নৈসর্গিক সৌন্দর্যে সবচেয়ে উঁচুতে শহীদ মিনার
উদ্ভাবন, গবেষণা আর সাফল্যে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস যেমন অনন্য তেমনি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যেও অপরূপ। শহরের কোলাহল আর যান্ত্রিকতা থেকে দূরে প্রকৃতির কোলে গড়ে ওঠা এ ক্যাম্পাস শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্থাপত্যশৈলীতে বহন করছে দেশের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গৌরবের চিহ্ন। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্য ও স্থাপত্যশৈলীতে অন্যতম তাৎপর্যপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। এটি দেশের শহীদ মিনারগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ উঁচু স্থানে নির্মিত শহীদ মিনার হিসেবে পরিচিত।
ক্যাম্পাসে প্রবেশের পর দর্শনার্থীদের প্রধান আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু এই শহীদ মিনার। শিক্ষার্থীসহ দর্শনার্থীদের আড্ডা, গান আর কবিতায় নিয়মিত প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তন ও ইউনিভার্সিটি সেন্টারের পাশ ঘিরে ৫৮ ফুট উঁচু টিলার ওপর ৬ হাজার ৮৮৬ বর্গফুট জায়গা নিয়ে নির্মিত সিলেটের অন্যতম এই স্থাপত্য কীর্তি।
সমতল ভূমি থেকে শহীদ মিনারের উপরে উঠতে অতিক্রম করতে হয় ১০১টি সুদীর্ঘ সিঁড়ি। যা মোট তিনটি ফ্লাইটে বিভক্ত। সিঁড়ি পেরিয়ে উপরে উঠতেই চোখে পড়বে সৌন্দর্য বর্ধিত বৃত্তাকার দেয়াল। এর পরেই মূল বেদিতে ওঠার জন্য আরও সাত ধাপের ছোট সিঁড়ি পার হতে হয়।
এরপর প্রকৃতির সৌন্দর্য যে কাউকেই মুগ্ধ করে তোলে। মুহূর্তের মধ্যেই হারিয়ে যায় ক্লান্তির স্মৃতি। এখান থেকে অবলোকন করা যায় পুরো ক্যাম্পাসকে। মানসিক প্রফুল্লতার সঙ্গে মনে করিয়ে দেয় বীর শহীদদের আত্মত্যাগের কথা, জাগ্রত করে দেশপ্রেম।
১৯৯১ সালের পহেলা ফাল্গুন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক যাত্রা শুরু হলেও ওই বছর ক্যাম্পাসে নিজস্ব শহীদ মিনার নির্মাণ করা হয়নি। সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গিয়ে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে ২১ ফেব্রুয়ারিতে মাতৃভাষা দিবস পালন করে। তবে পরের বছর অর্থাৎ ১৯৯২ সালে ছোট-বড় গোল আকৃতির তিনটি স্তম্ভ দ্বারা একটি শহীদ মিনার তৈরি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শহীদ মিনার নির্মিত হওয়ার পূর্বে এখানেই জাতীয় দিবসগুলোতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করতেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
পরবর্তীতে ২০০১ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন জাতীয় সংসদের স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী বর্তমান শহীদ মিনারটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সেই বছর সেপ্টেম্বর মাসে প্রায় ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে এই শহীদ মিনার নির্মাণ হয়। শহীদ মিনারটির নকশা ও নির্মাণ করেন স্থপতি মহিউদ্দিন খান।
পুরো শহীদ মিনার প্রাঙ্গণটি সবুজের সমারোহে নানা প্রজাতির বৃক্ষরাজি দ্বারা আচ্ছাদিত। সবুজ টিলায় উঁচু উঁচু বৃক্ষের ডালপালার আচ্ছাদনে বর্ণিল হয়ে উঠেছে স্থানটি। ওপর থেকে দেখতে বৃত্তাকার হওয়ায় সবুজের মাঝে লাল শহীদ মিনারটিকে মনে হয় জাতীয় পতাকার লাল বৃত্ত।
এই শহীদ মিনার নিয়ে ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টি টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মোছাদ্দেক হাসান জাগো নিউজের কাছে তার অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, দেশের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার চেতনা-সাম্য ও মাতৃভাষার প্রতীক। সেই সঙ্গে সব শিক্ষার্থীদের মাঝে আবেগের একটি বিশাল জায়গা জুড়ে আছে এই শহীদ মিনার।
শহীদ মিনার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম অপূর্ব ও অনিন্দ্য সুন্দর আমাদের এই শহীদ মিনার। দেশের যেকোনো শহীদ মিনারের চেয়ে এর স্বকীয়তা ও সৌন্দর্য অনন্য। এই সুন্দর পরিবেশে শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর সময় বুকটা ভরে যায়, মনে প্রশান্তি আসে। শহীদ মিনারটি এত উঁচুতে নির্মিত হয়েছে যার জন্য আমাদের শ্রদ্ধার জায়গাটাও আরও উঁচুতে। শহীদদের স্থানও অনেক উচ্চতায়, সবসময় মাথা উঁচু করে রাখতে তারা আমাদের প্রেরণা জোগায়।’
মোয়াজ্জেম আফরান/এসজে/এমএস