দিয়াজের মৃত্যুর দুই বছর : শিগগিরই চূড়ান্ত প্রতিবেদন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর রহস্যজনক মৃত্যুর দুই বছর পূর্ণ হলো। জনপ্রিয় এই ছাত্রলীগের নেতার মৃত্যু নিয়ে জল্পনা-কল্পনার ছড়িয়েছে নানা ডালপালা। তার রহস্যজনক মৃত্যুতে পরিবারের পক্ষ থেকে হত্য মামলা দায়ের পর চারবার পরিবর্তন হয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তাও। তবে সবশেষ সিআইডির হাতধরে আলোর মুখ দেখতে যাচ্ছে আলোচিত এই হত্যা মামলাটি।
দীর্ঘসময় ধরে তদন্তটি এখন প্রায় সমাপ্তির পথে। ২০১৯ সালের শুরুতেই চূড়ান্ত তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে পারবেন বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার জসীম উদ্দীন।
তদন্তে কতটুকু অগ্রগতি এমন প্রশ্নে এ তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘দিয়াজ ইরফান চৌধুরী আত্মহত্যা করেনি, তাকে যে হত্যা করা হয়েছে এটি আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। এটাই আমাদের তদন্তের মূল অগ্রগতি। তবে ঠিক কোন সময়ে হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে তা নিশ্চিত নয়। সেটি এখনো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। শত্রুতার বশেই হত্যাকাণ্ডটি হয়ে থাকতে পারে বলে আমাদের মনে হয়েছে। কিন্তু তদন্ত শেষ হবার আগে আমরা মামলার আসামিদের কাউকেই জড়িত বলতে পারছি না।’
এদিকে মামলার তদন্ত কার্যক্রম চারবার হাতবদল হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে আসামিরা। ১০ আসামির মধ্যে কেবল জামিনে রয়েছেন সাবেক সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন। বাকি আসিমিরা উচ্চ আদালতে জামিন শেষে নিম্ন আদালতে হাজির হননি। ফলে গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়েই প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
অন্যদিকে হাটহাজারী থানায় এই মামলার গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকলেও নীরব দর্শকের ভূমিকায় পুলিশ। কী কারণে পুলিশের এই নিষ্ক্রিয়তা তাও অজানা। এ বিষয়ে হাটহাজারী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বেলাল উদ্দিন জাহাঙ্গীরের সাথে যোগাযোগ করা হলেও তিনি মন্তব্য জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
মামলার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আবু মনসুর জাগো নিউজকে বলেন, বর্তমানে মামলাটি সিআইডির তদন্তে রয়েছে। এখনো তারা রিপোর্ট দেয়নি। রিপোর্ট পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব। আসামিদের মধ্যে একজন জামিনে থাকলেও বাকিরা পলাতক রয়েছেন।
এর আগে ২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২নং গেটস্থ নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশে। মরদেহ উদ্ধারের পর ২৩ নভেম্বর প্রথম ময়নাতদন্তে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের (চমেক) ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসকরা প্রতিবেদন দিয়েছিল। তার ভিত্তিতে পুলিশ বাদী হয়ে হাটহাজারী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করে।
পরবর্তীতে তা প্রত্যাখ্যান করে ২৪ নভেম্বর আদালতে অভিযোগ (সিআর মামলা) দেন দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী। তাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেনসহ ছাত্রলীগের সাবেক ১০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, শাখা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আবুল মনসুর জামশেদ, শাখা ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির প্রচার সম্পাদক রাশেদুল আলম জিশান, বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি আলমগীর টিপু, সিনিয়র সহ-সভাপতি মনসুর আলম, সহ-সভাপতি আবদুল মালেক, যুগ্ম সম্পাদক আবু তোরাব পরশ (বহিষ্কৃত), সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আরমান, আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক মিজানুর রহমান ও কার্যনির্বাহী সদস্য আরেফুল হক অপু (বহিষ্কৃত)। দিয়াজ ইরফান চৌধুরীসহ আসামিদের সকলেই নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত।
এদিকে আদালত দিয়াজের মায়ের অভিযোগ গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এটি হত্যা না আত্মহত্যা তা নিশ্চিত করতে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত করে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলেন। আদালতের নির্দেশে ২০১৬ সালের ৬ ডিসেম্বর কবর থেকে মরদেহ তুলে ঢামেক ফরেনসিক বিভাগে দ্বিতীয় ময়নাতদন্ত হয়। তার সাত মাস পর ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগ নিশ্চিত করে এটি ‘শ্বাসরোধে হত্যা’।
পরবর্তীতে মামলার বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের ৭ আগস্ট হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেফতার, জিজ্ঞাসাবাদ, পাসপোর্ট জব্দ এবং তারা বিদেশে যাতে পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পূর্বের সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন আদালত। শুরু থেকেই দিয়াজের পরিবার ও অনুসারীদের অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নির্মাণ কাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দল থেকেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
বর্তমানে মামলাটি সিআইডি থেকে পুলিশের হয়ে আবারও সিআইডির অধীনে তদন্তনাধীন। দুই বছর ধরে এভাবেই হাতবদলেই চলছে এ তদন্ত। কিন্তু এখনো এ হত্যার কোনো রহস্য প্রকাশ করতে পারেনি কেউ।
বিএ