জবি শিক্ষার্থীদের হাতে মাদক দিচ্ছেন কারা?
>> মাদক ব্যবসায়ীদের বেশিরভাগ পুরান ঢাকার বাসিন্দা
>> বিভিন্ন বেশে ক্যাম্পাসে মাদক পৌঁছে দেন তারা
>> প্রশাসনের পদক্ষেপ যথাযথ নয়
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) ক্যাম্পাসে নিয়মিত বসে মাদকসেবীদের আড্ডা। সন্ধ্যার পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চলে মাদকগ্রহণ। ক্যাম্পাসের একাধিক জায়গা ঘুরে মাদকাসক্তদের মাদক গ্রহণ করতে দেখা গেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, মাদকাসক্তদের বড় একটি অংশ মাদকের টাকা জোগাড় করতে বিভিন্ন ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ছিনতাই ও চুরির মতো ঘটনা। তারা শিক্ষার্থীদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা ছিনতাই করছেন। এমনকি পথচারীকে রাতের অন্ধকারে ক্যাম্পাসে ধরে আনেন মাদকসেবীরা। এরপর তার কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নেন।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে প্রশাসনের পদক্ষেপ যথাযথ নয়। যদিও মাঝে মাঝেই ক্যাম্পাসে মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় প্রশাসন।
কিন্তু দেখা গেছে, এসব অভিযানের পর কিছুদিন বন্ধ থাকে মাদকের আড্ডা। এরপর আবার শুরু হয়।
যেসব পয়েন্ট বসে মাদকের আড্ডা
এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক পয়েন্টে মাদকের আড্ডা বসে। এর মধ্যে নতুন ভবনের বেজমেন্ট (জিরো পয়েন্ট) থেকে শুরু করে ক্যান্টিন, পাটুয়াটুলী গেট, সামাজিক বিজ্ঞান চত্বর, রেভেনাস ক্যান্টিন, নির্মাণাধীন ছাত্রী হল, দ্বিতীয় গেটের বাসস্ট্যান্ড, লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাদ, পোগোজ স্কুল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ফুটওভার ব্রিজেও চলে মাদকের আড্ডা।
দিনের বেলা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাখা বাসগুলোতে চলে অবাধে মাদক গ্রহণ। বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে এবং মূল গেটের পাশে রাখা বাসগুলোতে কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়মিত গাঁজা সেবন করতে দেখা যায়। সন্ধ্যার পর থেকে চলে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন ও ইয়াবাসহ বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন।
শিক্ষার্থীদের হাতে কারা দিচ্ছেন মাদক?
অনুসন্ধানে জানা যায়, মাদকাসক্তদের একটি বড় অংশই ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের কর্মী।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি না থাকলেও পদপ্রত্যাশী বিভিন্ন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় চলছে মাদকের কারবার।
তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পুরান ঢাকার স্থানীয় কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ী ছাত্রদের হাতে মাদক ছড়িয়ে দেন। মূলত তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের মাদক ব্যবসার সিন্ডিকেটগুলো পরিচালনা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ফুটওভার ব্রিজেও পাওয়া যায় নেশাজাতীয় দব্য। পরিচিত ক্রেতা ছাড়া সবার কাছে তারা মাদক বিক্রি করেন না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও প্রত্যক্ষভাবে মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। মাদকসেবীদের কাছে মাদকদ্রব্য পৌঁছে দেন তারা।
মাদক ব্যবসায়ীরা কোথাকার?
মাদক ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বেশিরভাগ পুরান ঢাকার বাসিন্দা। এ চক্রের সদস্যরা ধোলাইখাল, সূত্রাপুর, নয়াবাজার, নবাবপুর রোড, আরমানিটোলা মাঠ, চানখাঁরপুল, কেরানীগঞ্জ, ধূপখোলা মাঠের আশপাশে থাকেন। প্রয়োজনমতো তারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিভিন্ন বেশ ধরে প্রবেশ করে মাদক পৌঁছে দেন। মাদক ব্যবসায়ীরা শুধু চিহ্নিত মাদকসেবীদের কাছেই মাদকদ্রব্য বিক্রি করেন। অপরিচিত কোনো ব্যক্তির কাছে তারা সহজে মাদক বিক্রি করেন না। তাদের সঙ্গে মাদকসেবীদের রয়েছে আলাদা সখ্যতা।
যে কারণে কমছে না মাদকের আড্ডা
বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন সাধারণ শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের ধারাবাহিক অভিযান না থাকার কারণে মাদকাসক্তের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাদকাসক্তদের কারণে ক্যাম্পাসে নিয়মিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, হল না থাকার কারণে আমরা বন্ধুদের সঙ্গে ক্যাম্পাসে পড়াশোনা করতে আসি। কিন্তু সন্ধ্যার পর থেকেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় নিয়মিত বসে গাঁজার আড্ডা। বিশেষ করে যেসব জায়গায় পড়াশোনা করা যায়, তার পাশেই বসে গাঁজার আসর।
কঠোর ব্যবস্থা নেব : প্রশাসন
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবির সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবরই কঠোর। কোনো শিক্ষার্থীকে মাদক গ্রহণ করতে দেখা গেলে আমরা তাকে পুলিশে সোপর্দ করব। বাসগুলোতে কোনো শিক্ষার্থীকে দিনের বেলায় মাদক সেবন করতে দেখলে আমাদের জানালে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেব।
ইমরান খান/জেডএ/জেআইএম
আরও পড়ুন
সর্বশেষ - ক্যাম্পাস
- ১ ৩ দিনব্যাপী ‘সংসক্তি সংঘট্ট: সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ’ শুরু শুক্রবার
- ২ রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল চেয়ে আমরণ অনশনে ছয় শিক্ষার্থী
- ৩ জাবির ভর্তি পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে মানববন্ধন
- ৪ ঢাবিতে ‘গ্লোবাল মিডিয়া অ্যান্ড ইনফরমেশন লিটারেসি সপ্তাহ’ উদযাপন
- ৫ ঢাবি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি কেমন হবে নির্ধারণে বিশেষ কমিটি