ভিডিও EN
  1. Home/
  2. ক্যাম্পাস

নোবিপ্রবিতে নিয়োগ স্থগিত থাকলেও থেমে নেই যোগদান

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক | নোবিপ্রবি | প্রকাশিত: ০৩:৩৭ পিএম, ০১ মে ২০১৯

অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে থেমে নেই যোগদান। রোববার বিকেলে নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও তিন দিনে চাকরিতে যোগ দিয়েছেন ৪৫ জন। এমনকি এ নিয়ে ক্ষোভ দমাতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগসহ সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি গ্রুপকে ব্যবহার করার অভিযোগও উঠেছে উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বিরুদ্ধে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ সালের জুনে নোবিপ্রবির উপাচার্য হিসেবে যোগ দেন অধ্যাপক এম অহিদুজ্জামান। এরপর থেকে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে একাধিকবার তদন্ত কমিটিও করা হয়। ২০১৭ সালের ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) একটি তদন্ত কমিটি নোয়াখালীর সার্কিট হাউজে যায়। কিন্তু উপাচার্যপন্থী কর্মকর্তা ও বহিরাগত যুবকদের সশস্ত্র মহড়ায় ভীত হয়ে তারা তদন্ত না করেই ঢাকায় ফিরে আসেন।

সর্বশেষ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬০টি পদে নিয়োগ নিয়ে বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ৮ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত ও প্রমাণসহ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন।

আবেদনে বলা হয়, এম অহিদুজ্জামান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে এসব দুর্নীতি-অনিয়ম শুরু হয়। এরপর গত রোববার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের যুগ্ম সচিব সৈয়দ আলী রেজা স্বাক্ষরিত এক চিঠি পাঠানো হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ধরনের নিয়োগ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়া হয়। উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের পাশাপাশি ইউজিসি চেয়ারম্যানকেও দেয়া হয়েছে ওই চিঠি।

কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা জানান, নিয়োগ বন্ধে মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের খবর আগেই পৌঁছে যায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। এরপর শুরু হয় তোড়জোড়। চিঠি বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছার আগেই রোববার তড়িঘড়ি করে ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়োগপত্র দেয়া হয়। যাদের কেউ কেউ নিয়োগপত্র পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই যোগদান করেন। রোববার ৭ জন, সোমবার ৩৬ জন ছাড়াও গতকাল মঙ্গলবার দুই শিক্ষক যোগদান করেন। গতকাল প্রিয়াঙ্কা সাহা বৃষ্টি ও পিযুষ কান্তি কৃষি বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন। তবে তাদের সবার যোগদানের তারিখ ২৮ এপ্রিল লেখা হয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শুক্রবার গভীর রাত পর্যন্ত চাকরিপ্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়। আর নিয়োগ অনুমোদন দেয়া হয় পরের দিন শনিবার অনুষ্ঠিত রিজেন্ট বোর্ডের সভায়। এমনকি নিয়োগ নিশ্চিত করতে পদের সংখ্যার সমানসংখ্যক প্রার্থীর মৌখিক পরীক্ষা নেয়া হয়েছে। কৃষি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক পদে তিনটি পদের বিপরীতে ১৪ জন প্রার্থী আবেদন করেন। কিন্তু মৌখিক পরীক্ষায় তিনটি পদের বিপরীতে মাত্র তিনজনকেই ডাকা হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, নিয়োগ নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের ক্ষোভের মধ্যেই ছাত্রলীগকে দিয়ে নিজের পক্ষে সমাবেশ করিয়েছেন উপাচার্য।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শফিকুল ইসলাম রবিন বলেন, গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে সমাবেশের আয়োজক ছাত্রলীগ নয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুষ্ঠানে ছাত্রলীগ সংহতি প্রকাশ করেছে। জাপানভিত্তিক বৌদ্ধদের সংগঠন তকুরঞ্জি এশিয়ান বুদ্ধিস্ট পিস অ্যাওয়ার্ড-২০১৯-এর ‘দ্য ফ্রেন্ড অব হিউম্যানিটি’ পদক পেয়েছেন উপাচার্য। এ নিয়ে তাকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য সমাবেশটি করা হয়েছে। এতে বিভিন্ন বিভাগ থেকে শিক্ষার্থীরা ব্যানার নিয়ে যোগ দেন।

উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের বর্তমান মেয়াদ শেষে পুনরায় দ্বিতীয় মেয়াদে নিয়োগের দাবিও ওঠে সমাবেশ থেকে। পদকপ্রাপ্তিতে গতকাল মঙ্গলবারও শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উপাচার্যকে সংবর্ধনা দেয়।

নিয়োগ প্রক্রিয়ার বিষয়ে জানতে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম অহিদুজ্জামানের মুঠোফোনে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে যোগাযোগ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মমিনুল হক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম রিজেন্ট বোর্ডে ৫০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। রোববার সবাইকে নিয়োগপত্র দেয়া হলেও ওইদিন ৩৩ জন যোগদান করেন, বাকি ১৭ জন সোমবারে যোগদান করেন। মন্ত্রণালয়ের নিয়োগ স্থগিতের চিঠি পাওয়ার পর নতুন করে আর কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার মোহাম্মদ ফারুক উদ্দিন বলেন, সোমবার রেজিস্ট্রার অফিসের সামনে কয়েকজন যোগদান করতে আসেন। আমিও কয়েকজনকে আসতে দেখেছি। বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিক রেজিস্ট্রারকে জানিয়েছি, যাতে তাদের যোগদানপত্র গ্রহণ না করা হয়। কিন্তু পরে শুনেছি তারা যোগদান করেছেন। তবে তারা যোগদানপত্র জমা দিলেও এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন উপাচার্য।

আরএআর/এমকেএইচ

আরও পড়ুন