১২ দিনে ১৮৬ সহপাঠীকে আড়াই লাখ টাকা দিলেন জবি শিক্ষার্থীরা
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে অনেক নিম্নআয়ের ও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের মতো সংকটে পড়েছেন ঢাকার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও। টিউশনি-নির্ভর বা পারিবারিকভাবে অসচ্ছল এমন শিক্ষার্থীরা পড়েছেন সবচেয়ে বেশি বিপাকে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন সংকটে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের সহপাঠীরা। ১২ দিনে তারা ১৮৬ জন শিক্ষার্থীর হাতে পৌঁছে দিয়েছেন দুই লাখ ৫২ হাজার ৫২০ টাকা।
গত ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া এ সহায়তা কার্যক্রম সামনে আরও গতিশীল হবে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার্থীদের এমন উদ্যোগের প্রশংসা করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
প্রচারের বাইরে অনেক শিক্ষার্থী ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে পরিচিত সহপাঠীকে কিছুটা সহায়তা করে আসছেন। এক হয়ে সহায়তার এ উদ্যোগের উদ্যোক্তারা হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাইসুল ইসলাম নয়ন, রসায়ন বিভাগের একই ব্যাচের শিক্ষার্থী জহির রায়হান, অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশনসের একাদশ ব্যাচের নাজমুল ইসলাম মুন্না, ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশনের দ্বাদশ ব্যাচের মাহমুদুল হাসান মিশু, পদার্থবিজ্ঞানের দ্বাদশ ব্যাচের তৌসিব মাহমুদ সোহান, স্বপ্নীল কনিক, নৃবিজ্ঞানের দ্বাদশ ব্যাচের আহসান জুবায়ের, পরিসংখ্যানের ত্রয়োদশ ব্যাচের আসসাইফ সুবর্ণ, ফার্মেসির ত্রয়োদশ ব্যাচের আবু বক্কর এবং মার্কের্টিং বিভাগের ত্রয়োদশ ব্যাচের মো. জহির উদ্দিন।
উদ্যোক্তারা জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির পরে লকডাউনে যখন সবাই ঘরবন্দী, তখন তারা অনলাইনে নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নেন। সবাই শিক্ষার্থী হওয়ায় কারও পক্ষে বড় অংকের অর্থ পাঠানো সম্ভব ছিল না। সেজন্য তারা একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন ‘করোনা মোকাবেলায় জবিয়ানের জন্য জবিয়ান’ নামে। তারপর নিজেদের টাইমলাইনে এবং গ্রুপে উন্মুক্ত পোস্ট করা হয় যারা সমস্যায় আছেন তাদের সমস্যা জানিয়ে ইনবক্সে লিখতে। এভাবে সমস্যাগ্রস্ত শিক্ষার্থীর তথ্য জেনে তার পরিচয় গোপন রেখে সাহায্যের আবেদন জানিয়ে ফেসবুক পোস্ট করা হয়। এর ভিত্তিতে কাঙ্ক্ষিত আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেলে নির্ধারিত নিয়মে ওই পোস্টটি ক্লোজ করে দেয়া হয়। এভাবেই গত ৫ এপ্রিল থেকে চলছে সহায়তা কার্যক্রম।
এছাড়া জবির সাবেক শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করছেন, বিশেষ করে প্রশাসন ক্যাডারে রয়েছেন, তাদের উদ্যোগেও সংকটে থাকা শিক্ষার্থীদের সহায়তা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিশেষ করে খাদ্য সংকটে থাকা জবি শিক্ষার্থীরা সমস্যার কথা জানিয়ে ইনবক্সে মেসেজ করলে তাদের নাম তালিকাভুক্ত করে পাঠানো হয় প্রশাসনের ওই কর্মকর্তাদের কাছে। তারপর পৌঁছে যায় প্রয়োজনীয় সহায়তা।
এ উদ্যোগের অন্যতম উদ্যোক্তা রাইসুল ইসলাম নয়ন বলেন, আমরা চাই সংকট শেষ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত এই কার্যক্রম চালু রাখতে। সেজন্য দরকার সাবেক কিংবা বর্তমান যাদের সামর্থ্য আছে তাদের সাহায্য। এই দুুর্দিনে আমরা আমাদের ভাই-বোনদের পাশে থাকতে পেরে আনন্দিত। আমাদের এই উদ্যোগের পর দেশের আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সাহায্যপ্রাপ্ত একজন ইনবক্স মেসেজে বলেন, আপনাদের উপহারের টাকায় বাজার হলো, এই কথা মনে থাকবে সারাজীবন।
উদ্যোক্তারা জানান, এই কার্যক্রমকে তারা ‘উপহার’ বলেন। তারা মনে করেন, এটা কোনো দান বা সাহায্য নয়, জবিয়ানদের জন্য জবিয়ানদের উপহার।
এইচএ/জেআইএম