ইবির মেডিকেলে মিলছে না করোনার প্রাথমিক চিকিৎসা
কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ জেলায় করোনার প্রকোপ দিনদিন বেড়েই চলেছে। আর এ দুজেলার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ও তার আশপাশেও বেড়েছে করোনা সংক্রমণের হার। এই পরিস্থিতিতে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় দিন পার করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক প্রায় পাঁচ শতাধিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারী। কারণ, করোনার প্রাথমিক চিকিৎসাও মিলছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে। চিকিৎসা নিতে যেতে হচ্ছে কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে করোনার চিকিৎসা ব্যবস্থা না থাকায় হতাশ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা। এদিকে চিকিৎসা কেন্দ্রটিতে অপর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী ও লোকবল সঙ্কটের কথা জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে ১১ জন চিকিৎসক, দুজন সাময়িক চিকিৎসক, সেবিকা, ফার্মাসিস্টসহ মোট ২১জন নিয়োজিত আছেন। তবে করোনাকালে এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি চলছে একজন চিকিৎসক, একজন পিওন ও একজন ফার্মাসিস্ট দিয়ে। ফলে এ মুহূর্তে সেখানে যথাযথ চিকিৎসা মিলছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
রোববার (১১ জুলাই) বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আবাসিক শিক্ষক তার পরিবারসহ করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা কেন্দ্রে যান। সেখানে কোনো প্রকার চিকিৎসা পাননি বলে অভিযোগ করেন তিনি। পরবর্তীতে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতাল থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ইনজেকশন নিয়ে আসেন। আবারও চিকিৎসা কেন্দ্রে গেলে লোকজন না থাকায় ইনজেকশনটি দিতে ব্যর্থ হন তিনি। এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী ওই শিক্ষক।
বিশ্ববিদ্যালয় আবাসিক শিক্ষক-কর্মকর্তারা দুদফায় দাবি জানালেও বিষয়টি কর্তৃপক্ষের সুনজরে আসেনি।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রটিকে করোনা চিকিৎসার উপযোগী করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছে ইবি শিক্ষক সমিতি (ইবিশিস)। সমিতির দাবি, করোনা আক্রান্তদের আইসোলেশনে থাকার ব্যবস্থা করা, আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য মানসম্পন্ন বেড প্রস্তুত করা, পালস অক্সিমিটারসহ অক্সিজেন সাপোর্ট দেয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক অক্সিজেন সিলিন্ডারের ব্যবস্থা করা এবং জরুরি রোগী বহনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্সকে আইসিইউ অ্যাম্বুলেন্সে উন্নীত করা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের চিফ মেডিকেল কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মেডিকেলে পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় আমরা পরিপূর্ণ সেবা দিতে পারছি না। একইসঙ্গে মেডিকেলে করোনা রোগীদের জন্যও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সামগ্রী নেই। তবে কিছুদিন আগে লোকবল ও করোনার চিকিৎসা সামগ্রীর জন্য কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিত আবেদন দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাইনি।’
ইবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। মেডিকেল সেন্টারে এতজন স্টাফ থাকার পরও সামান্য ইনজেকশন দেয়ার মতো কেউ নেই। প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়ার মতো ন্যূনতম প্রস্তুতিও মেডিকেলে নেই। এটা চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয়। আবাসিক শিক্ষক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পরিবারসহ চরম ঝুঁকিতে দিনাতিপাত করছেন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘করোনার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেলকে যতদূর সম্ভব কাজে লাগানো যায় সে ব্যবস্থা করা যেতে পারে। যদি মেডিকেলে করোনার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সেটা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে। সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
রায়হান মাহবুব/এসজে/এমকেএইচ