বিকলের পথে বেরোবির ক্যাম্পাস রেডিও
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাস রেডিও উদ্বোধনের ৩ বছর হয়ে গেলেও এখনও চালু হয়নি কার্যক্রম। আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধনের পর দীর্ঘ সময় পার হলেও বন্ধ পড়ে আছে অত্যাধুনিক রেডিও স্টুডিও। এভাবে দীর্ঘদিন পড়ে থাকার ফলে নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রাংশগুলো। সম্প্রচার বিশেষজ্ঞরা বলছেন আর কিছুদিন দেরি হলে সম্পূর্ণভাবে বিকল হয়ে পড়বে অত্যাধুনিক এই রেডিও স্টেশন।
জানা যায়, সাবেক উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহর সময় রেডিও স্টেশনটি উদ্বোধন হওয়ার পর এখন পর্যন্ত অফিসিয়ালি কাউকে দায়িত্ব না দেওয়ায় ২০১৯ সাল থেকে বন্ধ হয়ে পড়ে আছে। ফলে ধুলাবালি আর ময়লায় কার্যক্ষমতা হারিয়েছে কিছু যন্ত্রাংশ।
গেলো বছরের অক্টোবরে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর একই বছরের নভেম্বরে একটি পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটি গঠনের প্রায় ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও শুরু হয়নি রেডিওর কার্যক্রম।
এদিকে ক্যাম্পাস রেডিও উদ্বোধনের দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও কোনো কার্যক্রম না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও গণমাধ্যম বিশেষজ্ঞ মাহমুদুল হক জাগো নিউজকে বলেন, ক্যাম্পাস রেডিও আগের উপাচার্য ড. কলিমউল্লাহর আমলে কোনো পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা ছাড়াই স্থাপন করা হয়েছে। চালু না থাকলে যন্ত্রাংশগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক দক্ষতা শেখার জন্য স্বয়ংসম্পূর্ণ কোনো ল্যাব নেই। এই ক্যাম্পাস রেডিও সাংবাদিকতা বিভাগের অধীনে পরিচালিত হলে শিক্ষার্থীদের সাংবাদিকতার দক্ষতার উন্নয়ন ঘটানো যাবে। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ইতিবাচক ভাবমূর্তিও অর্জন করা যাবে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বন্ধ থাকা এই রেডিও চালু হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অঙ্গনসহ বিভিন্ন সহশিক্ষা কার্যক্রম আরো গতিশীল হবে।
রেডিওর ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান এমআইএস আইটির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ২০১৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে প্রায় সাড়ে ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে স্থাপিত হয় অত্যাধুনিক এই রেডিও স্টেশনটি। এরপর সম্পূর্ণ সচল অবস্থায় হস্তান্তর করা হয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। কিন্তু দীর্ঘদিন সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়া এবং পড়ে থাকার ফলে নষ্ট হয়ে গেছে কনসোল ও সাউন্ড কার্ড নামের দুটি পার্টস। কনসোল মেরামত যোগ্য হলেও নতুন সাউন্ড কার্ড কিনতে হবে। এরজন্য ব্যয় হবে আনুমানিক ৩০ থেকে ৬০ হাজার টাকা।
ক্যাম্পাস রেডিওর নির্বাহী পরিচালক বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. নিতাই কুমার ঘোষ বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার পর রেডিও চালু করার জন্য গিয়ে দেখি রেডিও সচল নেই। দুই দফায় ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে কথা বলেছি। যন্ত্রাংশ মেরামত করে অতিদ্রুত রেডিও চালু করা হবে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ এনজিও’স নেটওয়ার্ক ফর রেডিও অ্যান্ড কমিউনিকেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বজলুর রহমান বলেন, ক্যাম্পাস রেডিও শুধুমাত্র শিক্ষার্থীদের জন্য নয় বরং শিক্ষক-কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার গ্রামীণ কমিউনিটির সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপনের মাধ্যমে ৫ ধরনের স্কিল ডেভেলপমেন্টে সহায়তা করবে। আধুনিক এই যুগে মিডিয়ায় কথা বলাসহ মিডিয়া নিয়ন্ত্রণের কলাকৌশল এখান থেকে সবাই আয়ত্ত করবে। সেই সঙ্গে বন্ধ থাকা এই ক্যাম্পাস রেডিও দ্রুত চালু করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে আহ্বান জানান এই বিশেষজ্ঞ।
এফএ/জেআইএম