ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

হিরণ্ময় মেলবন্ধন : প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে

প্রকাশিত: ০১:৩০ পিএম, ২৩ জানুয়ারি ২০১৬

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ৮টা। মাঘের কনকনে শীত উপেক্ষা করে রাজধানীর দোয়েল চত্বর থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহিঃবিভাগের মধ্যকার রাস্তায় বেশ কিছু গাড়ি এসে থামছে। গাড়িতে আরোহী লোকদের গন্তব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ। বড় বড় দুটি তোরণ অর্ভ্যথনা জানাচ্ছে সবাইকে। ভেতরে ঢুকে পুরনো দিনের বন্ধুদের পেয়ে খুনসুঁটিতে মেতে উঠে পঞ্চাশের কোটা পার হয়ে যাওয়া ৬ প্রবীণ। নিজেদের খোঁজ খবর নিয়ে আাবার ব্যস্ত অন্য বন্ধুদের খোঁজে।

হ্যাঁ, বলছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষে পর্দাপণের প্রাক্কালে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশান কতৃর্ক আয়োজিত ‘হিরণ্ময় অ্যালামনাই মেলবন্ধন ২০১৬’ এর অনুষ্ঠানের কথা। সকাল ৮টায় অ্যালামনাইদের নাস্তা গ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় চার বছর পর অনুষ্ঠিত মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে সকালের নাস্তা নেয়াতেও যেন কোনো ধরনের ক্লান্তি নেই তাদের। পুরনো বন্ধুদের সহজে খুঁজে পেতে আয়োজকরা প্যান্ডেল তৈরি করেছেন দশক সিস্টেমে বসার আসন। জুঁই, চামেলী, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, গোলাপসহ নানা নাম এসব সারির। এক দশকের সকল বন্ধুকে সহজে পেতে এমনটা করা হয়েছে। নিজেদের দশকের আসনে গিয়ে বসে পুরনো বন্ধুদের সাথে শুরু হয় শুভেচ্ছা বিনিময়। অনুষ্ঠানে অ্যালামনাইদের আগমন ও নাস্তা গ্রহণের মধ্যেই সকাল ১০টা বাজে। শুরু হয় মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের মূল আনুষ্ঠনিকতা।

জাতীয় সংগীতের তালে তালে জাতীয়, বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশেনের পতাকা উত্তলন ও বেলুন উড্ডয়নের মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ পর্বের মূল আনুষ্ঠনিকতা। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ পুরুষ অ্যালামনাই মেসবাউল বার চৌধুরী এবং সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা অ্যালামনাই আফিয়া দিল।

du
বিশ্ববিদ্যালয় ও অ্যালামনাইয়ের পতাকা উত্তোলন করেন, বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকিব উদ্দিন আহমেদ। বেলুন উড্ডয়ন করেন অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের উপাচার্য, বয়োজ্যেষ্ঠ অ্যালামনাই, অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, মহাসচিবসহ কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা।

এরপর অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশানের সভাপতি রকিব উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও মহাসচিব দেওয়ান রাশেদুল হাসানের সঞ্চালনায় শুরু হয় নিজেদের মধ্যে স্মৃতিচারণ। স্মৃতিচারণ করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ, অধ্যাপক ড. এস এম ফায়েজ এবং বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকসহ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী পরিষদের সদস্যরা।

স্মৃতিচারণ করতে এসে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, এ দেশের যত সামাজিক ও জাতীয় অর্জন রয়েছে তার সবটুকুরইতো অংশীদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্বের মধ্যে এমন বিশ্ববিদ্যালয় আর হয় না। আমার বিশ্ববিদ্যালয়টি বিশ্বের অন্যতম একটি বিশ্ববিদ্যালয়। যে কয়দিন বেঁচে থাকবো, ততদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়েই বেঁচে থাকবো বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ উপাচার্য।

du-dhaka
এরপর স্মৃতিচারণ করেন ২০০২ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত উপাচার্যের দায়িত্বে থাকা অধ্যাপক ড. এস এম ফায়েজ। তিনি বলেন, আজকে এখানে এসে আমি ফিরিয়ে যাই সে সময়ে, যখন আমি এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা শিক্ষক ছিলাম। এখন আমার বড় পরিচয় আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অ্যালামনাই।

এসময় বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র ছিলাম এটাই আমার স্থায়ী পরিচয়। আমি বলবো আজ আমাদের অ্যালামনাইরা তাদের মাতৃসম প্রতিষ্ঠানে ফিরে এসেছেন। আমরা আমাদের (Home coming) মাতৃসম প্রতিষ্ঠানে ফিরে এসেছি।

তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সত্যের ঝাণ্ডা তুলে ধরতে শিক্ষা দিয়েছে। শিক্ষা দিয়েছে দেশকে ভালোবাসতে, দেশের মানুষকে ভালোবাসতে, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসতে। তাই এর দিক্ষা নিয়ে আমাদের সকল বাধাকে উপেক্ষা করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

এরপর মঞ্চে উপস্থিত সবাইকে ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করেন অ্যালামনাই সদস্যরা। এরপর দুপুর ১২টা বাজে শুরু হয় ‘একাল-সেকাল’ বিষয়ক অ্যালামনাইদের অংশগ্রহণে বিশেষ বিতর্ক। এতে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ৭১ পরবর্তী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেরা নাকি ৭১ এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেরা এ নিয়ে বিতর্ক করেন এমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, অধ্যাপক ড. অজয় রায়, সাংবাদিক নবণীতা চৌধুরীর মতো বিতার্কিকরা।

বির্তকের পর শুরু হয় সাবেক অ্যালমনাইদের অংশ পরিবেশনায় বিশেষ সংগীত অনুষ্ঠান। এরই মধ্যে মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয়ে যায়। দুপুরের খাবারের জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়েও যেন কোনো ক্লান্তি নেই অ্যালামনাইদের। দুপুর তিনটা পর্যন্ত চলে দুপুরের খাবার গ্রহণের দ্বিতীয় পর্ব।

এরপর আবার বিকেলের আড্ডা। সবাই ব্যস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতিচারণ করে আড্ডা-গল্পে। এরই মধ্যে আবারো লাইনে দাঁড়িয়ে বিকেলের নাস্তা, চা-কফি গ্রহণে যেন আলাদা আনন্দ দিচ্ছে অ্যালামনাইদের। সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। চলবে রাত ৮টা পর্যন্ত। এরপর সমাপনী বক্তব্য রাখবেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রকিব উদ্দিন আহমেদ।

এরই মধ্য দিয়ে শেষ হবে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার অ্যালমনাইয়ের মহামিলন মেলা। থাকবে শুধু আজকের দিনটার স্মৃতিসমূহ। চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত হওয়া এ মেলবন্ধন অনুষ্ঠানের জন্য আবারো অপেক্ষা করতে হবে অ্যালামনাই সদস্যদের। আর যারা পরকালে পাড়ি জমানোর জন্য অপেক্ষায় আছেন, তাদের জন্য আজকের দিনটিই হচ্ছে তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভরা নিজের সবুজ ক্যাম্পাসে সর্বশেষ পদচারণা। তবুও শ্রদ্ধায় আমৃত্যু স্মরণ রাখবেন নিজের যৌবনের বেশ কিছু সময় কাটানো প্রিয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে।

এমএইচ/এসএইচএস/আরআইপি