ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

১৪ মাস ধরে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা দিচ্ছেন ছাত্রলীগের ৩ নেতা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | প্রকাশিত: ১০:০০ পিএম, ১০ আগস্ট ২০২১

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর যখন অক্সিজেন সিলিন্ডার সঙ্কট ও দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যায় সেই সময়ে মুমূর্ষু রোগীদের জন্য বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবার উদ্যোগ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তিন নেতা। তাদের উদ্যোগে এখন পর্যন্ত নয় হাজার মানুষ অক্সিজেন সেবা পেয়েছে। তাদের দাবি, দেশের মধ্যে তারাই প্রথম বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করেছে।

২০২০ সালের ২৫ জুন থেকে তারা ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নামে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা চালু করে। কোনো মুমূর্ষু রোগী অক্সিজেনের জন্য ফোন দিলে রোগীর কাছে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছিয়ে দেয় স্বেচ্ছাসেবকরা।

শুরুর দিকে শুধুমাত্র ঢাকায় তাদের সেবা চালু থাকলেও ধীরে ধীরে দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাদের সেবা ছড়িয়ে দেয়া হয়। বর্তমানে পাঁচটি বিভাগীয় শহর ও নয়টি জেলা শহরে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। এখন পর্যন্ত প্রায় নয় হাজার মানুষ তাদের কাছ থেকে অক্সিজেন সেবা নিয়েছে। করোনার এই উচ্চ সংক্রমণের সময়ও তারা মানুষের কাছে গিয়ে অক্সিজেন সেবা পৌঁছিয়ে দিচ্ছেন।

বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ চালুর উদ্যোগ নেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তার সহযোগী হিসেবে ছিলেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপবিজ্ঞান-বিষয়ক সম্পাদক সবুর খান কলিন্স ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ও ডাকসুর সাবেক সদস্য রফিকুল ইসলাম সবুজ। এরা সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

শুরুর দিকে তারা ১২টি সিলিন্ডার দিয়ে কাজ শুরু করলেও বর্তমানে ১৬০টির বেশি সিলিন্ডার রয়েছে তাদের। তিনজন স্বেচ্ছাসেবক থেকে এখন তাদের স্বেচ্ছাসেবক ১৫০ জনেরও বেশি। স্বেচ্ছাসেবক সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।

‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ নিয়ে জাগো নিউজের সঙ্গে কথা বলেন এর প্রধান উদ্যোক্তা ডাকসুর সাবেক স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক সম্পাদক ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরাই শুরুতে বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালু করি। এর আগে অক্সিজেন সেবা ঘরে ঘরে গিয়ে দেয়া যায়- এ রকম আইডিয়া কারও ছিল না। আমরা এটা শুরু করার পর অন্যান্যরাও এই সেবায় এগিয়ে আসেন।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘আমরা বর্তমানে ঢাকা, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী এই পাঁচটি বিভাগীয় শহর এবং ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, কক্সবাজার, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও চাঁদপুর এই নয়টি জেলা শহরে বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আর যেসব জেলা শহরে তাদের সরাসরি সেবা চালু নেই সেখানে কুরিয়ারযোগে বা কোনো অ্যাম্বুলেন্সে ওই জেলায় গেলে সিলিন্ডার পাঠিয়ে তাদের সেবা দিচ্ছি। যেসব জেলায় সংক্রমণ বেশি আমরা সেসব জেলায় অক্সিজেন সেবা চালুর চেষ্টা করি। সেক্ষেত্রে যেসব জেলায় সংক্রমণ কমে গেছে সেসব জেলা থেকে আমরা অধিক সংক্রমিত জেলার দিকে মুভ করি।’

এই সেবা দিতে গিয়ে কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত আমাদের ২০ জনের বেশি স্বেচ্ছাসেবক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে আমার পুরো পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে কেউ মৃত্যুবরণ করেননি।’

বিনামূল্যে অক্সিজেন সেবা চালাতে গিয়ে অর্থের যোগান কীভাবে দিচ্ছেন এ প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘আমরা আর্থিক লেনদেন করি না। কেউ কোনো পণ্য দিলে আমরা শুধু সেটা গ্রহণ করি। কেউ অক্সিজেন রিফিলে সহযোগিতা করতে চাইলে আমরা রিফিল সেন্টারের সঙ্গে কানেক্ট করিয়ে দেই। আমরা আর্থিক লেনদেনকে নিরুৎসাহিত করে থাকি। এরপরও আমরা প্রতি মাসে একবার করে আর্থিক লেনদেনের হিসাব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দিয়ে থাকি। আমরা বিশ্বাস করি- কাজের স্বচ্ছতা কাজকে গতিশীল করে।’

