ডাকসু ভিপির ওপর হামলার বর্ণনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর ফের হামলা চালিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। হামলায় অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছেন। রোববার বেলা পৌনে ১টার দিকে এ হামলা চালানো হয়। এতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন বলে জানা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে, মোবাইলফোন অপারেটর কোম্পানি গ্রামীণফোন কর্তৃক রাষ্ট্রপতিকে আইনি নোটিশ দেয়ার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন করে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশ। মানববন্ধন শেষে একটি মিছিল নিয়ে ডাকসু ভবনের দিকে যায় তারা। সেখানে বিনা উসকানিতে ডাকসু ভবনের দোতলার প্রবেশপথের জানালায় ইট-পাথর ছোড়ে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন মঞ্চের একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন।
দোতলা দিয়ে প্রবেশ করলে প্রথমেই ডাকসু ভিপির কার্যালয়। ভিপি কার্যালয়ে ভিপির সঙ্গে বসেছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতাকর্মীরা। ইট-পাথর মারার শব্দ শোনার পর বের আসেন ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কয়েকজন নেতাকর্মী। তাদের দেখে ওপরে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। প্রথমে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা চললেও পরে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা সংখ্যায় বেশি থাকায় তারা ভিপির কক্ষে ঢুকে পড়েন। সেখানে ঢুকে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হোসেনকে মেরে পা ভেঙে দেয় এবং ভেতরে থাকা নেতাকর্মীদের বেশ কয়েকজনকে মারধর করে আহত করে।
তারপর সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন যান। তখন পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা তাদের নেতাকর্মীদের শান্ত হতে বলেন।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস এবং সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন ভিপির কক্ষে যান। ভিপির কক্ষে গিয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ আশপাশের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীদের দেখতে পান। সেখানে সঞ্জিত কয়েকজনকে ধরে বলেন, সে শিবির, সে বহিরাগত। তারপর ভিপি সঞ্জিতকে বলেন, আপনি ডাকসুর কেউ না আপনি ডাকসুতে আসছেন কেন?
জবাবে সঞ্জিত বলেন, ‘আমি কে তা কিছুক্ষণ পরই বুঝবি। তখন সাদ্দাম ভিপিকে বলেন, নুর তুমি পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে যাও। এই বলে সঞ্জিত-সাদ্দাম রুম থেকে বের হয়ে আসেন। রুমের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঞ্জিত ‘মরে না এমন করে মারতে নির্দেশ দেন।’ আর সাদ্দাম নেতাকর্মীদের বলেন, ‘পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হয়ে আসো’। এরপর যদি তোমাদের কোনো সমস্যা হয় তা আমি দেখব না।”
এসব নির্দেশনা দিয়ে সাদ্দাম-সঞ্জিত বের হয়ে আসেন। আসার পর ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক মশিউর রহমানকে ওপর থেকে ধরে নিয়ে মারতে মারতে নিচে আসে। ডাকসুর কলাপসিবল গেট দিয়ে বের হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে নিচে ফেলে লাথি ও পা দিয়ে পিষতে থাকেন। তারপর ওপর থেকে এক এক করে প্রায় ১০-১৫ জনকে ধরে নিচে নিয়ে আসে আর কলাপসিবল গেট দিয়ে বের করেই ছাত্রলীগ ও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা উপর্যুপরি মারতে থাকেন। এতে আহতদের অনেকের মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ থেকে রক্ত বের হয় এবং অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে হামলা হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী দেড়টার দিকে ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি এসে অনেক চেষ্টা করে ডাকসুর ভিপির রুম থেকে ভিপিসহ কয়েকজনকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্স দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
হামলায় অংশ নেন যারা
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ একাংশের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আল মামুন, ঢাবি শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ ও সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্য, ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সাজু, এফ রহমান হল সংসদের জিএস রাহিম খান, এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী রাকিব, উচ্ছ্বল (চারুকলা), বিজয় একাত্তরের হল আবু ইউনুস, রবিউল হাসান রানা, সূর্যসেন হলের ভিপি মারিয়াম জামান খান সোহান, জিএস সিয়াম রহমান, ছাত্রলীগ নেতা আরিফুল ইসলাম, বঙ্গবন্ধু হল সংসদের জিএস শান্তসহ শতাধিক নেতাকর্মী।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, এখানে কোনো হামলা হয়নি। দুপক্ষের মারামারি হয়েছে। বহিরাগত ছিল তাদের মারছে। আজ বহিরাগতদের মারার পর চিকিৎসা প্রদান করা হয়েছে। সামনে পুলিশে দেয়া হবে। আবার এলে পিটিয়ে হাত-পা ভেঙে দেয়া হবে।
বিএ/জেআইএম