মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে
চৈত্রের শেষ সময়। প্রকৃতির আচরণ বোঝা বড় দায়। কখনো তপ্ত রোদ। আবার কখনোবা আকাশ কালো করে নেমে আসছে ঝুম বৃষ্টি। মৌসুমি ঝড়ে কখনোবা লন্ডভন্ড করে যাচ্ছে চারদিক। এ যেন জরাজীর্ণতাকে মুছে ফেলার শেষ আয়োজন।
আসছে বৈশাখে নতুন করে সাজবে প্রকৃতি। গাইবে প্রেমের গান। সেই গানে প্রেমময় হবে গোটা পৃথিবী। দূর হবে সকল অনাচার, দুঃখ, গ্লানি, হতাশা। অপশক্তিকে রুখে দিয়ে পৃথিবী সাজবে নতুন করে। মাথা উঁচু করে সাম্যের গান গাইবে মনুষ্যজাত। তাইতো বাংলা নববর্ষ-১৪২৬-এর মঙ্গল শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যও ঠিক করা হয়েছে সে বিষয়টি মাথায় রেখে- ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’।
আগামী শনিবার (১৪ এপ্রিল) বাংলা নববর্ষ ১৪২৬-পহেলা বৈশাখ। দিবসটিকে বরণ করতে বাঙালির প্রতি বছরই থাকে নানা আয়োজন। তার মধ্যে অন্যতম মঙ্গল শোভাযাত্রা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হওয়া এ শোভাযাত্রায় গুরুত্ব পায় জাতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠা সমসাময়িক নানা অসঙ্গতি। সে অনুযায়ী তৈরি করা হয় বিভিন্ন মোটিফ, মুখোশ, মাটির তৈরি পুতুলসহ নানা শিল্পকর্ম। এসব শিল্পকর্ম তৈরিতে চারুকলার শিক্ষার্থীরা চৈত্র মাসে পার করেন ব্যস্ত সময়। কারণ এসব বিক্রি করে পাওয়া অর্থইতো জোগান দেয় মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনের।
বরাবরের মতো এবারো চারুকলার সিনিয়র ব্যাচ মঙ্গল শোভাযাত্রার কাজের নেতৃত্ব দিচ্ছে। জানতে চাইলে আহ্বায়ক তন্ময় দেব নাথ বলেন, ‘আমাদের প্রস্তুতি চলছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া আছে। আমরা একটার পর একটা শেষ করছি। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ শেষ করতে পারব।’
রোববার (৭ এপ্রিল) চারুকলায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের ব্যস্ততার দৃশ্য চোখে পড়ে। ভেতরে হাতুড়ি পেরেকের ঠুকঠাক শব্দ। চলছে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে নানা রকমের মোটিফ তৈরি থেকে শুরু করে ছবি আঁকা, সরা, পুতুল, ভাস্কর্য তৈরির কাজ। সেগুলোকে শিল্পর তুঁলিতে শেষ আঁচড় দিচ্ছেন কেউ কেউ। আবার নিজেদের তৈরি এসব শিল্পকর্ম নিয়ে একদম সম্মুখ গেটে পসরা সাজিয়ে বসেছেন কয়েকজন। দেয়ালেও শোভা পাচ্ছে এসব শিল্পকর্ম। আসা দর্শনার্থীরা দেখছেন-পছন্দ হলেই কিনে ঘরে ফিরছেন।
আয়োজকরা জানান, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রার পুরোভাগে থাকবে মহিষ, পাখি ও ছানা, হাতি, মাছ, বক, জাল ও জেলে, ট্যাপা পুতুল, মা ও শিশু এবং গরুর আটটি শিল্পকাঠামো। এ ছাড়াও রয়েছে পেইন্টিং, মাটির তৈরি সরা, মুখোশ, রাজা-রানির মুখোশ, সূর্য, ভট, লকেট ইত্যাদি।
চারুকলার সামনের গেট দিয়ে সামনে এগোতে দেখা যায়, বিক্রির জন্য বিভিন্ন রকমের তৈরি শিল্পকর্ম সাজিয়ে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। এর পশ্চিম পাশে কক্ষের ভেতরে-বাইরে চলছে চিত্রকর্ম, মুখোশ, ফুল, ট্যাপা পুতুল, সরাসহ হরেক রকমের শিল্পকর্ম তৈরির কাজ। অন্যদিকে জয়নুল গ্যালারির দক্ষিণ পাশে শিক্ষার্থীরা বাঁশের কঞ্চি ও কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন বিভিন্ন ধরনের মোটিফ। স্ট্রাকচার তৈরির কাজ শেষ হলে সেখানে কাগজ পেঁছিয়ে দেয়া হবে রঙের আস্তরণ।
শিক্ষার্থীরা নিজেদের তৈরি শিল্পকর্ম বিক্রি করেই মঙ্গল শোভাযাত্রার অর্থের জোগান দিচ্ছে। শিক্ষার্থীরা জনান, এক হাজার টাকা থেকে শুরু করে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত দামের মুখোশ রয়েছে। তবে বড় রাজা-রানির মুখোশের দাম আরও অনেক বেশি। এ ছাড়া বড় সরাচিত্র ৫০০-১০০০ টাকা, ছোট সরাচিত্র ২০০-৫০০ টাকা, বাঘ ও পেঁচা ১০০০-১৫০০ টাকা, পাখির ট্যাপা পুতুল ১০০-৩০০ টাকা, পেপার ম্যাশ ৫-১০ হাজার টাকা, ফুল ১০০-২০০ টাকা, চিত্রকর্ম ১৫০০-৫০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী অদ্রিয়ন্তী রায় উর্মি বলেন, ‘আমাদের বিভিন্ন স্ট্রাকচার তৈরির কাজ চলছে। আশা করছি, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের তৈরি বিভিন্ন শিল্পকর্ম ইতোমধ্যে আমরা এখানে পসরা সাজিয়েছি। দর্শনার্থীরাও আসছেন। পছন্দ হলে কিনে নিচ্ছেন। আশা করছি, এবারের মঙ্গল শোভাযাত্রা অন্য যে কোনোবারের থেকে আরও বেশি সুন্দর হবে।’
এমএইচ/এসআর/এমকেএইচ