প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থীকে আটকে দিল ছাত্রলীগ
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) শিক্ষক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা দিতে এসে ছাত্রলীগের মারধরের শিকার প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী এমদাদুল হক এবার আদালতে মামলা করেছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০০৮-২০০৯ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র এমদাদুল হক ২০১৫ সালে স্নাতক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ফলাফল অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক পান।
মূলত হাটহাজারী থানায় মামলা না নেয়ায় ভুক্তভোগী এমদাদুল রোববার (৩১ মার্চ) চট্টগ্রামের মুখ্য বিচারিক হাকিম কামরুন্নাহার রুমীর আদালতে মামলাটি দায়ের করেন।
মামলার আসামিরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের আনোয়ার হোসেন, একই বিভাগের আসিফ মাহমুদ শুভ, মোকসেদ আলী ওরফে মীলু প্রামাণিক, একই বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের জাহিদুল হাসান, রফিকুল ইসলাম, একই বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের আসির উদ্দিন ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শরিফ উদ্দিন। এছাড়া এই মামলায় আসামি হিসেবে আরও ৫-৬ জনকে অজ্ঞাতনামা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
এদিকে আদালত অভিযোগটি গ্রহণ করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের নির্দেশ দেন।
জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করে মামলার বাদীর আইনজীবী মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘তুলে নিয়ে মারধর, চাঁদাবাজি, হুমকি, পকেট থেকে টাকা-মোবাইল ছিনিয়ে নেয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের হয়েছে। আদালত পিবিআইকে তদন্ত করে ১৬ মে’র মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।’
তিনি আরও জানান, ‘মামলায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১৪৩, ৩২৩, ৩৭৯, ৩৮৫, ৩৪১, ৩৬৩, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।’
মামলার বাদী এমদাদুল বলেন, ২০১৭ সালের ১৮ অক্টোবর পত্রিকায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রভাষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় মৌখিক পরীক্ষা দেয়ার কথা জানানো হয়। গত ২৭ মার্চ মৌখিক পরীক্ষা দিতে প্রশাসনিক ভবনের সামনে গেলে মামলায় অভিযুক্তদের সঙ্গে তার দেখা হয়। এ সময় অভিযুক্ত আনোয়ার হোসেন ও মোকসেদ আলী নিজেরাই এগিয়ে এসে এমদাদুলের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
কথোপকথনের একপর্যায়ে আনোয়ার এমদাদুলকে নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ না নিতে চাপ দেন। এমদাদুল কারণ জানতে চাইলে আনোয়ার বলেন, ‘আপনি তো আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পরীক্ষা দিতে আসেননি। এখানে যারা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে আসছে প্রত্যেকেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আসছে। ছোট ভাইদের কিছু আর্থিক দাবি-দাওয়া আছে, তা আপনাকে মেটাতে হবে। তা না হলে আপনি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।’
এ সময় এমদাদুল কোনো দাবি মানতে অস্বীকৃতি জানালে সেখানেই তাকে মারধর শুরু করে এবং পরণের শার্ট ছিঁড়ে ফেলে। পরে পকেট থেকে দু’টি মোবাইল ফোন ও ৫ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এমদাদুল দৌড়ে ওই স্থান ত্যাগ করতে চাইলে তাকে ধাওয়া দিয়ে ধরে ফেলে আনোয়ার ও জাহিদুল। এরপর কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিয়ে গিয়ে অভিযুক্ত সবাই মিলে তাকে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ এমদাদুলের।
শুধু তাই নয়, মারধরের পর তাকে শিবির আখ্যা দিয়ে হাটহাজারী থানা পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়। পরে ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত থানা হাজতে আটকে রাখার পর কোনো ধরনের শিবির সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় এমদাদুলকে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
এমদাদুল বলেন, ‘আমি কখনোই শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলাম না। শুধু শুধু অপবাদ দিয়ে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। তারা আমাকে নিয়োগ পরীক্ষায়ও অংশ নিতে দেয়নি। তাদের জন্য আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন ভেঙে গেছে। আমি এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।’
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ দুপুরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান অনুষদের সামনে থেকে শিবির কর্মী সন্দেহে এমদাদুল হককে তুলে নিয়ে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে নিয়ে মারধর করা হয়।
আবদুল্লাহ রাকীব/এফএ/এমকেএইচ