রাবিতে সান্ধ্যকোর্সে সাত খুন মাফ!
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) নিয়মিত কোর্সের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে নিয়মমাফিক শাস্তি অব্যাহত থাকলেও সান্ধ্যকোর্সে তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। নিয়মিত কোর্সের তুলনায় সান্ধ্যকোর্সের পরীক্ষায় অনিয়ম ও শৃঙ্খলাভঙ্গ হয় অনেক বেশি। এনিয়ে খোদ শিক্ষকদের মধ্যেই গ্রুপিং রয়েছে। সান্ধ্যকোর্সে নকল ধরা নিয়ে বিভাগের সভাপতিকে পদত্যাগে বাধ্য করার অভিযোগও রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থীরা ছোট কাগজের নকলসহ পুরো অ্যাসাইনমেন্ট কপি করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যায়। থাকে মোবাইলও। ছোট কাগজের টুকরাগুলো মানিব্যাগসহ বিভিন্নভাবে রাখা হয়। তবে অ্যাসাইনমেন্ট এবং মোবাইল দেখলেও শিক্ষকরা সে বিষয়গুলো সঠিকভাবে তদারকি করেন না। শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরাগ দেখান বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। নকল ছাড়াও সান্ধ্যাকোর্সের শিক্ষার্থীরা ছাড় পায় গড় উপস্থিতির ক্ষেত্রেও। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী বছরে ৬০ শতাংশ উপস্থিত না হলে পরীক্ষায় বসতে দেয়া হয় না। তবে এক্ষেত্রে সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থীদের ছাড় দেয়া হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দফতরের এক পরিসংখ্যানে সান্ধ্যকোর্সের পরীক্ষার্থীদের ছাড় দেয়ার বিষয়টি কিছুটা পরিষ্কার হয়। সেখানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন ও শৃঙ্খলাবিরোধী কাজের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৯৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক বাবুল ইসলামের তথ্য মতে- এই বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীদের মাত্র ৪ থেকে ৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সান্ধ্যকোর্সের। ৭৪ জন নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং বাকিরা অধিভুক্ত মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও নার্সিং কলেজের শিক্ষার্থী।
শিক্ষকদের অনুরাগের কারণেই সান্ধ্যকোর্সে এসব হচ্ছে দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক সভাপতি নাসিমা জামান বলেন, সান্ধ্যকোর্সে নকল ধরার জন্য বিভাগের সভাপতির পদ থেকে আমাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে সান্ধ্যকোর্সের একটি পরীক্ষায় গিয়ে আমি দেখতে পাই ঢালাওভাবে নকল নিয়ে শিক্ষার্থীরা লিখছে। আমি তখন সভাপতি। আমি গিয়ে ১৩ শিক্ষার্থীর খাতা নিয়ে নিই। পরে বিভাগের অ্যাকাডেমিক কমিটির সভায় বলা হয় আমরা যদি নকল ধরি তাহলে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবে না। এরপর পর্যায়ক্রমে আমার বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেন। শেষ পর্যন্ত পদত্যাগে বাধ্য করা হয় আমাকে।
সান্ধ্যকোর্সে নকল বাড়লেও ব্যবস্থা না নেয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফখরুল ইসলাম বলেন, দিনে পড়ুক আর রাতে পড়ুক পরীক্ষার ক্ষেত্রে সমান পরিবেশ এবং আইন থাকা উচিত। আমরা সেই বিষয়টি মেনে চলার চেষ্টা করি। তবে সান্ধ্যকোর্সে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কম হওয়ায় শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম।
এদিকে ব্যাবসায় শিক্ষা অনুষদের বিভাগগুলোতে সান্ধ্যকার্সেও অভিযোগের পাল্লা ভারি। সেখানেও নকলের হার ভয়াবহ বলে দাবি নিয়মিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের।
এ বিষয়ে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, নকল করলে ধরা হয় না এমন অভিযোগ সত্য নয়। এটা ঠিক যে শিক্ষকদের অনুরাগ রয়েছে। তবে আমরা বলে দেই যে হয় তুমি খাতা কেটে দাও, না হয় পরীক্ষা বাতিল করো। কারণ অনেক শিক্ষার্থী আছে যারা নিয়মিত ক্লাস করতে পারে না।
সান্ধ্যকোর্সে এমন অব্যবস্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক ড. বাবুল ইসলাম বলেন, বিভাগ ও কলেজগুলো থেকে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বন করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত নিয়ম ও আইন অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যে বিভাগগুলোতে সান্ধ্যকোর্স আছে সেগুলোতে শিক্ষার্থীদের ছাড় দেয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। আমি বিভাগগুলোকে মানসম্মত শিক্ষা দেয়ার জন্য কঠোর হওয়ার জন্য শিক্ষকদের জানিয়েছি। কারও জন্য যেন অনুরাগ না থাকে এ ব্যাপারে সাবধান করেছি।
সালমান শাকিল/আরএআর/এমকেএইচ