ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

ঢাবিতে হিজাব-নিকাব পরার অধিকার নিশ্চিতের দাবি ছাত্রীদের

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ০৭:৪১ পিএম, ৩১ মার্চ ২০২২

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) প্রতি তিনজন পর্দানশীন ছাত্রীর একজন বিভিন্ন বৈষম্যে ও বিরূপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে হিজাব-নিকাব পরার নির্বিঘ্ন অধিকার নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছে একদল নারী শিক্ষার্থী।

বৃহস্পতিবার (৩১ মার্চ) বিকেলে ঢাবি সাংবাদিক সমিতিতে ‘প্রোটেস্ট অ্যাগেইনস্ট হিজাবোফোবীয়’ নামক প্ল্যাটফর্ম থেকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানান তারা।

এসময় লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তাসফিহা তাহসিন ইমা।

তিনি বলেন, আমরা দুই মাস ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিজাবোফোবিয়া নিয়ে কাজ করছি। আমরা একটি জরিপও পরিচালনা করেছি। এ দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় জানতে পেরেছি, ঢাবিতে হিজাব-নিকাব পরার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর নয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে নিকাব পরা অধিকাংশ ছাত্রী কখনো না কখনো অপমান, টিজিং, হেনস্তা বা বুলিংয়ের শিকার হয়।

ক্লাসমেট, বন্ধু, সিনিয়র, জুনিয়র, কর্মকর্তা, কর্মচারী এমনকি ক্লাসরুমে শিক্ষকরা পর্যন্ত হিজাব ও নিকাব পরা ছাত্রীর প্রতি বিরূপ আচরণ করে জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ বিদ্রুপ করে, কেউ বাজে মন্তব্য করে। এমনকি অনেক শিক্ষক নিকাব পরার কারণে ক্লাস থেকে বের করে দেন।

জরিপের ফল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হিজাব-নিকাবের কারণে ক্যাম্পাসে বা হলে কোনো বৈষম্যের সম্মুখীন হয়েছেন কি? জানতে চাইলে এ জরিপে অংশ নেন ২২১ জন ছাত্রী। তাদের মধ্যে না বলেছেন ১৪৮ জন, হ্যাঁ বলেছেন ৭৩ জন। অর্থাৎ প্রতি তিনজন পর্দানশীন ছাত্রীর একজন বিভিন্ন বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আমাদের আরেকটি প্রশ্ন ছিল হিজাব-নিকাবের কারণে কোনো শিক্ষক, কর্মচারী বা সহপাঠীর বিরূপ মন্তব্যের শিকার হয়েছেন কি? এই প্রশ্নের উত্তরেও না বলেছেন ১৪১ জন ও হ্যাঁ বলেছেন ৮০ জন। অর্থাৎ এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি তিনজনের মধ্যে একজন থেকেও বেশি ছাত্রী পর্দা করার কারণে বিরূপ মন্তব্যের শিকার হচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, অনেক ছাত্রী অভিযোগ করেছে যে, পরীক্ষার হল ও ভাইভায় নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়। একটা মেয়ে যে সবসময় নিকাব পরে ও নিকাবকে তার ধর্মীয় আদেশ মনে করে তাকে নিকাব খুলতে বাধ্য করাটা অন্যায়। অথচ আমরা এমন অনেকগুলো ঘটনা পেয়েছি যেখানে ছাত্রীকে নিকাব খুলতে বাধ্য করা হয়েছে। নিকাব না খোলায় ভাইভা নেওয়া হয়নি। পরীক্ষা দেরি করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হিজাব ও নিকাবের কারণে বাজে মন্তব্যের সম্মুখীন হয়েছেন এমন অনেকেই আছেন, যা আমরা আমাদের পরিচালিত জরিপে দেখেছি।

হিজাবোফোবিয়া বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের দাবি, হিজাব ও নিকাব নিয়ে কোনো বিদ্বেষমূলক আচরণ বা বাজে মন্তব্য ডেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সহ্য না করে। বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ছাত্রীকে হিজাব খুলতে যেন কোনো শিক্ষক বাধ্য না করেন। এর পরিবর্তে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যেন এমন ব্যবস্থা নেয় যাতে একজন ছাত্রীকে তার চেহারা দেখানো ছাড়াও বৈজ্ঞানিকভাবে শনাক্ত করা যায়। সেটি সম্ভব না হলে অন্তত একজন ম্যাডাম দ্বারা সেই ছাত্রীকে শনাক্ত করা হয়। ক্লাসে যেন হিজাব নিকাবের কারণে কোনো ছাত্রীকে বের করে দেওয়া, বাজে কথা বলা না হয়। পর্দার কারণে যেন কোনো বৈষম্য দেখানো না হয়। একই দাবি হলের ক্ষেত্রেও।

শাস্তির দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে হিজাব ও নিকাব পরার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। যে বা যারা হিজাব ও নিকাব পরার কারণে কাউকে অপমান করবে, বিদ্রুপ-তাচ্ছিল্য করবে, বৈষম্যমূলক আচরণ করবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি প্রদর্শন করবে ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এটাই আমাদের প্রাণের দাবি।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মেয়ে শিক্ষার্থীদের নামাজের স্থানের তীব্র সংকট রয়েছে জানিয়ে তারা বলেন, আইন বিভাগে ছাত্রীদের কমনরুমে নামাজের জায়গায় একটা অফিস রুম করেছে। সেখানে নামাজের জায়গা রাখা হয়নি। সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে নামাজের জায়গা হিসেবে মাত্র তিনটা জায়নামাজ বিছানো। রোকেয়া হলের ৭ই মার্চ ভবনে নামাজের একটি রুম আছে কিন্তু সেটা খোলা হয় না। সবসময় তালা দেওয়া থাকে। কেন্দ্রীয় মসজিদ, গণিত ভবন ও মেয়েদের পাঁচটি হলে নামাজের স্থানগুলো পর্যাপ্ত নয়। যেগুলো আছে সেগুলোও বেহাল দশা।

তারা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিল্ডিং, অনুষদ ও হলগুলোতে ছাত্রীদের নামাজের জন্য পর্যাপ্ত জায়গা রাখা হয়। আইন বিভাগের নামাজের জায়গাটি ফিরিয়ে দেওয়া অথবা নতুন জায়গা যেন করে দেওয়া হয়। সোশ্যাল সায়েন্স বিল্ডিংয়ের নামাজের জায়গাটি যেন প্রশস্ত করার ব্যবস্থা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আইন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নাসিফা সিদ্দিকা, নিশাত তামান্না প্রমুখ।

আল সাদী ভূঁইয়া/একেআর/জেআইএম