এই কাজের সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা মানুষের ভালোবাসা উল্লেখ করে এই উদ্যোক্তা বলেন, ‘যখন করোনায় আক্রান্ত মানুষের কাছে তাদের অতিপ্রিয় আপনজনও যাচ্ছেন না তখন আমরা নিজ হাতে তাদের অক্সিজেন লাগিয়ে দেয়। তখন তাদের কাছ থেকে যে ভালোবাসার অভিব্যক্তি পাওয়া যায় তা আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন ও অনুপ্রেরণা। এই অভিব্যক্তি দেখে আমরা যে সুখ পায় তা বলা সম্ভব না। আর এতো দীর্ঘ সময় মানুষের ভালোবাসা ছাড়া এ ধরনের একটি কাজ পরিচালনা করা অসম্ভব।’

তিনি বলেন, ‘ভালোবাসার কোনো বিনিময় হয় না। মানুষের ভালোবাসায় জন্যই আমরা দীর্ঘ সময় ধরে কাজটি পরিচালনা করতে সম্ভব হয়েছি। মানুষ যখন বলে আমাদের অক্সিজেন সিলিন্ডারের উসিলায় উনি বেঁচে গেছেন, পুনরায় জীবন ফিরে পেয়েছেন তখন এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর হতে পারে না। যদিও জীবন-মৃত্যুর মালিক সৃষ্টিকর্তা।’

jagonews24

‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’ চালুর উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাদ বিন কাদের চৌধুরী বলেন, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতির শুরু থেকে প্রধানমন্ত্রী সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মানুষের পাশে থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। নেত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়নে সারাদেশে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ধরনের জনবান্ধব কর্মসূচি নিয়ে মানুষের পাশে থেকেছে। সেই ধারাবাহিকতায় মানুষের প্রয়োজনকে প্রাধান্য দিয়ে আমরা চালু করি বিনামূল্যে জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের সেবা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। সেবার জন্য কোনো যাতায়াত ভাড়া নিই না। এমনকি কোনো জামানতও জমা দিতে হয় না। সম্পূর্ণ বিশ্বাসের ওপর আমরা এই সেবা দিয়ে থাকি। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন থাকা সাপেক্ষে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এই সেবাটি আমরা মানুষের বাসায় পৌঁছে দেই। আমরা কোনো দল-মত-ধর্ম দেখি না। মানুষ হিসেবে আমরা এ সেবা পৌঁছে দেই। করোনার এই সঙ্কট যত দিন থাকবে তত দিন আমরা এই সেবা নিয়ে মানুষের পাশে থাকব।’

তিনি আরও বলেন, ‘একটি নতুন ভোরের প্রতীক্ষা’ এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা সারাদেশে ধাপে ধাপে চালু করি বিনামূল্যে ‘জয় বাংলা অক্সিজেন সেবা’। করোনামুক্ত নতুন ভোরের স্বপ্ন আমরা দেখি, সেই ভোর খুব বেশি দূরে নয়। দুঃখের অমানিশা ভেদ করে সুখের সোনালি সূর্য আবার ফিরে আসুক সেই প্রত্যাশা করছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা করোনা মহামারির সময়ে জীবন বাজি রেখে এ সেবা দেয়ার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক সিনেট অধিবেশনে তাদের জন্য ‘ধন্যবাদ’ প্রস্তাব পাস করা হয়।

তাদের এই সেবা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘সিনেটেও তাদেরকে আমি অভিনন্দন জানিয়েছি। তারা হচ্ছে সমাজের রোল মডেল। সমাজে তারাই তো চেঞ্জ মেকার। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের যে মূল্যবোধ- মানবিক ও অসাম্প্রদায়িকতা, শিক্ষার্থীরা সেসব ক্ষেত্রে এগিয়ে আসে এটিই তার উদাহরণ। এই দুঃসময়ে বহু মানুষ বহু কাজ করতে পারে কিন্তু এভাবে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শারীরিকভাবে, বুদ্ধি, অর্থ সবকিছু দিয়ে একেবারে ঝাঁপিয়ে পড়া এগুলো অসাধারণ দৃষ্টান্ত। বিশ্ববিদ্যালয় নিঃসন্দেহে এগুলো নিয়ে গর্ববোধ করতে পারে। এই মূল্যবোধটা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মৌলিক চরিত্র।’

আল-সাদী ভূঁইয়া/এআরএ/এএসএম