অন্যরকম বসন্ত
ফাল্গুনের প্রথম দিন বসন্তের আগমন। বসন্ত বরণ করতে ক্যাম্পাসে বের হতো র্যালি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলাসহ প্রায় প্রতিটি বিভাগে আলাদা আলাদা আয়োজনে উৎসবমুখর থাকত পুরো ক্যাম্পাস। ইবলিশ মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে থাকত পিঠা উৎসবের আয়োজন।
এবার কোথাও চোখে পড়েনি পিঠা উৎসব। কোলাহল থাকলেও আগের আমেজ ছিল না ক্যাম্পাসে। এ বছর বসন্তটা সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে ধরা দিয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন জানান, গতবার যে বসন্ত উৎসব ছিল এবার উৎসবে বৈচিত্র্য রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে কড়াকড়ি করা হয়েছে। এবার মানুষ নেই। আগের বছর সিরাজী ভবনের সামনে ফুল ও খাবারের দোকান ছিল। কিন্তু এবার সেগুলো লক্ষ্য দেখা যায়নি। আমরা ফুল কিনতে পারিনি।
এবার ভালো লাগছে এ কারণে যে, করোনার কারণে অনেক দিন ঘরবন্দি ছিলাম। বিরক্তির সৃষ্টি হচ্ছিল। তার থেকে বের হতে পেরেছি।
সকালে ক্যাম্পাসে আইডি কার্ড ছাড়া প্রবেশ নিষেধ থাকলেও দুপুর থেকে সবার প্রবেশের সুযোগ হয়। এরপর বাড়তে থাকে দর্শনার্থীসহ শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সংখ্যা।
ক্যাম্পাসে এসেছিলেন রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক লিটন সরকার। তিনি জানান, করোনার মধ্যে একটু হাঁপিয়ে উঠেছিলাম বাড়িতে থাকতে থাকতে। এখানে এসে ভালো লাগছে। মাস্ক নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানে এসেছি। আমরা ছবি তুলছি, মজা করছি। কারণ করোনার মধ্যেও ভ্যালেন্টাইন ডে, বসন্ত একসাথেই পেয়েছি এবং এটা মিস করতে চাচ্ছি না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ডলি বিশ্বাস বলেন, এবারের বসন্ত একেবারেই ভিন্ন। করোনার সময় এ এক অন্যরকম বসন্ত। ভ্যাকসিন আসার কারণে একটু সাহস জেগেছে।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বলছেন, আমাদের সাবধান থাকতে হবে যেন শিক্ষকরা ক্লাসের বাইরে। কিন্তু আমাদের সচেতন হতে হবে, যাতে আমাদের অসচেতনতার কারণে করোনা আবারও ব্যাপক হারে না বাড়ে।
ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, শহীদ মিনার, প্যারিস রোড, ইবলিশ মাঠ, টুকিটাকি, পশ্চিমপাড়া, চারুকলা, আমতলায় মানুষের আনাগোনা ছিল বেশি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন চত্বরে বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন কিংবা পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।
এদিকে করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ থাকায় আগের মতো চারুকলা প্রাঙ্গণে হচ্ছে না বসন্তবরণ। উৎসব না হলেও অনলাইনে বসন্তকে বরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলার শিক্ষার্থীরা।
এদিন দুপুর সাড়ে ১২টায় রেডিও চারু নামের ফেসবুক পেজ এবং ইউটিউব চ্যানেলে দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচারিত হয়। যেখানে চারুকলার শিক্ষার্থীদের পাঠানো নাচ, গান, কবিতা, ফ্যাশন শো এবং নাটিকা প্রদর্শিত হয়েছে। মাঝে মাঝে শিক্ষকদের দেয়া বাণী অনুষ্ঠানে যোগ করেছে ভিন্ন মাত্রা।
এর আগে বেলা ১১টায় প্রতিবারের মতো প্রেমবঞ্চিত সংঘের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলা থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আগের স্থানে মিলিত হয়। এর আগে এক প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন ছিল। প্রেমবঞ্চিত সংঘের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘কেউ পাবে, কেউ পাবে না, তা হবে না, তা হবে না’।
মিছিল শেষে নারীর প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিকে উদ্বুদ্ধ করে একটি গণস্বাক্ষর কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এছাড়া দুপুরে অনাথ ও দুস্থদের মাঝে খাদ্য বিতরণ কর্মসূচির আয়োজন করেন তারা।
সালমান শাকিল/আরএইচ/জেআইএম