ঢাবিতে ৩২৫ টাকা জমা দিতে ৪৫০ কি.মি. পাড়ি
করোনাকালে শিক্ষা ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বেড়েছে। ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পরীক্ষাও নেয়া হচ্ছে অনলাইনে। তবে পরীক্ষার ফি জমা দেয়া এবং ফরম পূরণে ভোগান্তির শেষ নেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের। বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় পরীক্ষায় নম্বর কমানো, মিডটার্ম পরীক্ষার পরিবর্তে অনলাইনে অ্যাসাইনমেন্ট জমা নেয়া হলেও উন্নতি হয়নি টাকা জমা নেয়া ও ফরম পূরণ পদ্ধতির। ফলে হল বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীদের শুধু টাকা জমা দেয়া ও ফরম পূরণের জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে আসতে হচ্ছে ঢাকায়। থাকতে হচ্ছে এখানে-সেখানে।
ঢাবি শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাত্র ৩২৫ টাকা জমা দিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন জেলা থেকে ঢাকায় এসে অবস্থান করছেন। বিশেষ করে যাদের বাড়ি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে, তাদের জন্য বিষয়টি ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’র মতো।
তারা আরও বলছেন, ঢাবি কর্তৃপক্ষ দিনে দুটি করে পরীক্ষা নিয়ে সর্বোচ্চ দুই-তিন দিনের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করার নির্দেশনা দিলেও পরীক্ষার আগে কাগজপত্র নবায়ন করতে একজন শিক্ষার্থীকে তিন থেকে পাঁচদিন ঢাকায় অবস্থান করতে হচ্ছে। হল বন্ধ থাকার কারণে ভোগান্তি বেড়েছে শিক্ষার্থীদের।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভাগ থেকে ফরম নিয়ে তা পূরণ করে চেয়ারম্যানের স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। তারপর সেই কাগজ নিয়ে আবার আবাসিক হলে গিয়ে প্রভোস্টের স্বাক্ষর নিতে হয়। হল থেকে স্বাক্ষরিত কাগজ নিয়ে ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে আবার বিভাগে গিয়ে জমা দিয়ে আসতে হচ্ছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব হলেই নতুন বর্ষে ভর্তি ছাড়া হল প্রভোস্ট পরীক্ষার ফরমে স্বাক্ষর দিচ্ছেন না। এতে শিক্ষার্থীদের আরও এক-দুইদিন সময় বেশি লেগে যাচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে শিক্ষার্থীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে।
পরীক্ষার কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য পঞ্চগড় থেকে ঢাকায় আসা স্নাতক শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল হোসেন জাগো নিউজকে বলেন, ‘৩২৫ টাকার ফি জমা দিতে আমাকে ৪৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে ঢাকা আসতে হয়েছে। আসা যাওয়ায় প্রায় দুই দিন চলে যায়। আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণের জটিলতায় চারদিনের মতো সময় লাগছে। দুদিনের পরীক্ষা দিতে আমার বাড়তি ছয়দিন ঢাকায় থাকতে হচ্ছে। পরীক্ষার ফরম পূরণসহ টাকা গ্রহণ পদ্ধতি ডিজিটালাইজেশনের আওতায় আনলে শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তি থাকত না।’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. রহমত উল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ফরম অনলাইনে পূরণ করা গেলেও অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার ফরম পূরণ অনলাইনে করা যায় না, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আশা করব কর্তৃপক্ষ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসব বিষয়ে সংস্কার আনবে।’
এ বিষয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা শতবর্ষের মূল্যবোধকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। ক্রমান্বয়ে এসব বিষয়ে পরিবর্তন আনব। কিন্তু এখন যেভাবে আছে, সেভাবেই চলবে।’
এমএইচআর/এইচএ/এএসএম