অসুস্থ মাকে বাঁচাতে গিয়ে তূর্যের চবিতে ভর্তির স্বপ্নভঙ্গ
মেধা তালিকায় স্থান পেয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছিলেন ময়মনসিংহের প্রমিত রাউত তূর্য। লালিত স্বপ্ন পূরণে নির্ধারিত সময়ে ডিন ও বিভাগের ফি জমা দেন। বাকি ছিল শুধু ভর্তি ফি জমা দেয়া। সেটি জমা দেয়ার শেষদিন ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অপেক্ষা করেন।
কিন্তু সেদিন বিভাগ থেকে ব্যাংকে কাগজ আসতে দেরি হচ্ছিল। এরই মধ্যে মায়ের ব্রেন টিউমার ধরা পড়ে- এমন খবর পেয়ে বাড়ির পথ ধরেন তূর্য। পরে ১০ ফেব্রুয়ারি ক্যাম্পাসে ফিরে ডিন অফিসে যোগাযোগ করলে তাকে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। দীর্ঘ চার মাস কর্তৃপক্ষের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও ভর্তি হতে না পেরে, তূর্যের চবিতে ভর্তির স্বপ্ন আজ হুমকির মুখে।
ডিন অফিস ও একাডেমিক শাখায় বারবার যোগাযোগ করেও ফল না পেয়ে শেষমেশ অনশনে বসেন তূর্য। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয় বাংলা ভাস্কর্যের সামনে বৃষ্টির মধ্যে অবস্থান নেন তিনি।
এ সময় ‘মা গর্ভে ধারণ করেছে, সে মাকে বাঁচাতে গিয়ে আজ আমার ছাত্রত্ব হুমকির মুখে, এই হয়রানির বিচার চাই’, ‘আমার এবং আমার পরিবারের স্বপ্ন আজ প্রশাসনের হাতে জিম্মি’, ‘আজ আমার ছাত্র ভাই-বোনেরা কোথায়? ছাত্র সমাজকে পাশে চাই।’ স্লোগান সংবলিত হাতে লেখা পোস্টার প্রদর্শন করেন তুর্য। পরে দুপুরের দিকে প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা এসে তাকে প্রক্টর কার্যালয়ে নিয়ে যান।
ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থী প্রমিত রাউত তুর্য জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় ২০৬৬তম হয়ে পরিসংখ্যান বিভাগে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছিলাম। বিভাগ ও ডিন অফিসের নির্ধারিত ফি সাড়ে তিন হাজার টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে এসআইএফ ফরম পূরণ করেছি। ৬ ফেব্রুয়ারি ভর্তি ফি পাঁচ হাজার ৭০ টাকা জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল।
‘ওইদিন বিভাগ থেকে ব্যাংকে কাগজ আসতে দেরি হচ্ছিল। এর মধ্যে আমার মায়ের ব্রেন টিউমার হয়েছে- এমন খবর পেলে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ জেলার ঈশ্বরগঞ্জে চলে যাই। এরপর ১০ ফেব্রুয়ারি এসে ডিন অফিসে যোগাযোগ করলে আমাকে ভর্তি করাতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। এরপর আমাকে ডিন অফিস থেকে একাডেমিক শাখায়, একাডেমিক শাখা থেকে ডিন অফিসে ঘুরানো হয় অনেকবার। আমি অনেক প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে অনশনে বসেছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর নিয়াজ মোর্শেদ রিপন জাগো নিউজকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা তাকে প্রক্টর অফিসে নিয়ে আসি। তার সমস্যা জানিতে চাই। বিষয়টি সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে।’
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সফিউল আলম জাগো নিউজকে জানান, ‘এ রকম খবর তিনি শোনেননি। এ সময় তিনি বলেন, ‘সবকিছুরই নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন রয়েছে। নির্ধারিত সময়ে ভর্তি না হলে অটোমেশন পদ্ধতিতে তা বাতিল হয়ে যায়। নিশ্চয় ওই শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ে ভর্তির কাজ সম্পন্ন করেনি। আর ভর্তি প্রক্রিয়ায় শেষ হয়ে গেছে।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (একাডেমিক শাখা) এসএম আকবর হোছাইন জাগো নিউজকে বলেন, ‘পরিসংখ্যান বিভাগের তিন শিক্ষার্থীর বিষয়ে শুনেছিলাম। দু’জন ভর্তি হয়েছে, কিন্তু ওই শিক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের পর যোগাযোগ করেনি। আর ভর্তি ফি জমা না দিলে অটোমেটিক ভর্তি বাতিল হয়ে যায়। এরপর অপেক্ষামান শিক্ষার্থীদের থেকে খালি আসনগুলো পূরণ হয়ে যায়। ওই শিক্ষার্থী সঠিক সময়ে যোগাযোগ করেনি।’
আবদুল্লাহ রাকীব/এমআরএম