ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

গৌরবের ৩২তম বসন্তে পা দিলো শাবিপ্রবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট | প্রকাশিত: ০৯:২৮ এএম, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২

আজ পহেলা ফাল্গুন। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) দিবস। ১৯৯১ সালের বসন্তের এই দিনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। গৌরব ও সাফল্যের ৩১টি বসন্ত পেরিয়ে ৩২তম বসন্তে পা রাখলো বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণায় সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয়টি।

বিগত বছরগুলোতে ইংরেজি দিনপঞ্জি অনুযায়ী ১৩ ফেব্রুয়ারি ধারাবাহিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হলেও ২০২০ থেকে বাংলা দিনপঞ্জির সঙ্গে মিল রেখে পহেলা ফাল্গুন (১৪ ফেব্রুয়ারি) দিনটিকে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হচ্ছে।

জাতীয় পতাকা উত্তোলন, কেক কাটা, বর্ণাঢ্য র‌্যালিসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ সিলেট শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে আখালিয়া এলাকায় ৩২০ একর জমির ওপর অবস্থিত। তিনটি বিভাগ, ১৫ শিক্ষক ও ১২০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই বিশ্ববিদ্যালয় নানা বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে আপন গতিতে এগিয়েছে বহুদূর। নতুন নতুন উদ্ভাবন, গবেষণা ও সাফল্যে প্রতিনিয়ত আলোকোজ্জ্বল দ্যুতি ছড়িয়ে যাচ্ছে এই আলোর ঘর। সময়ের ব্যবধানে এই ঘরে এখন ২৮টি বিভাগ এবং দুটি ইনস্টিটিউশনের অধীনে প্রায় সাড়ে ৬০০ শিক্ষক এবং ১২ হাজার শিক্ষার্থী।

গৌরবের ৩২তম বসন্তে পা দিলো শাবিপ্রবি

দেশের সেরা এই বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা-গবেষণায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক শতাধিক পুরস্কার লাভের পাশাপাশি সুশাসন, স্বচ্ছতা, র‌্যাগিংমুক্ত এবং অবকাঠামোগত উন্নয়নে অনন্য উচ্চতায় রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানকে উচ্চ থেকে উচ্চতরের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও বদ্ধপরিকর।

শাবিপ্রবির উদ্ভাবিত অনেক প্রযুক্তি দেশে প্রথম ও অনন্য স্থান দখল করে রেখেছে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রথম সেমিস্টার পদ্ধতি চালু, মোবাইল ফোনে ভর্তি কার্যক্রম শুরু, পুরো ক্যাম্পাস ওয়াইফাই সেবার আওতায় নিয়ে আসা, ক্যাম্পাসের প্রতিটি জায়গায় সিসিটিভি ক্যামেরার ব্যবহার, নিজস্ব ডোমেইনে ইমেইল চালু করে শাবিপ্রবি।

এছাড়া প্রথম বাংলা সার্চ ইঞ্জিন ‘পিপীলিকা’র উদ্ভাবন, যানবাহন ট্র্যাকিং ডিভাইস উদ্ভাবন, চালকবিহীন বিমান (ড্রোন) উদ্ভাবন, বাংলায় কথা বলা সামাজিক রোবট ‘রিবো’ তৈরি, হাঁটতে-চলতে সক্ষম রোবট ‘লি’ তৈরি, অনলাইনে ট্রান্সক্রিপ্ট উত্তোলনের সুবিধা চালু, কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তার কিবোর্ড তৈরি, তাৎক্ষণিক সার্টিফিকেট যাচাইয়ের জন্য ‘ব্লক চেইন’ পদ্ধতি, গবেষণায় নকল যাচাই করার জন্য ‘টার্ন-ইট-ইন’ পদ্ধতি চালু, পরীক্ষার মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয়ের পদ্ধতি উদ্ভাবনসহ অসংখ্য উদ্ভাবন রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের।

গৌরবের ৩২তম বসন্তে পা দিলো শাবিপ্রবি

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসা আয়োজিত স্পেস অ্যাপস চ্যালেঞ্জে প্রথমবারের মতো অংশ নিয়ে ৭৯টি দেশের বাছাইকৃত দুই হাজার ৭২৯টি দলের সঙ্গে লড়াই করে শীর্ষ চারে জায়গা করে নেয় শাবিপ্রবির দল ‘টিম অলিক’। সর্বশেষ দেশের প্রযুক্তি খাতে অবদানের জন্য ‘দেশসেরা ডিজিটাল ক্যাম্পাস অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে শাবিপ্রবি।

