মধ্যরাতে চবি ছাত্রলীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত ৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ছাত্রলীগের ৫ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
রোববার (১ সেপ্টেম্বর) মধ্যরাতে এ ঘটনা ঘটে। বিবাদমান দুটি পক্ষ বিজয় ও সিএফসি গ্রুপ শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। বিজয় পক্ষের নেতৃত্বে আছেন সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এইচএম তারেকুল ইসলাম ও সিএফসি পক্ষে চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল।
জানা গেছে, মধ্য রাতে সোহরাওয়ার্দী হল থেকে এ সংঘাতের এ সূত্রপাত। যা পরে আলাওল ও এ এফ রহমান হলেও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চরে। পরে এক রাউন্ড গুলি বর্ষণের শব্দও শোনা যায় বলে জানা গেছে। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে এটি নিশ্চিত করা যায়নি।
এদিকে আহতদের মধ্যে রয়েছেন শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের মোহাম্মদ ইলিয়াস, সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক ও পরিসংখ্যান বিভাগের একই বর্ষের মাহফুজ আহমেদ, ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের ওবায়দুল হক, ভূগোল বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের প্রিয়ম রায় প্রান্ত, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের নিলয় হাসান। তারা সবাই বিজয় গ্রুপের নেতাকর্মী।
এদের মধ্যে ইলিয়াস চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তার মাথায় আঘাত রয়েছে বলে জানা গেছে। বাকিরা চবি মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জাগো নিউজকে জানান কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আতাউল গণি পারভেজ।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে সোহরাওয়ার্দী হলে সিএফসি গ্রুপের কর্মীরা উঠতে চাইছে। সম্প্রতি তারা হলে উঠলে এ নিয়ে বিজয় গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা কাজ করছিল। পরে শনিবার রাতে বিজয় গ্রুপের নেতা ও চবি ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস হলে আসলে এটি নিয়ে সিএফসির সাথে সমাধানের উদ্যোগ নেন। তবে ইলিয়াসের হলে আসাকে কেন্দ্র করে সিএফসি কর্মীদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
রাত ১২টার দিকে হলে উঠার বিষয়টি নিয়ে সিএফসি নেতাদের সাথে সুরাহা করতে গেলে ইলিয়াসের ওপর অতর্কিত হামলা চালায় সিএফসির কর্মীরা। এতে ইলিয়াস আহত হলে পরে তা দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ সময় ব্যাপক ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে বিজয় গ্রুপকে সোহওয়ার্দী হল থেকে বিতাড়িত করে আলাওল হলের দিকে সিএফসি গ্রুপ ধাওয়া দেয়। এ সময় সিএফসি গ্রুপ আলাওলের সামনে অবস্থান নিলে দুই পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই পক্ষের হাতেই ছিল দেশীয় অস্ত্র।
এদিকে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে ঘণ্টাব্যাপী চলা এ সংঘর্ষের সময় ক্যাম্পাসে ছিলেন না প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা। শহরে অবস্থান করায় তখন কেউই ঘটনাস্থলে আসতে পারেননি। তবে রাত ২টা ৪৫ মিনিটের দিকে প্রক্টরিয়াল বডির একটি গাড়ি আলাওল হলের দিকে যেতে দেখা যায়। এর আগে সংঘর্ষের সময় সোহরাওয়ার্দী হলের সামনে পুলিশের অবস্থান থাকলেও কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
এদিকে সংঘর্ষ চলাকালে রাতে মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর প্রণব মিত্র চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, আমি শহরে। তবে ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষের খবর শুনেছি। পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
পাঁচ নেতাকর্মীর ওপর হামলার ঘটনাকে পূর্ব পরিকল্পিত হিসেবে দেখছেন বিজয় গ্রুপের নেতা ও সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এইচ এম তারেকুল ইসলাম। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নির্দেশে এই অতর্কিত হামলা চালানো হয়। তাকে আমরা সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতে চেয়েছি। কিন্তু সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে রাজনীতি করার মন মানসিকতা তার নেই। তার মতো একজন অছাত্রের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের রাজনীতি কখনও সফল হবে না। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করছি এবং দ্রুত তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করার জন্য কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের কাছে দাবি জানাচ্ছি।
তবে পূর্ব পরিকল্পিত হামলার অভিযোগকে উড়িয়ে দিয়েছেন চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ইলিয়াস হিযবুত তাহেরীর সাথে যুক্ত এবং কিছু দিন আগে শাটল ট্রেনে পোস্টার লাগানোর কাজে যুক্ত ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময় অস্ত্র ঠেকিয়ে নেতাকর্মীদের হুমকি ধমকি দিতেন। রাতে হলে ছাত্রলীগ কর্মীদের অস্ত্র ঠেকালে তাকে প্রতিহত করেন। কমিটির শুরু থেকে তিনি ঝামেলা করে আসছেন। ইলিয়াস ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত না। তাকে আমরা দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।
আবদুল্লাহ রাকীব/এমএসএইচ