ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

চবিতে ছাত্রলীগের সংঘর্ষের পর তদন্ত কমিটিতে ‘দায় সারে’ প্রশাসন

মিজানুর রহমান, নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম | প্রকাশিত: ১২:১০ পিএম, ২০ জানুয়ারি ২০২২

আধিপত্য বিস্তার ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা বিরাজ করছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগে। পান থেকে চুন খসতেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে সংগঠনটির বিভিন্ন গ্রুপ-উপগ্রুপ। সংঘর্ষের কারণ জানতে চাইলে এক গ্রুপ আরেক গ্রুপকে দোষারোপ করছে। আবার সংঘর্ষের পর নামমাত্র তদন্ত কমিটি দিয়ে ‘দায় সারে’ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দিনভর ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে উত্তেজনা বিরাজ করে। এরপর ওইদিন রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের মোড়ে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। পরে তা শাহ আমানত হলেও ছড়িয়ে পড়ে। এরপর থেমে থেমে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে উভয় গ্রুপ। এই ঘটনায় অন্তত ১৩ জন নেতাকর্মী আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। রাত প্রায় ৩টার দিকে পুলিশ ও প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এই ঘটনায় বুধবার চবি উপাচার্য দপ্তরের সিনেট কক্ষে এক জরুরি সভায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এতে সহকারী প্রক্টর ড. রামেন্দু পাড়িয়ালকে আহ্বায়ক ও এসএএম জিয়াউল ইসলামকে সদস্য সচিব করা হয়। এছাড়া কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন, সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষক ড. মোরশেদুল আলম ও শাহ আমানত হলের আবাসিক শিক্ষক হাসান মোহাম্মদ রোমান শুভ।

একই সভায় ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা জোরদার করতে সিসিটিভি ক্যামেরার সংখ্যা বাড়ানো ও গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে রাতে সড়ক বাতির ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মঙ্গলবার দিবাগত রাতে সংঘর্ষে জড়ানো পক্ষ দুটি শাখা ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক উপগ্রুপ ‘বিজয়’ ও ‘সিএফসি’। উভয়পক্ষই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। আবার গ্রুপ দুটির মধ্যে সিএফসির নেতৃত্বে রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল ও বিজয় গ্রুপের নেতৃত্বে রয়েছেন সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস।

অবশ্য এই দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বও পুরোনো। ২০১৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর রেজাউল হক রুবেলের গ্রুপ সিএফসি ইলিয়াসের ওপর হামলা চালায়। এসময় সভাপতি রুবেল সাবেক সাংগঠনিক ইলিয়াসকে জঙ্গি সংগঠন হিজবুত তাহরীরের সদস্য আখ্যা দেন। এর আগে অছাত্র, অযোগ্য আখ্যা দিয়ে ক্যাম্পাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০৬-২০০৭ সেশনের শিক্ষার্থী রেজাউল হক রুবেলের বিরুদ্ধে একই বছরের ২৩ জানুয়ারি আলাওল ও এফ রহমান হল থেকে ঝাড়ু মিছিল বের করে ইলিয়াসের নেতৃত্বাধীন বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মীরা। এসব কারণে বিগত সময়ে সভাপতি রুবেলের অনুসারী সিএফসি গ্রুপ ও ইলিয়াসের বিজয় গ্রুপের মধ্যে তেমন রাজনৈতিক সমঝোতা দেখা যায়নি।

জানতে চাইলে বিজয় গ্রুপের নেতা ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ সভাপতি রুবেল সাবেক জামায়াত নেতার সরবরাহ করা অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে নিয়মিত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হামলা করছে। সামনে পূর্ণাঙ্গ কমিটি হবে। তিনি এই পূর্ণাঙ্গ কমিটি বানচাল করতেই এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুরু করেছেন।’

সিএফসি গ্রুপের নেতা ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ইলিয়াস ছেলেটার কিছু টাকা হয়েছে। তিনি মূলত ব্যবসা-বাণিজ্য করে এই টাকা জোগাড় করেছেন। এখন এসব টাকা খরচ করছেন ছাত্রলীগের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টির জন্য। নিয়মিত টাকা খরচ করে লোক জোগাড় করে তিনি ছাত্রলীগের ওপর হামলা করছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ছাড়া পুরো শাখা ছাত্রলীগ ঐক্যবদ্ধ। তার এই কর্মকাণ্ডের দায়ভারও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নেবে না। আমরা তার বিষয়ে এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকেও জানিয়েছি।’

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা বলছেন, ছাত্রলীগের এসব গ্রুপ-উপগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হলেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দায় সারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অনেক ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও ওই কমিটি আর প্রতিবেদন জমা দেন না। আবার প্রতিবেদন পাওয়া গেলেও সেই মোতাবেক কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হয় না। যে কারণে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব নিয়ে সংঘর্ষের মতো ঘটনার লাগাম টানা যাচ্ছে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘কোনো ঘটনা হলেই শুধু সেটা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অথচ এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে প্রশাসন চেষ্টা করে না। তারা চাইলে সংঘর্ষে জড়ানো শিক্ষার্থীদের শাস্তি দিলে এই ধরনের ঘটনা কমে যাবে। সর্বশেষ গত বছরের ১২ ছাত্রলীগ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করলেও কিছুদিন পর নির্ধারিত সময়ের আগে তা প্রত্যাহার করা হয়। যে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে চবির ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর ড. শহীদুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি, ছাত্রলীগের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান করতে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবারের ঘটনায় আরেকটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এআরএ/জিকেএস