যৌন নিপীড়নের অডিও ভাইরাল, সেই শিক্ষককে অব্যাহতি
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) শিক্ষক কর্তৃক ছাত্রী যৌন নিপীড়নের ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
একই সঙ্গে অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাস আলীকে বিভাগীয় প্রধানের পদসহ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. নূর উদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। রোববার শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুর রহিম খানকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রভোস্ট বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী আধ্যাপক ঈশিতা রায়, অ্যাপ্লাইড কেমিস্ট্রি অ্যান্ড কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ড. কামরুজ্জামান ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক ড. বশিরউদ্দিন। কমিটিকে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
এদিকে, রোববার সকাল থেকে অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আক্কাস আলীকে চাকরিচ্যুত ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আজীবন বহিষ্কারসহ পাঁচ দফা দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশ করেন। এ সময় দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।
শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- ভুক্তভোগী ছাত্রীদের যাতে আর কোনো হয়রানি না করা হয় তার নিশ্চয়তা দেয়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষক ছাত্রীদের কার্যদিবস ব্যতীত অফিস ছাড়া অন্য কোথাও ডাকতে পারবেন না, কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো শিক্ষক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তের হুমকি দিতে পারবেন না, এরকম অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং বিভাগভিত্তিক ছাত্র সংসদ নির্বাচন দিতে হবে।
এর আগে নিপীড়নের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থবর্ষের এক ছাত্রী একই বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারিত হয়। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শুরু হয় প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড়। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পায় কর্তৃপক্ষ। ফলে শুক্র ও শনিবার কোনো ছাত্রীকে ডাকতে পারবেন না অভিযুক্ত শিক্ষক এবং কোনো ছাত্রীকে থিসিস করাতে পারবেন না বলে সিদ্ধান্ত দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তকে হাস্যকর ও প্রহসনমূলক আখ্যা দিয়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। সেই সঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুত ও শাস্তির দাবি জানানো হয়।
এরই মধ্যে শনিবার ওই শিক্ষক কর্তৃক দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে তোলপাড় শুরু হয়। ক্যাম্পাসজুড়ে সৃষ্টি হয় চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা।
রোবাবার সকাল থেকে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরিচ্যুতসহ পাচঁ দফা দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে করেন তারা। ফলে গোটা ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে।
বেলা আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি গঠনসহ যাবতীয় প্রশাসনিক কার্যক্রম থেকে ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দিয়ে ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিলে আন্দোলন প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
এস এম হুমায়ূন কবীর/এএম/পিআর