ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদকের মাসিক বেতন ১৩ লাখের বেশি?
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রলীগের সম্পাদক রাকিবুল ইসলাম রাকিবের ৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের অডিও ক্লিপ ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এ অডিও ক্লিপ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। বৃহস্পতিবার জাগো নিউজে প্রকাশিত সংবাদটি শেয়ার করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অনেকে। এ তালিকায় রয়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতাকর্মীরা।
প্রকাশিত প্রতিবেদনে ছাত্রলীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এমন কেলেঙ্কারির ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন অনেকে।
ছাত্রলীগ কর্মী বিপু আহমেদ দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যে ছাত্রলীগের কর্মী হয়ে মাঠে নেমেছি, মিছিলে গেছি, শ্রদ্ধা-ভালোবাসা বুকে ধারণ করেছি- সেই ছাত্রলীগ আজ প্রশ্নবিদ্ধ। ছাত্রলীগ আজ কলঙ্কিত।’
ফাঁস হওয়া অডিওতে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হওয়ার নেপথ্যে অনেক কাঠখড় পোড়ানোর বিষয় উল্লেখ করেন রাকিব। কথা বলার একপর্যায়ে রাকিব অজ্ঞাত ব্যক্তির কাছে ইবি ছাত্রলীগের পূর্বের কমিটি ভাঙা, নতুন কমিটি গড়া ও প্রিন্ট-ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার খরচ বাবদ বিপুল পরিমাণ টাকা ব্যয়ের কথা বলেন।
এটিকে ছাত্রলীগের কলঙ্ক উল্লেখ করে বিলুপ্ত কমিটির সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বলেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট। সেই ইউনিটের কমিটি টাকার বিনিময়ে বিলুপ্ত করা এবং টাকার বিনিময়ে কমিটি করা খুবই দুঃখজনক। আশা করি সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এটির বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
তবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ছাত্রলীগ কর্মী রিজন আল হাসিব তুহিন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘৪০ লাখ টাকার উৎস কি ছিল? আর ছয় মাসে ৮০ লাখ টাকা কীভাবে ইনকাম হয়? জানতে ইচ্ছা করছে, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাকিবের মাসিক বেতন ১৩ লাখের বেশি?
সাহেদ সাঈফ নামে ছাত্রলীগের আরেক কর্মী লিখেছেন, ‘রাজনীতি না করে সবাই টাকা গোছাও আর বিনিয়োগ করো। ছয় মাসেই দ্বিগুণ। কি দরকার অন্য কাজের। আজ থেকে বিনিয়োগের একটা জায়গা ইবি।
পাশাপাশি ছাত্রলীগ কর্মী হিমেল চাকমা হতাশা প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘টাকা থাকলে আমিও মানবতার ফেরিওয়ালা হইতাম।’
‘কমিটির পদ পেতে যে ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে তা ছয় মাসেই ডাবল হয়ে যাবে’ অডিওতে বলেন রাকিব। এ নিয়ে লুৎফুল্লা পল্লব নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী লিখেছেন, ‘সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ব্যাংকের দিন শেষ। রাকিব ব্যাংকের বাংলাদেশ। দলে দলে টাকা রাখুন আর ছয় মাসে টাকা দ্বিগুণ করুন। বিফলে মূল্য ফেরত। টাকার গাছ রোপণ করলো ইবি ছাত্রলীগ। পাতায় পাতায়, শিরায় শিরায় টাকা। যত পাতা তার ডবল টাকা। মাত্র ছয় মাসে।’
এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে একের পর এক কেলেঙ্কারির অডিও ফাঁসের ঘটনাকে কটাক্ষ করে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়েছেন শিক্ষকরা।
পরিসংখ্যান বিভাগের সাবেক সভাপতি শিক্ষক আলতাফ হোসাইন লিখেছেন, ‘ইবিতে মনে হচ্ছে প্রতিযোগিতামূলক একটি অডিও শিল্প গড়ে উঠেছে। উৎসবমুখর পরিবেশে শিল্পটি এখন আন্তর্জাতিকীকরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছে।’
শিক্ষক আলতাফ হোসাইনের স্ট্যাটাসে তাহের মণ্ডল নামে এক শিক্ষার্থী মন্তব্য করেছেন, ‘আন্তর্জাতিকীকরণের জন্য অডিও শিল্প নামে ইবিতে একটি বিভাগ খোলার জোর দাবি জানাই।’
ক্ষোভ প্রকাশ করে ইবি শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ইবির পরিসংখ্যান বিভাগের সভাপতি ড. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘আমি একসময় ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম। আজকে ছাত্রলীগের বেহাল দশা দেখে মনটা খারাপ হয়ে গেল। নীতিনৈতিকতার এত অধঃপতন ঘটবে কেন।’
দীর্ঘ আট মাস কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর গত ১৪ জুলাই ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী এসএম রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের কমিটি দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
এর আগে গত বছরের ২৮ অক্টোবর থেকে সাবেক কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করে রাখা হয়। নতুন কমিটির বিরুদ্ধে প্রথম থেকে টাকার বিনিময়ে কমিটি দেয়ার অভিযোগ ছিল। দেড় মাস পার না হতেই এ সংক্রান্ত অডিও ফাঁসে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে কমিটি।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/এএম/পিআর