বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলন প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক। রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে গণমাধ্যমে ই-মেইলে পাঠিয়ে এ আহ্বান জানান তিনি।
ই-মেইল বার্তায় উপাচার্য বলেন, ‘গত ১৮ এপ্রিল “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার” ব্যানারে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতেগোনা ও চিহ্নিত কিছু শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী মানববন্ধন করে, যেখানে তারা আমার পদত্যাগ দাবি করে। ইতোপূর্বে চিহ্নিত কিছুসংখ্যক শিক্ষার্থীও একই দাবি করে আসছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ইচ্ছাতেই মহামান্য রাষ্ট্রপতি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে আমার এ নিয়োগ দিয়েছেন, যার মেয়াদকাল আগামী ২৭ মে শেষ হবে।’
তিনি বলেন, ‘গত তিন বছর ১০ মাসের অধিকাল ধরে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে অপেক্ষাকৃত নবীন এই বিদ্যাপীঠটিকে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমার মেয়াদকালের শেষ সময়ে একটি স্বার্থান্বেষী মহলের স্বার্থসিদ্ধির জন্য চিহ্নিত এই গােষ্ঠী আমার পদত্যাগের দাবিতে বিগত প্রায় এক মাস ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশদ্বারগুলোতে তালা লাগিয়ে অবৈধভাবে আন্দোলন করে আসছে। এই অহেতুক আন্দোলনের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহভাগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এ ধরনের পরিস্থিতির অবসান চায় বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।’
বিতর্কিত বক্তব্য প্রসঙ্গে উপাচার্য বলেন, ‘যারা মহান স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ড করার উদ্যোগ নিয়েছিল, তাদের উদ্দেশেই আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। সেই বক্তব্যে কেউ আহত হয়ে থাকলে তাদের উদ্দেশে দুঃখ প্রকাশও করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি, কোনো এক অদৃশ্য ও অশুভ শক্তির প্রয়াসে এতদূর গড়িয়েছে। দুঃখ প্রকাশের পরও কেন এই আন্দোলন চলছে? কেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাজীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে?’
‘এই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছাত্র-শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের ৫ শতাংশের বেশি হবে না। এরা কার স্বার্থ হাসিল করার জন্য এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বাকি ৯৫ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংস করার জন্য নেমেছে-এটি আমার প্রশ্ন।’
শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, ‘প্রিয় শিক্ষার্থীদের কাছে আমার আবেদন, পরবর্তী কর্মদিবসে তোমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে আস, তোমাদের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে ক্লাসে চলে যাও। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে তোমাদের শিক্ষাজীবন জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না।’
বরিশালের বিদ্যোৎসাহী, শিক্ষানুরাগী, মুক্তিযােদ্ধা, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিশিষ্টজনদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘কারও ব্যক্তিগত স্বার্থ চরিতার্থে দক্ষিণবঙ্গের আলােকবর্তিকা বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিতে দেবেন না। আপনাদের বলিষ্ঠ উদ্যোগে অচলায়তন ভেঙে খুব শিগগির কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হবে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস-এটাই আমার একান্ত প্রত্যাশা। একজন শিক্ষক হিসেবে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এহেন অবস্থা আমার জন্য কষ্টদায়ক। যেভাবেই হোক, ২৭ মে’র পর ব্যক্তি ইমামুল হক বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকবেন না।’
সাইফ আমীন/এসআর/এমকেএইচ