শুধু শিক্ষা ও গবেষণায় নয়, মানবিকতায়ও অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে শাবিপ্রবি। অতিমারী করোনাকালে নিজস্ব অর্থায়নে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের অধীনে করোনা শনাক্তরণ ল্যাব তৈরি করেছে। এতে করে এই অঞ্চলের মানুষের দুর্ভোগ কমিয়েছে। গত বছরের শুরুতে করোনা ভাইরাসের জিনোম রহস্য উন্মোচন করে সম্পূর্ণ ৩০ ধরনের পরিবর্তিত করোনাভাইরাস শনাক্ত করেছে শাবিপ্রবির গবেষক দল।

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও শাবিপ্রবি ক্যাম্পাস অনন্য। প্রধান ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই চারদিকের মনোমুগ্ধকর পরিবেশ সকলের দৃষ্টি কাড়ে। প্রবেশের পরই দীর্ঘ এক কিলোমিটার রাস্তার দুপাশ জুড়ে চোখে পড়ে নয়নাভিরাম বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। কিলোরোডের দুদিকে রয়েছে স্বচ্ছ পানির লেক। এক কিলোমিটার রাস্তা পার হলেই দেখা যায় গোল চত্বরের বিশাল ফুল বাগান।

গৌরবের ৩২তম বসন্তে পা দিলো শাবিপ্রবি

রয়েছে দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার। টিলার ওপরে নির্মিত দেশের অন্যতম সৌন্দর্য্যমণ্ডিত এ শহীদ মিনারে উঠতে প্রায় ১০০ সিঁড়ি অতিক্রম করতে হয়। এছাড়া প্রায় সবকটি অবাসিক হলের পাশে রয়েছে দৃষ্টিনন্দন উঁচু-নিচু টিলা ও পাহাড়ের সমাগম।

শাবিপ্রবি ক্যাম্পাসের সর্বত্র ছড়িয়ে আছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার চিহ্ন। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি, মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য- ‘চেতনা ৭১’, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার মনে করিয়ে দেয় মহান মুক্তিযুদ্ধের আগের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলো।

ভৌত অবকাঠামো নির্মাণের প্রথম পর্যায়ে ২০০ কোটি টাকা অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল, সৈয়দ মুজতবা আলী হলের অসমাপ্ত তিন-চতুর্থাংশ, সেন্টার এক্সেলেন্স ভবন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের দ্বিতীয় ভবন, টেনিস কোর্ট, আইআইসিটি ভবনের অসমাপ্ত পঞ্চম থেকে দশম তলার নির্মাণ কাজ প্রায় ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।

গৌরবের ৩২তম বসন্তে পা দিলো শাবিপ্রবি

অন্যদিকে দ্বিতীয় পর্যায়ে ৯৮৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকার অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প কাজ অতি শিগগির চালু হবে। এই প্রকল্পের আওতায় সিনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য দুটি আবাসিক ভবন, জুনিয়র শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য দুটি আবাসিক ভবন, চতুর্থ ছাত্রী হল, চতুর্থ ছাত্র হল, ফলিত বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক বিভাগসমূহের দুটি একাডেমিক ভবন, কর্মচারীদের জন্য একটি আবাসিক ভবন, একটি তৃতীয় আবাসিক ভবন, ভৌত বিজ্ঞান, কৃষি ও খনিজ বিজ্ঞান বিষয়ক বিভাগসমূহের জন্য একটি একাডেমিক ভবন, ব্যবস্থাপনা ও ব্যবসায় প্রশাসন, বাংলা, ইংরেজি বিভাগ ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের জন্য একটি একাডেমিক ভবন, একটি ক্লাব কমপ্লেক্স ভবন, একটি গ্র্যাজুয়েট ও বিদেশি ছাত্রদের জন্য হোস্টেল, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজের জন্য একটি ভবন, চারতলা বিশিষ্ট মসজিদ একটি।

এর বাইরেও বর্তমানে নান্দনিক ডিজাইনের মূল ফটক ও এককিলো রোডের দুইপাশে ওয়াকওয়ে নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও কেন্দ্রীয় ওয়ার্কশপ ও কেন্দ্রীয় গ্যারেজ বর্ধিতকরণ এবং প্রধান সড়কের উভয়পাশে ১৫ মিটার স্প্যানের দুইটি নান্দনিক ব্রিজ নির্মিত হবে।

গৌরবের ৩২তম বসন্তে পা দিলো শাবিপ্রবি

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবদান রেখে চলছে শাবিপ্রবি। নানা বাধা-বিপত্তি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে আমরা প্রতিনিয়ত এগিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে সুশাসন, অবকাঠামো উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, মানবিকতার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান উন্নতি সাধন করছে বিশ্ববিদ্যালয়টি।

তিনি আরও বলেন, এখন সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে শাবিপ্রবি রোল মডেল। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আলো ছড়িয়ে পড়ছে দেশ ও দেশের বাইরে। আগামী দিনেও সকলের সহযোগিতায় আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে বলে আশা করছি।

মোয়াজ্জেম আফরান/এফএ/জেআইএম