বাণিজ্যিক শিক্ষাব্যবস্থায় এগিয়ে চলেছে দেশ
‘প্রগতিশীল বিশ্বে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত থেকে সফলভাবে মানসিক মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের দেশটি শ্রেণি-বিভক্ত একটি রাষ্ট্র ও বাণিজ্যমুখি একটা শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তাই আজ প্রকৃত জ্ঞানের, মনুষ্যত্বের ও মানবিকতার মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা আবশ্যক।’
শনিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রয়াত শিক্ষক ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরী স্মরণে পঞ্চবিংশতম স্মারক বক্তৃতায় বক্তারা এসব কথা বলেন। স্মারক বক্তৃতাটি ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিনে ‘শিক্ষা ও শ্রেণি সম্পর্ক’ শীর্ষক বক্তৃতা প্রদান করেন হায়দার আকবর খান রনো। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ইফ্ফত আরা নাসরীন মজিদ। স্মারক বক্তা সম্পর্কে পরিচিতি তুলে ধরেন অধ্যাপক আহমদ কবীর। অনুষ্ঠান সঞ্চালন করেন রূপা চক্রবর্তী। এমিরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
স্মারক বক্তৃতায় হায়দার আকবর খান রনো রাষ্ট্র ও শ্রেণি সম্পর্ক বিষয়ে আন্তর্জাতিক ও দেশীয় প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে বলেন, প্রগতিশীল বিশ্বে রাষ্ট্র ব্যবস্থাপনা ও শিক্ষা ব্যবস্থাপনা পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত থেকে সফলভাবে মানসিক মুক্তি লাভ করেছে। কিন্তু আমাদের দেশ আজ শ্রেণি-বিভক্ত এবং বাণিজ্যমুখি এক রাষ্ট্র ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে চলেছে। তাই আজ প্রকৃত জ্ঞানের, মনুষ্যত্বের ও মানবিকতার মূল্যবোধ সম্পন্ন শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্রীয় পৃষ্টপোষকতা আবশ্যক।
তিনি বলেন, আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজে শিক্ষার নানা পর্যায়ে বৈষম্য রয়েছে। তাই শিক্ষা সংকোচন ও শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণের বিরুদ্ধে এবং সেক্যুলার, বৈজ্ঞানিক ও মানসম্মত শিক্ষার জন্য আজও আমাদের সংগ্রাম করতে হবে, তাহলেই অভিন্ন পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যসূচির ভিত্তিতে একই ধরনের শ্রেণি-বৈষম্যবিহীন শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব। আর তা সম্ভব হলে জনকল্যাণ ও মতাদর্শভিত্তিক রাষ্ট্র ও শ্রেণি বিভাজনমুক্ত শিক্ষার সুফল পাওয়া সম্ভব।
সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক প্রয়াত শিক্ষক ড. নাজমা জেসমিন চৌধুরীর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। প্রয়াত এই শিক্ষক নিজের যোগ্যতা ও ব্যক্তিত্ব দিয়ে খ্যাতিমান ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রকৃত মানুষ হওয়ার লক্ষ্যে কাজ করেছেন, শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও উদ্বুদ্ধ করেছেন, উজ্জ্বীবিত করেছেন। তাদের মতো ব্যক্তিত্বই মানব সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।
উপাচার্য স্মারক বক্তার বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়ে বলেন, হায়দার আকবর খান রনো একজন রাজনীতিবিদ হলেও তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে একজন প্রকৃত শিক্ষাবিদের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আমাদের রাষ্ট্র এবং শিক্ষা ব্যবস্থার মৌলিক সমস্যাকে চিহ্নিত করতে হবে। উপাচার্য হায়দার আকবর খান রনোর বক্তব্যকে উদ্ধৃত করে বলেন, বৈষম্যহীন, প্রগতিশীল, অসাম্প্রদায়িক ও বিভাজনহীন এক শিক্ষাব্যবস্থা আমরা চাই, যে শিক্ষাব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হবে ‘প্রকৃত মানুষ’ তৈরি করা।
পরিশেষে উপাচার্য বলেন, একবিংশ শতাব্দী জ্ঞানের শতাব্দী, শিক্ষার আলোয় আলোকিত করে দূরদৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হতাশা নয়, শিক্ষার আলোয় সঞ্চারিত করতে হবে আশাবাদ।
এমএইচ/বিএ