যোগ্য ব্যক্তি তৈরিতে ডাকসুর ভূমিকা পালন করা উচিত
আখতারউজ্জামান। গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৯ এবং ১৯৮১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে পরপর দুইবার সাধারণ সম্পাদক (জিএস) নির্বাচিত হন। ১৯৮৩ সালে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় একশত বছরের ইতিহাসে আখতারউজ্জামানই একমাত্র ছাত্রনেতা, যিনি ছাত্র সংসদ নির্বাচনে দুইবার জিএস এবং একবার ভিপি নির্বাচিত হয়েছেন।
আসন্ন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। দীর্ঘদিন পর নির্বাচন, নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আশা প্রকাশ করেছেন। বলেছেন আগামী দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভূমিকা কী হতে পারে, সে সম্পর্কেও।
জাগো নিউজ : দীর্ঘদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন কীভাবে দেখছেন?
আখতারউজ্জামান : এখন পর্যন্ত নির্বাচন খুব সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হয়েছে বলে আমার মনে হয়েছে। এখানে সকল সংগঠন অংশগ্রহণ করছে। কিন্তু বিভিন্ন সংগঠনের সাংগঠনিক দুর্বলতার কারণে হল সংসদসহ ডাকসুর প্যানেলে সকল সংগঠন যেভাবে প্রার্থী দেয়ার কথা সেসব ক্ষেত্রে কিছু ঘাটতি আছে বা পিছিয়ে পড়েছে কোনো কোনো সংগঠন। আশা করি এবারে ডাকসু নির্বাচন হয়ে গেলে এই সমস্ত ঘাটতিগুলো ভবিষ্যতে পূরণ হয়ে যাবে।
জাগো নিউজ : ২৮ বছর পরের এই নির্বাচন প্রক্রিয়াটিকে কীভাবে দেখছেন?
আখতারউজ্জামান : দীর্ঘদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন হচ্ছে। দীর্ঘদিন পরেও হলেও তফসিল ঘোষণা, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, মনোনয়নপত্র জমাদান, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই করা, চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা, ভোটার তালিকা প্রকাশ করা এ সমস্ত কর্মকাণ্ডগুলো যথাযথ ও সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। এ সমস্ত বিষয়ে সংগঠনগুলোর দু'একটি বিষয়ে ছোটখাটো আপত্তি থাকলেও সবাই মেনে নিয়েই নির্বাচন করছে। এখন পর্যন্ত সব সংগঠনগুলো শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের মধ্যদিয়ে নির্বাচনের কর্মকাণ্ড করছে। বড় ধরনের কোনো অভিযোগ এখন পর্যন্ত উত্থাপিত হয়েছে বলে আমার চোখে পড়ে নাই। সেই দিক থেকে আশা করি নির্বাচনটা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হবে।
জাগো নিউজ : ডাকসু নেতারা জাতীয় রাজনীতিতে ভূমিকা পালন করেছেন। আগামী দিনে কি সম্ভব?
আখতারউজ্জামান : ২০২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পালন হবে। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল দুইবার ডাকসুর জিএস ও একবার ভিপি হওয়ার। এর আগে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতা আমাদের এই ডাকসুতে নির্বাচিত হয়েছেন, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। বিশেষ করে পাকিস্তানের শাসনামলে, ঔপনিবেশিক শাসনামলে যখন আমাদের বাংলায় কথা বলতে বাধা দেয়া হয়েছিল, যখন বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আমাদের সংগ্রাম করতে হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু ছয় দফা দিলেন; আমাদের স্বায়ত্তশাসনের অধিকার; ভোটের অধিকার; বাংলা ভাষায় কথা বলার অধিকার আন্দোলন; বাঙালির শাসনপ্রতিষ্ঠার অধিকার প্রতিষ্ঠায় উপনিবেশের আমলে এ দেশের ছাত্রসমাজ, ডাকসু রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক বড় গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করেছে।
জাগো নিউজ : স্বাধীনতা-উত্তরকালেও ডাকসুর ভূমিকা ছিল?
আখতারউজ্জামান : আবার যখন সামরিক শাসন হয়েছে, জিয়াবিরোধী আন্দোলন, এরশাদবিরোধী আন্দোলন-এইগুলো আমরা প্রত্যক্ষভাবে সংগ্রাম পরিষদ করে করেছি। তাহলে দুইটি জিনিস-একটা হলো উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে ছাত্র-ছাত্রীদের একটা ব্যাপক আন্দোলন; আরেকটা হলো সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন।
জাগো নিউজ : আগামী দিনে কি ডাকসু অতীতের মতো ভূমিকা রাখতে পারবে?
আখতারউজ্জামান : দেশে যখন গণতন্ত্র থাকে, পার্লামেন্ট থাকে, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকে, রেডিও-টেলিভিশনে সকল কথা বলা যায় তখনকার পরিবেশে সেইখানে ডাকসুর ভূমিকার নতুন একটা সংজ্ঞা দেয়া দরকার।
জাগো নিউজ : আগামী দিনে ডাকসুর ভূমিকা কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?
আখতারউজ্জামান : এখনকার ছাত্রদের শিক্ষাজীবনের সকল উপকরণগুলো সরবরাহ করা, প্রতিযোগিতামূলক এই বিশ্বে আমাদের ছাত্ররা যেন যোগ্যতা নিয়ে বেরিয়ে আসে, আমাদের দেশের নতুন শিল্প-কল-কারখানা, ব্যাংক-বীমা, নতুন সার্ভিস সেক্টর, নতুন বিভিন্ন জিনিস তৈরি হচ্ছে। এই সমস্তকে সাপোর্ট করার জন্য আমাদের ডাকসুর ভূমিকা থাকবে যে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা লেখাপড়া করে বেরিয়েই যেন ল্যান্ডিং করে চাকরির জায়গায়।
জাগো নিউজ : সেটা কী ধরনের? আরও স্পষ্ট করে যদি বলেন…
আখতারউজ্জামান : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই শাসনামলে ১০০ শিল্পাঞ্চল নির্মিত হচ্ছে সারা বাংলাদেশে। প্রতিটিতে যদি ২ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়, তাহলে ২ কোটি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে। এখানে অনেক পর্যায়ের লোক দরকার। আগামী দিনের ডাকসুর নেতৃত্বে ছাত্রদের ভবিষ্যতে কর্মসংস্থানের জন্য বাস্তব যে চাহিদা তৈরি হচ্ছে, ভবিষ্যতে চাকরির যে চাহিদা তৈরি হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়ার সঙ্গে আরও ব্যাপকভাবে এই আধুনিক প্রযুক্তিগত উৎপাদন, আধুনিক ব্যাংক-বীমা-ফাইন্যান্সিয়াল প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যোগ্য ব্যক্তিদের যেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জাতির জন্য উপহার দিতে পারে- আগামী দিনে ডাকসুর সেই কর্তব্য পালন করা উচিত।
এইউএ/এসআর/এমএস