ফলাফল বদলে দিতে পারেন ছাত্রীরা
> ছাত্রী হলে ছাত্রসংগঠনের প্রভাব কম
> নির্বাচন ঘিরে প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা
> ছাত্রীদের ৫ হলেই স্বতন্ত্র প্যানেল
আর মাত্র তিনদিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এ উপলক্ষে ক্যাম্পাসে চলছে জোর প্রচারণা। ১৩টি ছাত্র হলের পাশাপাশি পাঁচটি ছাত্রী হলেও প্রার্থীরা নিজেদের পক্ষে ভোট টানতে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দল কিংবা সংগঠন থেকেও নিজের ব্যক্তি ইমেজকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন প্রার্থীরা। ব্যালটের রায়ে শিক্ষার্থীরাও যোগ্য প্রার্থীকে খুঁজছেন।
নির্বাচনকে সামনে রেখে জয় পরাজয়ের নানা হিসাব কষছেন প্রার্থীরা। কারণ ছাত্রীদের পাচঁটি হলে ১৬ হাজারের অধিক ভোট। এ ভোটগুলোই পাল্টে দিতে পারে ভোটের হিসাব নিকাশ। এ বিষয়টি ভাবাচ্ছে প্রার্থীদেরও। অনেকে মনে করছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ছাত্রী হলের ভোটগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে। ছাত্রীদের হলে শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক অবস্থা ছেলেদের হল থেকে দুর্বল। মূলত সাধারণ ছাত্রীদের রাজনীতির প্রতি অনীহা থাকায় এসব হলে ছাত্রলীগের প্যানেলও ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রতিটি হলে রয়েছে ছাত্রলীগের বিপক্ষে সাধারণ ছাত্রীদের স্বতন্ত্র প্যানেল।
ডাকসুর ওয়েবসাইটে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৪২ হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৭৭২ এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ১৪৫। হলভিত্তিক পাঁচটি ছাত্রী হলের ভোটার সংখ্যা হচ্ছে- রোকেয়া হলে ৪ হাজার ৫৩০, শামসুন্নাহার হলে ৩ হাজার ৭৩৭, কবি সুফিয়া কামাল হলে ৩৭১০, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে ১ হাজার ৯২০ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে ২ হাজার ২৪৮।
গত কয়েক বছরে ছাত্রী হলে রাজনীতির পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এসব হলে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি থাকলেও রাজনীতির প্রতি অনীহা অনেকের। অন্যদিকে ছাত্রদল ও বামদের নেই কোনো কমিটিও। আবার ছাত্রলীগের কমিটি থাকলেও ছাত্র হলের মতো ছাত্রী হলে সংগঠনটির একক আধিপত্য নেই। এসব হলে সিট দেয়া থেকে শুরু করে যাবতীয় বিষয় দেখবাল করেন প্রাধ্যক্ষরা। যে বিষয়টি ছাত্র হলে একেবারেই অনুপস্থিত। ছাত্রদের হলে ছাত্রলীগই সিট দেয়া নেয়া থেকে সব করে। কিন্তু ছাত্রী হলে সিটের রাজনীতি না থাকায় ছাত্রলীগ করতেও কেউ বাধ্য নয়। হলে যখনই কারও ওপর অন্যায়ভাবে চড়াও হয়েছে ছাত্রলীগ তখনই কঠোর প্রতিবাদ গড়ে তুলেন সাধারণ ছাত্রীরা। গত বছরের কোটা আন্দোলনের সময়ে এটি আরও তীব্র হয়েছে। ছাত্রলীগকে একঘরে করে রেখেছিল সাধারণ ছাত্রীরা। তাই ডাকসু নির্বাচনেও ছাত্রীদের হলে ছাত্রলীগের দাপট থাকবে না বলেই মনে করছেন অনেকে। যেটি নির্বাচনী ফলাফলে বড় ধরনের ব্যবধান গড়ে দিতে পারে।
এছাড়াও হল সংসদে পাঁচটি ছাত্রী হলেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়েছে সাধারণ ছাত্রীরা। যেটি ছাত্রদের হলে নেই বললেই চলে। ছাত্রীদের হলে ছাত্রদল ও বাম সংগঠনগুলো প্যানেল দিতে না পারলেও ছাত্রলীগের এন্টি হয়ে দাঁড়িয়েছেন কয়েকটি স্বতন্ত্র প্যানেল।
ছাত্রলীগের প্যানেলের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে- কুয়েত মৈত্রী হলে স্বতন্ত্র প্যানেল ‘সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতন্ত্র পরিষদ’, রোকেয়া হলে ‘রোকেয়া পরিষদ’, শামসুন নাহার হলে ১৩ সদস্যের স্বতন্ত্র প্যানেল এবং কবি সুফিয়া কামাল হলে ৯ সদস্যের স্বতন্ত্র প্যানেল রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী আছে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলেও।
জানতে চাইলে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে কেন্দ্রীয় সংসদে কমনরুম ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী বি এম লিপি আক্তার বলেন, ‘ছাত্রী হলে রাজনীতির চর্চা কম, এটা সত্য। তবে সেটি নির্বাচনের ফলাফলে কোনো প্রভাব ফেলবে বলে আমি মনে করি না। এখানে ব্যক্তি ইমেজটাই বেশি কাজে দেবে। গত পাঁচ বছর সাধারণ ছাত্রীদের সুখে-দুঃখে আমরা পাশে দাঁড়িয়েছি- নিশ্চয় ব্যালটের রায়ে সাধারণ ছাত্রীরা সেটি মনে রাখবে।’
স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমান বলেন, ছাত্রী হলগুলো বরাবরই প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। তাই এসব হলে ছাত্রলীগ চাইলেই কিছু করতে পারে না। অন্যদিকে সাধারণ ছাত্রীরাও ঐক্যবদ্ধ। এসব হলে ছাত্রীরা স্বাধীনভাবে নিজেদের মতামত প্রকাশের সুযোগ পাবেন বলে আশা করছি। যেটি ছাত্র হলে অনুপস্থিত।
ছাত্র ফেডারেশনের প্রার্থী উম্মে হাবীবা বেনজীর বলেন, আশা করছি, ছাত্রী হলের ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার স্বাধীনভাবে প্রয়োগ করতে পারবে। তারা ছাত্রলীগের সন্ত্রাস ও দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে রায় দেবে।
এমএইচ/জেএইচ/এমকেএইচ