রাবিতে মানসিক অবসাদে ভোগা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে
মহামারি করোনার কারণে দেড় বছর ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় পুরোটা সময়ই মানসিক চাপে ছিলেন ফারহানা খন্দকার। একাডেমিক পড়াশোনার সঙ্গে তার বড় একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যায়। সেপ্টেম্বরে ক্যাম্পাস খোলার পরপরই পরীক্ষা শুরু হয়ে যায়। এতে মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন ফারহানা। তিনি পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না। পড়তে বসলে মনে হতো তিনি কিছুই পড়েনিনি। পরীক্ষায় কিছুই লিখতে পারবেন না। এসব কিছু মিলিয়ে মারাত্মক চাপে পড়ে যান রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের এ শিক্ষার্থী।
ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের শিক্ষার্থী তুহিনুজ্জামানের ভাষ্য, ‘ক্যাম্পাস খোলার পরপরই পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। যে কারণে পড়াশোনা করলেও পরীক্ষার খাতায় যথেষ্ট লেখা সম্ভব হচ্ছে না। মানসিক দিক থেকে অনেকটা দুর্বল মনে হচ্ছে নিজেকে।’ তার মতে, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর পরীক্ষার জন্য কমপক্ষে এক মাস সময় দেওয়া উচিত ছিল প্রশাসনের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু ফারহানা খন্দকার ও তুহিনুজ্জামান না, করোনাজনিত কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার থাকার পর অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও মানসিক স্বাস্থের অবনতি হওয়া শিক্ষার্থীদের পরিমাণ বেড়েছে কয়েকগুণ। গত তিন বছরে যেখানে মানসিক বিভিন্ন সমস্যায় ভোগা রোগীর সংখ্যা ছিল ৫০০ জন, সেখানে গেল দুই মাসেই এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭০০ জনে।
মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভোগা শিক্ষার্থীদের এ সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের পরিচালক ও মনোবিজ্ঞান বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক আনোয়ারুল হাসান সুফী।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘গত দুই মাসে এ পর্যন্ত প্রায় ২০০ জনের মতো মানসিক সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থী আমারদের কাছে এসেছে। তবে এই সংখ্যা প্রতিনিয়ত যেভাবে বেড়েই চলছে সেটা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। যেখানে করোনা মহামারির আগে দিনে সর্বোচ্চ দুইজন শিক্ষার্থী আসতো সেখানে বর্তমানে দিনে ১০ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী আসছে। যাদের মধ্যে ৪৮% পুরুষ ও ৫২% নারী শিক্ষার্থী।’
এর কারণ উল্লেখ করে অধ্যাপক সুফি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরপরই প্রায় সব বিভাগের পরীক্ষা ও একটানা ক্লাস শুরু হয়ে যায়। যার ফলে শিক্ষার্থীদের ওপর পড়াশোনার ব্যাপক চাপ পড়ে। এছাড়া শিক্ষকদের মধ্যে দেড় বছরের পড়াশোনা দেড় মাসে শেষ করিয়ে ফেলার প্রবণতাই এমন পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশেই দায়ী বলে মনে করেন তিনি।
মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রেইনি কো-অর্ডিনেটর মেহেদী হাসান জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসছেন। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে পড়ালেখা শেষ না হওয়ার দুশ্চিন্তা, ক্যারিয়ার গোল ঠিক করতে না পারা, করোনার কারণে দেড় বছরের বেশি সময় শিক্ষাজীবন থেকে চলে যাওয়া, পারিবারিক সমস্যা, প্রেমের সম্পর্ক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সময় বেশি দেওয়া ইত্যাদি। এদের মধ্যে বড় একটি অংশ আত্মহত্যাপ্রবণ ছিলেন বলে জানান মানসিক স্বাস্থ্য কেন্দ্রের এ ট্রেইনি কো-অর্ডিনেটর।
সমস্যা থেকে উত্তরণের পথ হিসেবে অধ্যাপক সুফী বলছেন, এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগের শিক্ষকদের নিয়ে একটি সেমিনার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যাতে একটা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করে এবং শিক্ষার্থীরা তাদের মানসিক সমস্যা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি শিক্ষকদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারেন সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
সালমান শাকিল/এসআর/এএসএম