ডাকসু নির্বাচনে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ চেয়েছে ঢাবি
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে অনিয়মের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রশাসনের কাছে উপস্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) কর্তৃপক্ষ। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে শনিবার (১৬ মার্চ) এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুশৃঙ্খল ও আনন্দ ঘন পরিবেশে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যারা ক্যাম্পাসে সহিংসতা ও বড় ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনার জন্ম দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় তথা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির মাধ্যমে হীন রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের সুযোগ খুঁজছিলেন, ঢাবি মূল্যবোধ ধারণকারী শিক্ষার্থীরা তাদের সে উদ্দেশ্য পূরণ হতে দেয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় যে কোনো গঠনমূলক সমালোচনাকে স্বাগত জানায়, অনুপ্রেরণা দেয়, কিন্তু বিভ্রান্তিকর ও উস্কানিমূলক আচরণ গ্রহণ করে না।
ঢাবি কর্তৃপক্ষ এ কথা লিখিতভাবে এবং বিভিন্ন বক্তব্যের মাধ্যমে বারবার জানিয়েছে যে, প্রায় তিন দশক পর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের মতো এক বিরাট কর্মযজ্ঞের আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় অনিচ্ছাকৃত কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকতে পারে। এখানে নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত ও অংশগ্রহণকারী হলেন যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা ও দেশের সেরা মেধাবী শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন, কালক্ষেপণ বিষয়ে উত্থাপিত বিভিন্ন মন্তব্য বিবেচনায় রেখেছিল হল প্রশাসন। যাতে কোনো কৃত্রিম সংকট বা ভোগান্তি না হয়। সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ, রিটার্নিং অফিসার, আবাসিক শিক্ষক ও বিএনসিসির সদস্যরা মাইকে ভোটাররা লাইনে যাতে স্থবিরতা সৃষ্টি না করে সেজন্য অনুরোধ করে। ফলে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টার মধ্যেই সব ভোট কেন্দ্রে দীর্ঘ লাইনের অবসান এবং উপস্থিত সব শিক্ষার্থী স্বাচ্ছন্দে ভোট দিতে সক্ষম হয়। কেউ ভোট দিতে পারেননি, কেউ হেনস্তার শিকার হয়েছেন এমন কোনো অভিযোগ কোনো রিটার্নিং অফিসার পাননি।
তবে অত্যন্ত দুঃখজনক যে, বাংলাদেশ কুয়েত-মৈত্রী হলে একটি অনাকাক্ষিত এবং অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটে। অবশ্য ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্বেই এটি চিহ্নিত হওয়ায় বড় ধরনের কর্ম বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়। বিষয়টি উপাচার্য অবহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হলের ভোটগ্রহণ স্থগিতের নির্দেশ দিয়ে চিফ রিটার্নিং অফিসারকে ঘটনাস্থলে যাওয়ার অনুরোধ করেন। হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে একজন নতুন প্রাধ্যক্ষ নিয়োগ এবং ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেন। এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো অস্বচ্ছতা বা শৈথিল্যের প্রশ্ন অবান্তর। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে ঢাবি কর্তৃপক্ষ বদ্ধপরিকর।
এছাড়া অত্যন্ত বিভ্রান্তিকরভাবে রোকেয়া হলে ব্যালট পেপার উদ্ধারের কথা বলা হয়। মূলত উক্ত ব্যালট পেপার ব্যালট বাক্সে ছিল না, চিফ রিটার্নিং অফিসার প্রেরিত ট্রাংকে সংরক্ষিত ছিল। সেসব ব্যালট পেপারে কোনো সিল মারা ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী ব্যালট পেপারসমূহ নির্ধারিত টেবিল থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষকদের মাধ্যমে ভোটারদের সরবরাহ করা হয়। কোনো টেবিলের ব্যালট শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্বপ্রাপ্তরা নির্ধারিত ট্রাংক থেকে প্রয়োজনীয় ব্যালট সংশ্লিষ্ট টেবিলে দেন। ব্যালট পেপারের নিরাপত্তার জন্য এটিই সর্বোত্তম পন্থা। রোকেয়া হলে ব্যালট বাক্সের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। মূলত সেখানে ছিল ছয়টি ব্যালট বাক্স। আর তিনটি ছিল ব্যালটের ট্রাংক যেখানে ব্যালট পেপার রক্ষিত ছিল। অতএব, ৯টি ব্যালট বাক্সের ছয়টি পাওয়া গেল, তিনটি গোপন করা হয়েছে- এ বক্তব্য মনগড়া।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন আয়োজন ও পরিচালনায় চিফ রিটার্নিং অফিসার ও তার টিম ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে চারশ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী জড়িত ছিলেন। তারা সম্মিলিতভাবে সব নিয়ম-কানুন অনুসরণ করে নির্বাচন পরিচালনায় দায়িত্ব পালন করেন। এখানে এককভাবে বা বিচ্ছিন্নভাবে কারও কোনো কাজের সুযোগ ছিল না।
ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব নিয়েও ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। ভোট গণনার মেশিন সংখ্যা কম থাকায় এক হলের ভোট গণনার পর অন্য হলের ভোট গণনা করতে হয়েছে। তাই কোনো কোনো হলের ভোট গণনা সম্পন্ন করতে দেরি হয়েছে। ১৮টি হলের প্রাপ্ত ফলাফল সমন্বয় করে ডাকসুর চূড়ান্ত ফল তৈরি করতে সময় লাগে রাত ৩টা পর্যন্ত। এরপর রাত সাড়ে ৩টায় ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়।
চিফ রিটার্নিং অফিসার ‘বিব্রত বোধ করেছেন’ মর্মে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর নিয়ে কতিপয় মহল মনগড়া ব্যাখ্যা করছেন। মূলত তার নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সাড়ে চারশ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারী অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্তরিকতার সঙ্গে একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ আয়োজন ও ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত থাকার পরও দু’ একটি কেন্দ্রে অনাকাক্ষিত কিছু ঘটনা ও প্রশ্ন উত্থাপনের ফলে ভোটগ্রহণ সাময়িক বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তিনি বিব্রতবোধ করেছেন। এটিকে অন্যভাবে ব্যাখ্যা করার কোনো সুযোগ নেই।
ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে যদি ভোটের কোনো অনিয়ম, অসততা, কারচুপি, জালিয়াতি প্রভৃতির বস্তুনিষ্ঠ প্রমাণ কারও কাছে থাকে, তাহলে সেসব সুনির্দিষ্টভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে অবহিত করলে যথাযথ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন ও নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী/প্যানেল থেকে প্রাপ্ত অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমএইচ/এএইচ/এমকেএইচ