ঢাবিতে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ, ক্ষোভ ইসলামী সংগঠনগুলোর
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। তবে ইসলামী ছাত্রসংগঠনগুলো এ নিয়ে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) ডাকসুর সভাকক্ষে ডাকসুর এক নির্বাহী সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
ডাকসুর সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এর আগে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অলিখিতভাবে ধর্মভিত্তিক মৌলবাদী ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। পরিবেশ পরিষদের সভায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী ইসলামী ছাত্রশিবির এবং সামরিক স্বৈরাচারের মদদপুষ্ট সংগঠন জাতীয় ছাত্র সমাজের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। আজ থেকে সব ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ।’
সভা সূত্রে জানা গেছে, ডাকসুর সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম শয়ন ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রস্তাব উত্থাপন করলে সব সদস্য সর্বসম্মতিক্রমে প্রস্তাবটি সমর্থন করেন। ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের সিদ্ধান্তের বিষয়ে ডাকসুর গঠনতন্ত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ও সিন্ডিকেটে যেন একটি ধারা সংযোজন করা হয়, সে ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়েছেন সদস্যরা।
সভা শেষে সাদ্দাম হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালরে প্রশাসনকে বলেছি, টাকার বিনিময়ে শিক্ষা এ ধরনের কোনো দর্শন ডাকসু বিশ্বাস করে না। আমরা চাই যে, সান্ধ্যকালীন কোর্সের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন পর্যালোচনার মাধ্যমে নতুন করে সিদ্ধান্তে আসুক এবং তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি কমিটি গঠন করেছে। ডাকসুর সদস্যরা মৌখিকভাবে প্রস্তাবটি দিয়েছেন। লিখিত আকারে আমরা জমা দেব।’
ডাকসুর জিএস গোলাম রাব্বানীকে নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি না জানতে চাইলে এজিএস সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘আমাদের এজেন্ডাভুক্ত বিষয়গুলোর মধ্যে আলোচনা সীমাবদ্ধ ছিল। ছাত্রলীগের প্যানেলের বাইরে অন্য দুটি পদে যারা ছিল, তারাও কোনো এজেন্ডা দেয়নি। তবে জিএস গোলাম রাব্বানী ব্যক্তিগত কারণে অনুপস্থিত ছিলেন। আর ভিপি নুরুল হক নুর সভা শেষ হওয়ার আগেই বিয়ের একটি অনুষ্ঠানের কথা বলে চলে গেছেন।’
এ বিষয়ে ভিপি নুরুল হক নুর বলেন, ‘যারা জালিয়াতি করে ভর্তি হয়ে ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রস্তাব করলে ছাত্রলীগ প্যানেলের প্রতিনিধিদের তোপের মুখে পড়ে আমি সভা থেকে বের হয়ে যাই। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন আমার নামে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন, আমি নাকি বিয়েতে অংশগ্রহণের কথা বলে সভা ত্যাগ করি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য।’
ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতির বিষয়ে নুরুল হক নুর বলেন, ‘ক্যাম্পাসে ধর্মভিত্তিক রাজনীতি আগেও নিষিদ্ধ ছিল, এখনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
ডাকসুর সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেহেতু একটি গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মূল্যবোধ ও চেতনার জায়গা, সুতরাং এখানে ধর্মভিত্তিক, সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার সুযোগ নেই। সেটি যেন কোনোক্রমেই অনুপ্রবেশ বা কর্মকাণ্ড পরিচালিত না হয়, সে বিষয়ে যেন সবাই যত্নশীল থাকে; সে জন্য ডাকসুর তরফ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কোরামে সেগুলো নিষিদ্ধ করে যেন আইনে পরিণত করা হয়, সেই দাবিও জানানো হয়েছে।’
ডাকসুর এ সিদ্ধান্ত সংবিধানবিরোধী : ইশা ছাত্র আন্দোলন
ডাকসুর ধর্মভিত্তিক ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের যে প্রস্তাব দিয়েছে তা সংবিধানবিরোধী বলে দাবি করেছেন ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন। এটিকে একটি অপরিণামদর্শী ও এখতিয়ারবহির্ভূত অতিউৎসাহী সিদ্ধান্ত অ্যাখ্যা দিয়ে তারা বলেন, এই অপরিণত সিদ্ধান্তকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা কখনোই মেনে নেবে না।
ইসলামী শাসনতন্ত্র ছাত্র আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সভাপতি শফিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হাসান এক যৌথ বিবৃতিতে এসব কথা উল্লেখ করেন।
বিবৃতিতে তারা বলেন, ডাকসুর এ সিদ্ধান্তগ্রহণ বাংলাদেশের সংবিধানবিরোধী একটি পদক্ষেপ। বাংলাদেশের সংবিধানের বিরুদ্ধে গিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার ডাকসুর নেই।
তারা আরও বলেন, ‘ধর্মভিত্তিক সংগঠন’ এই পরিভাষার কোনো সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। এই পরিভাষা ব্যবহার করে একটি পক্ষ ক্যাম্পাসে ইসলামী ছাত্ররাজনীতির নিষিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএ