জাবি শিক্ষকের কুপ্রস্তাবের বর্ণনা দিলেন ছাত্রী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের এক ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে বিভাগটির এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী আত্মহত্যারও চেষ্টা করেছেন। ভুক্তভোগী ওই বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ছাত্রী। অভিযুক্ত শিক্ষক হলেন, সহকারী অধ্যাপক সানওয়ার সিরাজ।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী বিভাগীয় সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। তবে এর আগে বিভাগীয় সভাপতি বরাবর একই অভিযোগ করে কোনো প্রতিকার পাননি বলে অভিযোগ করেছেন ওই ছাত্রী।
এছাড়া গত ২৩ সেপ্টেম্বর রাতে ওই ছাত্রী ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠিরা। তারা বলেন, অতিরিক্ত ঘুমের ওষুধ সেবনের কারণে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা নেয়ার পর সে এখন শঙ্কামুক্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের ওই ছাত্রী গত ১৯ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে বিভাগীয় সভাপতির কাছে যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক নাসরিন সুলতানা।
তিনি বলেন, আমি অভিযোগপত্র পেয়ে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলে পাঠিয়ে দিয়েছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘যৌন নিপীড়নবিরোধী সেলের প্রধান অধ্যাপক রাশেদা আখতার বলেন, আমি অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। তদন্ত প্রক্রিয়াধীন। আর তদন্ত চলাকালীন সময়ে তদন্তের বিষয়ে কোনো কথা বলার এখতিয়ার আমাদের নেই। তবে তদন্ত শেষে আমরা সবকিছুই জানাব।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী ছাত্রী উল্লেখ করেন, তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় ওই শিক্ষকের কোর্সে (জিপি-৩০৩) কম নম্বর পাই। ওই কোর্সের মানোন্নয়ন পরীক্ষা দেয়ার জন্য আমি কোর্স শিক্ষকের শরণাপন্ন হই। এ ঘটনায় ওই শিক্ষকের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। এ সময় তিনি আমার মোবাইল নম্বর নিয়ে যে কোনো প্রয়োজনে আমাকে ফোন দিতে বলেন।
মানোন্নয়ন পরীক্ষার দিন রাতে (গত বছরের ১২ মার্চ) তিনি ফোন করে পরীক্ষার বিষয়ে জানতে চান। ওই রাতে তিনি আবারও ম্যাসেঞ্জারে যোগাযোগ করেন এবং আমার সঙ্গে ঘোরাফেরা করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। হঠাৎ শিক্ষকের এ ধরনের আচরণে আমি বিস্মিত হই। পরবর্তীতে আমি বিভাগে গিয়ে তার কাছে জানার চেষ্টা করি যে, তার ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছিল কি-না? কিন্তু তিনি নিশ্চিত করেন যে আইডি হ্যাক নয় বরং তিনিই এ ম্যাসেজ প্রদান করেছেন।
এ সময় ওই শিক্ষক আরও বলেন যে, আমার প্রতি তিনি তীব্র শারীরিক আকর্ষণ বোধ করেন, আমার সঙ্গে সময় কাটাতে চান, ঘুরতে চান। আমি ধারাবাহিকভাবে শিক্ষকের এমন আচরণে খুব বিব্রত ছিলাম। ফলে বারবার ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করছিলাম। কিন্তু তিনি রেগুলার আমাকে উত্ত্যক্ত করে যাচ্ছিলেন।
অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী আরও উল্লেখ করেন, আমি এ ঘটনার জন্য তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করার ইচ্ছা পোষণ করি। কিন্তু আসন্ন স্নাতকোত্তর পরীক্ষার কারণে অভিযাগ না দেয়ার জন্য অনেকে আমাকে পরামর্শ দেন। এ অবস্থায় আমি তার আচরণে হতাশ হয়ে পড়ি। পরবর্তীতে তিনি আমাকে আবারও কল করে ড্রেস গিফট করা, ঢাকা এবং সাভারের রেস্টেুরেন্টে খাওয়া, রাতে একসঙ্গে ঘুরতে যাওয়া এবং তার বাসায় যাওয়ার প্রস্তাব দেন। এ সময় তিনি আরও কিছু অশালীন কথাবার্তা ও কুপ্রস্তাব দেন। আমি তার ধারাবাহিক অত্যাচারে মানসিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং একাধিক ডাক্তার ও মনোবিজ্ঞানীর সাহায্য নিতে বাধ্য হই।
অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়, পরে সানোয়ার সিরাজের যৌন নিপীড়নমূলক কথাবার্তা, ফোনকল রেকর্ড ও ম্যাসেঞ্জারের চ্যাটের প্রমাণ বিভাগের তৎকালীন সভাপতি শামসুন্নাহার খানমের কাছে হস্তান্তর করি। কিন্তু এর কারণে পরবর্তীতে একটি অনুষ্ঠানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে আমার উপরে চড়াও হন শামসুন্নাহার খানম এবং তিনি আমার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের হুমকি দেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রী বলেন, মহিলা পরিষদের একটি অনুষ্ঠানে আমি এই হয়রানির কথা তৎকালীন সভাপতি সামসুন্নাহার খানমকে জানাই। কিন্তু এসব শুনে তিনি আমাকে বিভিন্নভাবে ‘থ্রেট’ করেন, যাতে বিভাগে লিখিত অভিযোগ না নিয়ে যাই। আমি পরে তাকে কিছু বিষয় শেয়ার করি। তিনি আমাকে সহানুভূতি জানিয়ে এসব ভুলে গিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে নজর দিতে বলেন। বিভাগীয় সভাপতি হিসেবে তিনি এসব গোপন রাখার কথা ছিল। কিন্তু এসব শিক্ষকদের মধ্যে ভাইরাল করে দেন।
এ অভিযোগের বিষয়ে বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক শামসুন্নাহার খানম বলেন, আমাকে কোনো ধরনের লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমার বিরুদ্ধে যা বলছে তা বানিয়ে বলছে। এসব মিথ্যা, বানোয়াট।
অভিযুক্ত সহকারী অধ্যাপক সানোয়ার সিরাজের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
ফারুক হোসেন/এমএএস/এমকেএইচ