মুখোমুখি ছাত্রদল-ছাত্রলীগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফের সংঘাতের আশঙ্কা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ফের রাজনৈতিক সংঘাতের শঙ্কা প্রকট হচ্ছে। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ঢাবি ক্যাম্পাসে কর্মসূচিকে ঘিরে আবারো সংঘাতের দিকে যাচ্ছে এ দুই দল। ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে দুই দলই তাদের সিদ্ধান্তে অটল। এ নিয়ে সংঘর্ষের শঙ্কা তীব্র হচ্ছে।
সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার কথা ছিল ছাত্রদলের। খবর পেয়ে আগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্পটে অবস্থান নেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। পরে ছাত্রদল তাদের ক্যাম্পাসে আসার সিদ্ধান্ত স্থগিত করে। ক্যাম্পাসে আসার কর্মসূচি স্থগিতের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যঙ্গাত্মক সমালোচনা হজম করতে হয়েছে ছাত্রদলকে।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদল-ছাত্রলীগ সংঘর্ষ
মঙ্গলবারও (২৭ সেপ্টেম্বর) যেন সে সমালোচনার মুখোমুখি হতে না হয় সেজন্য ছাত্রদল প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কমিটির নেতারা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করবেন। দুদিন আগেই তারা ভিসির কাছে সময় নিয়েছেন।
এদিকে একইদিন বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের দাবিতে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে ঢাবি শাখা ছাত্রলীগ।
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ছাত্রলীগ নেতাদের পাশেই কর্মসূচি পালন করলো ছাত্রদল
দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনের এমন কর্মসূচি ঘিরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। দুই দলের আসন্ন কর্মসূচি ঘিরে ক্যাম্পাসের সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
ছাত্রদলের একটি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ছাত্রদল যেকোনো মূল্যে আসতে চায়। তাদের হাইকমান্ড থেকে নির্দেশনা আছে ক্যাম্পাসে অবস্থান ও যাতায়াত অব্যাহত রাখার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণার পর তাদের মধ্যে যে কোন্দল তৈরি হয়েছে মঙ্গলবার সবার অংশগ্রহণে সেটির ইতি ঘটানো হবে।
ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানিয়েছে, ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয়ভাবে খুব ভালো অবস্থানে না থাকলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবে শিগগির। একটি হলের কমিটি এরই মধ্যে পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। ছাত্রলীগের বিভিন্ন হলের নেতাকর্মীরা হলে ভালো পদ পেতে নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা প্রদর্শন করবে।
সংঘাতের দিকে যেতে পারে দুই ছাত্র সংগঠন
আরও পড়ুন: ঢাবিতে ড্রেনে ফেলে ছাত্রদল নেতাদের পেটালো ছাত্রলীগ
ছাত্রলীগের ঢাবি শাখার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নানাবিধ সংকট নিরসনের দাবিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেবে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টায় তারা মধুর ক্যান্টিন থেকে উপাচার্য কার্যালয় বরাবর সুশৃঙ্খল পদযাত্রা করবে এবং স্মারকলিপি প্রদান করবে।
ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চাই। মধুর ক্যান্টিনে বসে চা খাওয়া আমাদের রাজনৈতিক অধিকার। ক্যাম্পাসে আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান ও রাজনৈতিক শিষ্টাচার মেনেই রাজনীতি করে আসছি। এখন যদি ছাত্রলীগ তাদের রাজনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘন করে তাহলে ছাত্রদলও লঙ্ঘন করতে বাধ্য হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সাংবাদিক সমিতি সবার সাথে কথা বলে মঙ্গলবার ক্যাম্পাসে আসার দিনক্ষণ ঠিক করেছি। আমরা ক্যাম্পাসে আসবো।
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, আগামীকাল (মঙ্গলবার ) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দের দিন। এদিন আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরবো। প্রশাসন এসব সমস্যা সমাধান করবে বা উদ্যোগ নেবে। ক্যাম্পাসে ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের ভালো চায় না। তারা ক্যাম্পাসে লাশ ফেলার পরিকল্পনা করছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিহত করবে। ছাত্রলীগ বরাবরের মতোই শিক্ষার্থীদের পাশে থাকবে।
আরও পড়ুন: ছাত্রলীগের তিলোত্তমাসহ ৩৩ জনের বিরুদ্ধে ছাত্রদল নেত্রীর মামলা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, দুই সংগঠনই আমার কাছ থেকে সময় নিয়েছে দেখা করার। উপাচার্যের সঙ্গেও দেখা করবে। আমি আশাবাদী, আগামীকাল দুই সংগঠনই শৃঙ্খলা বজায় রাখবে। সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের জন্য। এখানে আমাদের কাছে সব শিক্ষার্থীই সমান। মঙ্গলবার বিকেলে দুই ছাত্র সংগঠন উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে এটি একটি ইতিবাচক দিক।
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে কোনো ধরনের আশঙ্কার কারণ নেই। ক্যাম্পাসে আমাদের শিক্ষার্থীরা যে যেই রাজনৈতিক দলের হোক না কেন তারা খুব দায়িত্বশীল।
দুই ছাত্র সংগঠনই তাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করবে বলেও আশা প্রকাশ করেন ড. মো. আখতারুজ্জামান।
আল-সাদী ভূঁইয়া/এসএইচএস/জিকেএস