ভর্তিতে অসহযোগিতা, বেরোবি ছাড়ছেন সোমালিয়ান শিক্ষার্থীরা
পাঁচ মাস আগে সোমালিয়া থেকে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ভর্তি হতে এসে এখনও ভর্তি কার্যক্রম শেষ করতে পারেননি ভর্তিচ্ছু চার শিক্ষার্থী। প্রশাসনের চরম অসহযোগিতায় ভর্তি বিলম্ব ও বাসস্থানের অব্যবস্থাপনায় তারা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়ছেন।
সোমালিয়ান শিক্ষার্থীরা জানান, স্কলারশিপ হিসেবে টিউশন ফি এবং আবাসিক সুবিধার শর্তে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক পর্যায়ে তিন শিক্ষার্থী এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে এক শিক্ষার্থী প্রায় পাঁচ মাস আগে ভর্তি হতে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সরকারের অনুমতিতে স্কলারশিপের মাধ্যমে প্রথমবারের মত বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সে অনুযায়ী প্রায় পাঁচ মাস আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ তাদের সাক্ষাৎকার নেন। গত ৩ মার্চ থেকে ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলেও এখনো শেষ হয়নি বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তি প্রক্রিয়া। বাসস্থান নিয়েও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মধ্যে।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ১০১ নম্বর কক্ষে প্রায় পাঁচ মাস ধরে অবস্থান করছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, কক্ষটির দেয়ালে ড্যামেজ হয়ে চুন খসে পড়ছে ও স্যাঁতস্যাঁতে ভাব। কক্ষটির পাশেই অপরিচ্ছন্ন বাথরুম, আরেক পাশে ড্রেনের নোংরা আবর্জনা। ফলে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশেই থাকতে হচ্ছে তাদের ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হলটির প্রাধ্যক্ষ তাবিউর রহমান প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, তাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়ার তাদের পৃথক থাকার ব্যবস্থা করা হয়নি। মানবিক দিক বিবেচনায় কেবল থাকতে দেয়া হচ্ছে। কক্ষ যথেষ্ট পরিচ্ছন্ন।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে বিদেশি চার শিক্ষার্থীর মধ্যে। ভর্তি বিষয়ে কেউ তাদের সহযোগিতা করছে না বলেও অভিযোগ তাদের।
সোমালিয়ান শিক্ষার্থী আহমেদ মুহাম্মদ বলেন, গত সপ্তাহে আমি উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি স্কলারশিপের ব্যাপারে কিছুই করতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। অথচ আমাদের স্কলারশিপসহ পড়াশোনা করার সুযোগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এখানে আনা হয়েছে। গত ৫ মাসেও আমাদের ভর্তি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের চরম অসহযোগিতা ভর্তি বিলম্ব এবং বাসস্থানের চরম অব্যবস্থাপনায় রমজানের পরেই দেশে ফিরে যাওয়ার বা অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ নিয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে সুযোগ পেলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আগ্রহী বলে তিনি জানান। রংপুরের মানুষ এবং সার্বিক পরিবেশ নিয়ে তারা খুবই খুশি বলেও জানান।
এ বিষয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ও কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব আবু হেনা মুস্তাফা কামাল জাগো নিউজকে বলেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির বিষয়টি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল ও অনুষদগুলোর সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
তবে উপাচার্যের বরাত দিয়ে তার একান্ত সচিব মো. আমিনুর রহমান বলেন, উপাচার্য বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্লাসে অংশ নিতে বলেছেন। কেউ কেউ অংশও নিচ্ছেন। তবে বিদেশি শিক্ষার্থী হওয়ায় তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই-বাছাইয়ে একটু সময় লাগছে।
সজীব হোসাইন/আরএআর/পিআর