ছাত্রলীগের সম্মেলনে কর্মীর মৃত্যু, দায় কার?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের বার্ষিক সম্মেলনে এক কর্মীর মৃত্যুতে মর্মাহত হয়েছেন ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতাকর্মীরা। প্রচণ্ড গরমেও সকাল থেকে অন্য কর্মীদের মতো তিনিও স্লোগানে কম্পিত রেখেছিলেন ক্যাম্পাস। তবে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুর কাছে হেরে গেছেন। প্রশ্ন উঠেছে, এই মৃত্যুর জন্য দায়ী কে? ছাত্রলীগের সম্মেলন যথাসময়ে শুরু হলে কি এমন ঘটনা ঘটত? সম্মেলন বিকেলে দিলে কী হতো? এমন অনেক প্রশ্ন মনে জাগছে নেতাকর্মীদের মনে।
ছাত্রলীগের সাবেক ও বর্তমান নেতারা মনে করছেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক যথাসময়ে সম্মেলন শুরু করলে এমন ঘটনা না-ও ঘটতে পারত। তাদের দায়িত্বহীনতার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে মনে করেন তারা।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আসার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে ক্যাম্পাসে আসেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। এতক্ষণ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের সাবেক নেতারা দীর্ঘক্ষণ জবি উপাচার্যের কনফারেন্সরুমে বসে ছিলেন। প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গেলে আসাদুজ্জামান খান কামাল বক্তব্যের শুরুতে বলেন, আমিতো সময়মতো এসেছিলাম কিন্তু শোভন-রাব্বানী দেরি করেছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রলীগ কর্মীরা জানান, বেলা ১১টার সম্মেলন শুরু হয় বিকেল ৩টায়। প্রচণ্ড গরমেও সকাল থেকে স্লোগান দিতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। ফলে টানা ৭-৮ ঘণ্টার গরম সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন ওয়াসিসহ বেশ কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী। সঙ্গে-সঙ্গেই তাদের জবি ক্যাম্পাসের পাশেই ন্যাশনাল মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওয়াসিকে মৃত ঘোষণা করেন এবং অন্য কর্মীদের চিকিৎসা দেন।
এ বিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ‘এই বিষয়টা (ওয়াসির মৃত্যু) অনেক পীড়াদায়ক। সম্মেলন যথাসময়ে শুরু করতে না পারা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ব্যর্থতা। তারা যদি যথাসময়ে সম্মেলন শুরু করত তাহলে হয়তো এমন ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’
তিনি আরও বলেন, ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে এমনিতে জায়গার সংকট। প্রচণ্ড গরমের কথা বিবেচনা করে তাদের আরও আগে আসা উচিত ছিল। আশা করি, এরপর থেকে তারা দায়িত্বশীল হবেন।’
কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাহিত্য সম্পাদক মো. সাফায়েতুল্লাহ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী কোনো সম্মেলনে যথাসময়ে গিয়ে সম্মেলন শেষ করেন। তারাও (শোভন-রাব্বানী) বাংলাদেশ ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতা হওয়ায় তাদেরও সময়ের কাজ সময়ে করা উত্তম। আমি শুনেছি, তারা সাড়ে তিন ঘণ্টা পরে এসেছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যদি যথাসময়ে সম্মেলন শুরু করতে নাই পারবে তাহলে একদিন আগে ঘোষণা দিলেই হতো। তারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় না দিলে এমন ঘটনা না-ও ঘটতে পারত।’
উল্লেখ্য, প্রেমঘটিত বিষয়ে সংঘর্ষের জেরে তরিকুল-রাসেল কমিটি ১৯ ফেব্রুয়ারি কমিটি বিলুপ্ত করে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কমিটি বিলুপ্তির প্রায় ৬ মাস পরে সম্মেলন হয়েছে। শনিবার (২০ জুলাই) ছাত্রলীগের সম্মেলন চলাকালে অসুস্থ হয়ে সুলতান মো. ওয়াসি নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। তিনি ইংরেজি বিভাগে ১১তম ব্যাচের ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থী।
ইমরান খান/এসআর/এমএস