এক কমিটিতে ইবি ছাত্রদলের ১০ বছর পার
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রদলের দুই বছর মেয়াদি কমিটির বয়স এখন ১০ বছর। নেতৃত্বের অভাবে কোনোমতে খুঁড়িয়ে চলছে এ সংগঠনটি। ৮ বছর আগেই মেয়াদ শেষ করা বর্তমান কমিটির কোনো নেতারই নেই ছাত্রত্ব। ক্যাম্পাসে নেই তাদের কোনো কার্যক্রম। এমনকি ক্যাম্পাসে কোনো নেতার উপস্থিতিও চোখে পড়ে না। কালেভদ্রে দু-একজন নেতা একাডেমিক কাজে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেও ছাত্রলীগের ভয়ে অতিদ্রুত সটকে পড়েন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৮ নভেম্বর ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে ছাত্রদল একটি ঝটিকা মিছিল বের করলে ছাত্রলীগ তাদের ধাওয়া দেয়। এরপর থেকে তারা কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ফিরেনি। ১০ বছরের পুরোনো নেতাদের কর্মসূচিতে অনাগ্রহের কারণেই দলটির আজ এই অবস্থা বলে দাবি কর্মীদের। নতুন কমিটি হলে সংগঠনটি আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।
ছাত্রদল কর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী রকি বলেন, আজ ছাত্রদলের এই পরিনতির জন্য বর্তমান কমিটি সম্পূর্ণরূপে দায়ী। নতুন কমিটি আসলে তাদের নেতৃত্বে আবারও ক্যাম্পাসে আমরা নিয়মিত স্বাভাবিক কার্যক্রম চালাতে পারব।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালের ১৭ মার্চ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের কমিটি অনুমোদন দেয় তৎকালীন কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে আইন বিভাগের ২০০৩-০৪ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ওমর ফারুককে সভাপতি এবং ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র রাশেদুল ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছরের জন্য সাত সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অুনমোদন দেয়া হয়। কমিটি ঘোষণার ৩ মাস পরেই ১১১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি করে কেন্দ্রের অনুমোদন নেয় তারা। তবে দুই বছরের কমিটি অতিক্রম করেছে ৯ বছর। গত ১৮ মার্চ ১০ বছরে পদার্পণ করেছে কমিটি।
এখন ১০ বছরের পুরনো নেতায় চলছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল। অনুমোদন পাওয়া ১১১ সদস্যের ৯৯ শতাংশ নেতার ছাত্রত্ব শেষ হয়েছে অনেক আগেই। দু-চারজন বারবার ফেল করে নেতা হওয়ার ইচ্ছায় এখনো কোনোমতে ছাত্রত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। অধিকাংশ নেতা বিয়ে করে সংসার করছেন। একই সঙ্গে তারা জীবিকার তাগিদে চাকরি-ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। সংগঠনকে সময় ও শ্রম দেয়া তাদের জন্য কষ্টসাধ্য।
ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দীর্ঘদিন পদপ্রত্যাশী নেতারা কেন্দ্রে নতুন কমিটির জন্য জোর লবিং চালিয়েও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েছেন। শেষে তারা হতাশা থেকে নতুন কমিটির হাল ছেড়ে দিয়েছেন।
তাদের দাবি, বর্তমান কমিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে দেশের প্রায় সকল শাখায় নতুন কমিটি অনুমোদন দেয়। মাত্র ৬টি শাখার কমিটি দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এর মধ্যে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় অন্যতম।
ইবি ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক ও নতুন কমিটিতে পদ প্রত্যাশী শাহেদ আহমেদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, নতুন কমিটি অনুমোদনের জন্য ঢাকায় গিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোনো ফল হয়নি। হতাশ হলেও হাল ছাড়িনি। কেন্দ্র নতুন কমিটি দিলে সব ব্যর্থতা পেছনে ফেলে নতুন উদ্যমে সংগঠনটিকে বাঁচিয়ে তুলব এবং গতিশীল করব।
ইবি ছাত্রদলের সভাপতি ওমর ফারুক বলেন, ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচির জন্য প্রশাসনের অনুমতি দরকার আর বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ২০১৪ সালের পর ছাত্র সংগঠনগুলোর সহাবস্থানে ব্যর্থ হয়েছে। আমি আইনের ছাত্র হওয়ায় কোর্টে নিয়মিত প্র্যাকটিস করছি। কেন্দ্রের কাছে বারবার নতুন কমিটিও চেয়েছি। তারা কর্ণপাত করেনি। এখন কেন্দ্রে নতুন কমিটি হবে। তারা সেই কমিটি নিয়ে ব্যস্ত। আশা করি কেন্দ্রীয় নতুন কমিটি আসলে তারা প্রথমেই আমাদের কমিটি নিয়ে চিন্তা করবে।
এ বিষয়ে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন,ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি দেয়া নিয়ে কিছুটা জটিলতা ছিল। তবে সেখানকার বিষয়টি আমাদের মাথায় আছে।
এদিকে এক সময়ের ছাত্রশিবিরের দুর্গখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের আধিপত্য আর নেই। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগ পুলিশ প্রশাসনের সহায়তায় সকল আবাসিক হল থেকে ছাত্রশিবির কর্মীদের বিতাড়িত করে। এরপর আর ক্যাম্পাসে ফেরেনি তারা।
এ বিষয়ে ইবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানা হালিম বলেন, আমরা ক্যাম্পাসকে শিবিরমুক্ত ঘোষণা করেছি ২০১৭ সালের ১৫ আগস্ট। এরপর তারা আর ক্যাম্পাসে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি। ক্যাম্পাসের যেখানেই আমরা কাউকে শিবির সন্দেহ করেছি, তাকেই ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়িত করেছি।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/আরএআর/এমকেএইচ