চলতি মাসে মশার উপদ্রব বেড়ে যেতে পারে ৪ গুণ: গবেষণা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) হঠাৎ মশার উপদ্রব বেড়েছে। আবাসিক হলগুলোতে মশার উপদ্রবের পাশাপাশি দিনের বেলায় ক্লাস-পরীক্ষায় অংশ নিতে গিয়েও শিক্ষার্থীদের সহ্য করতে হচ্ছে মশার কামড়। ফলে ডেঙ্গুসহ মশাবাহিত রোগের আতঙ্কে সময় কাটছে শিক্ষার্থীদের। এর মাঝেই মশার সংখ্যা চারগুণ বেড়ে যাওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছেন গবেষকরা।
কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চলতি মাসে মশার ঘনত্ব চরমে পৌঁছাবে। জরুরি পদক্ষেপ না নিলে তা চারগুণ বেড়ে যাবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আবাসিক হলগুলোর আশপাশের এলাকাসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানের ড্রেন, ডোবা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার না করা এবং যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ থাকায় মশার প্রকোপ বেড়েছে। অন্যান্য বছরগুলোতে শীতের সময়ে ক্যাম্পাসে একাধিকবার মশক নিধন অভিযান চালানো হলেও এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগ ছিল তুলনামূলকভাবে কম। ফলে যত দিন যাচ্ছে তত মশার উপদ্রব বাড়ছে।
খোলা জায়গাতেও ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ছে মশা। হলগুলোতে মশার উপদ্রবে শিক্ষার্থীদের থাকাই দায় হয়ে গেছে। কোথাও দাঁড়িয়ে বা বসে দুই মিনিট কথা বলার মতো পরিস্থিতি নেই। সঙ্গে সঙ্গে মশার ঝাঁক জেঁকে বসে। সম্প্রতি কয়েকটি আবাসিক হলে মশক নিধনের ব্যবস্থা নেওয়া হলেও তা যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ, মুক্তমঞ্চের দক্ষিণ পাশ, শহীদ মিনার সংলগ্ন রাস্তার পাশে, অমর একুশে ভাস্কর্য, কেন্দ্রীয় মসজিদের আশপাশ, ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের সামনে, মুরাদ চত্বর ও টারজান পয়েন্টসহ আরও বেশ কয়েকটি জায়গায় ময়লার স্তূপ গড়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি ড্রেনে দীর্ঘদিন পানি জমে আছে। এসব ময়লার স্তূপ থেকে নিয়মিত বর্জ্য অপসারণ ও ড্রেনের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় তা মশার প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে কাজ করছে।
এদিকে জাবি অধ্যাপক কবিরুল বাশারের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ঢাকার উত্তরা, গুলশান, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, কাঠালবাগান ও পুরান ঢাকার সদরঘাট এলাকায় গড় ঘনত্বে প্রতি ডিপে (মশার ঘনত্ব বের করার পরিমাপক) ৬০টির বেশি মশা পাওয়া গেছে। যেখানে অন্যান্য সময় এসব এলাকায় ১৫ থেকে ২০টি মশা পাওয়া যেতো।
গবেষণায় আর উল্লেখ করা হয়, এই মশাগুলোর বেশিরভাগই কিউলেক্স মশা। তবে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিস মশার ঘনত্ব এসব এলাকায় এক শতাংশেরও কম।
এ বিষয়ে কীটতত্ত্ববিদ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশেষ কিছু নিদের্শকের ওপর ভিত্তি করে আমরা পূর্বাভাস দিতে পারি আগামী ১৫ দিন বা একমাস পর কোন এলাকায় মশার ঘনত্ব কেমন হবে। ঢাকার এই বিশেষ অঞ্চলগুলোর স্যাম্পল (নমুনা) বিশ্লেষণে এটাই উঠে এসেছে।’
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মশার উপদ্রব বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে এ অধ্যাপক বলেন, ‘ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে মশার ঘনত্ব অনেক বেড়ে যায়। কারণ শীতের পর এসময় তাপমাত্রা হালকা বাড়তে শুরু করলে মশার ডিম পাড়ার হার বেড়ে যায়। পাশাপাশি মশার লার্ভাগুলোর বৃদ্ধিও অনেকটা দ্রুত হয়। জাহাঙ্গীরনগরেও সেটিই হয়েছে।’
তিনি বলেন, মার্চ মাসে মশার উপদ্রব ক্যাম্পাসে আরও অনেক বেড়ে যাবে। তবে আগে থেকেই কিছু পদক্ষেপ নিলে মশার ঘনত্ব বাড়তো না।
‘এই সময়ে কিউলেক্স মশার ঘনত্ব সবচেয়ে বেশি। এই মশা ড্রেন, ডোবা, নর্দমা ও পচা পানিতে জন্মায়। তাই নিয়মিত ড্রেন, নর্দমা, ডোবা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করা উচিত, যোগ করেন কীটতত্ত্ববিদ অধ্যাপক কবিরুল বাশার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হল কর্তৃপক্ষ (মশার উপদ্রবের বিষয়টি) আমাদের জানালে আমরা ফগিং মেশিন দিয়ে স্প্রে করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে আসছি। এখন পর্যন্ত যারা আমাদের মশার সমস্যা সম্পর্কে জানিয়েছেন তাদের ফগিং মেশিন এবং ওষুধ সরবরাহ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহা. মুজিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘হল প্রাধ্যক্ষদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছি। তাদের বলা হয়েছে, হলসংশ্লিষ্ট মালিদের দিয়ে হলের আশপাশে যত ঝোপঝাড় রয়েছে তা যেন কেটে ফেলা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোকে মশা নিধনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে তাগিদ দেওয়া হয়েছে।’
মাহাবুব সরদার/এসআর/জেআইএম