ তে। আক্রান্তদের মধ্যে শিক্ষার্থীদের বাইরে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং স্বজনরাও রয়েছেন।
আ ফ ম কামালউদ্দিন হলের ছাত্র রবিউল বলেন, মশার উপদ্রব অনেকটা বেড়েছে। হাল্কা শীতের কারণে ফ্যান খুব একটা চালানো হয় না, তাই উপদ্রব খুব ভালো ভাবেই বোঝা যায়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মাঝে মাঝে স্প্রে করে। তখন দু-তিনদিন কম থাকলেও পরে আবার বেড়ে যায়।
তৃষা নামে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলের হলের এক শিক্ষার্থী বলেন, সন্ধ্যা হলেই মশার যন্ত্রণা শুরু হয়। মশারি, কয়েল যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। ঘুমানোর সময়টা এভাবে বাঁচা গেলেও পড়তে বসলে মশা থেকে রক্ষা নেই। মশা নিধনে স্থায়ী সমাধান প্রয়োজন।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট জাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, শিক্ষার্থীদের অবজ্ঞা করার একটা মানসিকতা প্রশাসন বারবার দেখিয়ে আসছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে বরাবরই উদাসীন তারা। ক্যাম্পাসের পুকুর-ডোবাগুলো খুব একটা সংস্কারও হচ্ছে না, যা দু-একবার স্প্রে করা হচ্ছে তাও লোক দেখানো। মশা তাড়িয়ে দিয়ে তো লাভ নেই, নিধনের ব্যবস্থা করতে হবে।
তবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নেই বলে দাবি করেছেন জাবি অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার।
তিনি বলেন, ডেঙ্গুর প্রধান বাহক এডিস ইজিপটাই মশাটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের গ্রামে এ মশা আছে। এ মশা ক্যাম্পাসে না থাকায় ডেঙ্গুর ঝুঁকি কম। তবে পরিস্থিতি যে কোনো সময় পাল্টাতে পারে। আশপাশের গ্রামে থাকা এডিস মশা বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারে। সেজন্য সতর্ক থাকা দরকার।
মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের ব্যবহার নিয়ে এ কীটতত্ত্ববিদ বলেন, মশা নিয়ন্ত্রণে কীটনাশকের ব্যবহার অনেক বেশি প্রয়োজন ব্যাপারটি সেরকম নয়। কারণ কীটনাশক অন্যান্য জীববৈচিত্র্যকেও ধ্বংস করে। কীটনাশকের ব্যবহার কমিয়ে যদি বর্জ্য ও পানি ব্যবস্থাপনায় নজর দেওয়া যায়, তাহলে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
এডিস মশা দমনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের করণীয় বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব ডোবা-নর্দমা এবং পাত্রে এডিস মশা জন্মাতে পারে সেগুলোর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনাকে নতুন করে ঢেলে সাজানো যেতে পারে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, নিয়মিত ডোবা-ড্রেন-নর্দমা পরিষ্কার রাখতে এস্টেট শাখা কাজ করছে। পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশা যেন লার্ভা সৃষ্টির সুযোগ না পায় সে কাজটিও করা হচ্ছে। এছাড়া নিয়মিত স্প্রের কাজও চলমান।
মাহবুব সরদার/এএইচ/জিকেএস