ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

জাবিতে রক্তদানে পিছিয়ে মেয়েরা: জরিপ

মাহবুব সরদার | প্রকাশিত: ০১:৫৬ পিএম, ০৮ মার্চ ২০২২

আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ (৮ মার্চ)। লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই দিনটি বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ ১৯৭৫ সালের ৮ মার্চ দিনটিকে আন্তর্জাতিক নারী দিবসের স্বীকৃতি দেয়। সেই থেকে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। এবারের আন্তর্জাতিক নারী দিবসের প্রতিপাদ্য- ‘জেন্ডার ইকুয়ালিটি টুডে ফর অ্যা সাসটেইন্যাবল টুমোরো’। যা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে ‘টেকসই আগামীর জন্য, জেন্ডার সমতাই আজ অগ্রগণ্য’।

নারীদের জয়জয়কার আজ সর্বত্র। গভীর গিরিখাত থেকে শুরু করে সুউচ্চ পর্বতশৃঙ্গ সব জায়গায় তারা লিখিয়েছেন তাদের বিজয়গাঁথা। এই অগ্রযাত্রায় নারীরা একের পর এক প্রতিবন্ধকতার দেয়াল টপকালেও রক্তদানে নারীদের সরব উপস্থিতি নেই বলে এক জরিপে উঠে এসেছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে রক্তদানে তাদের মনোভাব ও উপলব্ধি জানতে এক জরিপ চালানো হয়েছে। সম্প্রতি এ জরিপের ফলাফল ‘এশিয়ান জার্নাল অব মলিক্যুলার বায়োলজি অ্যান্ড রিসার্চ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। এতে উঠে আসে ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী জীবনে একবার হলেও রক্তদান করেছেন। এসব রক্তদাতাদের ২০ শতাংশ নারী শিক্ষার্থী।

জরিপটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১ শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। যেখানে দেখা যায়, রক্তদাতাদের মধ্যে ৫৪ শতাংশ গ্রাম্য, আর ৪৬ শতাংশ শহুরে। ৭১ শতাংশ শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য সমস্যার কারণে এবং ১৪ শতাংশ দাতা সময়ের স্বল্পতার কারণে রক্তদান করতে পারেন না। যেখানে ৮ শতাংশ ভয়ের কারণে রক্তদান করেন না। ৬ শতাংশ কোনো কারণ ছাড়াই রক্তদানে আগ্রহী নন। রক্তদাতাদের ৪৭ শতাংশ বি পজিটিভ গ্রুপের এবং ২২ শতাংশ এবি পজিটিভ। এছাড়া ব্যবসায়ী বাবার সন্তানেরা রক্তদানে সবচেয়ে এগিয়ে। রক্তদাতাদের ৬৫ শতাংশ কোনো না কোনো রক্তদান সংশ্লিষ্ট সংগঠনে যুক্ত।

এ জরিপটি পরিচালনা করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাহিদ সালমা। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, রক্তদানে মেয়েদের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে অনেক কম। তাদের শারীরিক গঠন ও ভয় রক্তদানে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। ইনজেকশনের ভয়ে অনেক মেয়ে প্রয়োজনীয় পাঁচটি টিকাও নেন না।

তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বা রক্তদাতা সংগঠনগুলো যদি রক্তদানে উৎসাহিত করার জন্য অনেক বেশি প্রচারণার ব্যবস্থার করে তাহলে শিক্ষার্থীরা রক্তদানে অধিক আগ্রহী হবে। এতে দেশের নিরাপদ রক্তের চাহিদা অনেকটা পূরণ করা সম্ভব হবে।

এদিকে, স্বেচ্ছায় রক্তদাতাদের সংগঠন বাঁধন জাবি ইউনিট অফিস সূত্র জানায়, ২০২১ সালে মোট ১ হাজার ৯২২ জন শিক্ষার্থী রক্তদান করেছেন। যার মধ্যে ছেলে ১ হাজার ৭৭৫ এবং মেয়ে ১৪৭ জন। সে হিসেবে রক্তদানে অংশগ্রহণকারীদের ৯২ দশমিক ৩৫ শতাংশ ছেলে এবং ৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ মেয়ে।

মেয়েরা তুলনামূলকভাবে রক্তদানে পিছিয়ে পড়ার কারণ জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের শিক্ষার্থী ও জাবি বাঁধন ইউনিটের ফজিলাতুন্নেছা হল ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক তাসনিমা আক্তার তাশিন বলেন, মেয়েদের শারীরিক অবস্থা এবং ভয়-এ দুটোই সবচেয়ে বড় বাধা। মেন্সট্রুয়েশন পিরিয়ড এবং শারীরিক গঠনের কারণে মেয়েদের হিমোগ্লোবিন লেভেল সাধারণত ছেলেদের তুলনায় কিছুটা কম থাকে। এছাড়া রক্তদানের জন্য সর্বনিম্ন ওজন ৫০ কেজিও অনেক মেয়ের থাকে না। এসব কারণেই অনেকে রক্তদানে আগ্রহ প্রকাশ করে না।

জাবি বাঁধন ইউনিটের কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি ও রসায়ন বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, রক্তদানে মেয়েদেরকে আমরা উৎসাহিত করে আসছি। কিন্তু তাদের ওজন কম থাকা এবং পিরিয়ডকালীন অবস্থা বিবেচনায় অনেকের ইচ্ছা থাকলেও তারা রক্তদান করতে পারেন না।

জাবি বাঁধন ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ও ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মামুনুর রশিদ বলেন, বর্তমানে আমাদের ইউনিটে দুইশো’র মতো নারী কর্মী কাজ করছেন। নারী শিক্ষার্থীদের রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করার জন্য আমরা বিভিন্ন সময় ক্যাম্পেইন এবং কর্মশালার আয়োজন করে আসছি। সেসব প্রচারণায় আমরা নারী শিক্ষার্থীদের কখন রক্তদান করা যাবে কখন যাবে না-এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মো. শামসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, মেয়েরা শারীরিক গড়ন, ওজন ও ভয়ের কারণে ছেলেদের মতো রক্তদান করতে পারেন না। এটাকে পিছিয়ে পড়া বলাটা ঠিক হবে না। অনেক মেয়েকেই দেখেছি রক্তদানে আগ্রহী কিন্তু তার ওজন কম বা রক্ত স্বল্পতার কারণে আমরা তাকে রক্তদানে নিরুৎসাহিত করি। তবে অনেকে ভুল ধারণা পোষণ করেন, মেয়েরা তরুণ বয়সে রক্তদান করলে গর্ভকালীন জটিলতা সৃষ্টি হবে। কিন্তু হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ও ওজন স্বাভাবিক থাকলে এবং অন্য কোনো গুরুতর শারীরিক জটিলতা না থাকলে ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে মেয়েরা রক্তদান করতে পারেন।

এমআরআর/জেআইএম