লিটন গাইলেন, বাকিরা কাঁদলেন
‘দে দে পাল তুলে দে, মাঝি হেলা করিসনা। ছেড়ে দে নৌকা আমি যাব মদিনা’। বাঁচা-মরা অনিশ্চিত জেনেও স্টেজে দাঁড়িয়ে এ গানটিই গাইলেন ক্যানসার আক্রান্ত সেই আনজির লিটন।
যখন মঞ্চে তার নাম ঘোষণা করা হচ্ছিল মুহূর্তেই স্তব্ধ হয়ে গেল অনুষ্ঠান মাঠ। কেননা নামটা প্রায় সকলেরই পরিচিত। কিছুদিন আগেই তাকে নিয়ে শঙ্কা জাগানিয়া খবর মিলছে সংবাদ মাধ্যমে।
গত ৩ সেপ্টেম্বর মরণব্যাধি মেলানোমা ক্যানসার আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি প্রথম জানতে পারেন আনজির লিটন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তার ক্যানসার ধরা পড়ে শেষ পর্যায়ে। মৃত্যুর দুয়ারে কড়া নাড়া লিটন গত দুই মাস ধরে চিকিৎসা নিচ্ছেন ভারতের ব্যাঙ্গালোর মজুমদার শাহ ক্যান্সার হাসপাতালে।
কিন্তু সব শঙ্কা-সংশয় মিথ্যা করে সেই লিটনকে এভাবে অনুষ্ঠানের মঞ্চে পাবেন সেটা যেন স্বপ্নেও ভাবতে পারছিলেন না তার শিক্ষক, সহপাঠীসহ পরিচিতরা। আর সবাইকে অবাক করে সেই কাজটিই করলেন লিটন।
শনিবার সন্ধ্যা ৭টায় গলা ছেড়ে গাইলেন তার বিভাগের আয়োজনে এআইএস উৎসবে। লিটন যখন গাইলেন তখন চোখ জলে ভরে এসেছে তার শিক্ষক-সহপাঠীদের। চোখ মুছতে মুছতে সবাইকে দেখা গেলো সুর মেলাতে। গানের সুর পেলো অন্য এক মাত্রা।
তার গান শুনে কে বলবে তিনি মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাচ্ছেন। তার বাঁচা-মরা এখনো অনিশ্চিত। তবে কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুলে যাননি চিকিৎসায় সহযোগিতা করা মানুষগুলোর প্রতি।
গান শেষে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় লিটনের। তার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে আনজির লিটন বলেন, ৭ নভেম্বর দেশে ফিরেছেন। ৬টা কেমোথেরাপি দিতে হবে তারমধ্যে দুইটা দেয়া হয়েছে। এখনো শঙ্কা মুক্ত নয় সে। চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন বেঁচে থাকার সম্ভবনা খুব কম। কিন্তু এভাবে ধুঁকে ধুঁকে মরতে চায় না সে।
ওই বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক মো. শাহীনুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, যখন লিটনকে গান গাইতে দেখলাম তখন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। সে গাইলো সবাই কাঁদলো। শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে লিটন এখনো প্রচণ্ড প্রাণোচ্ছল। আশা করি সে মৃত্যুকে জয় করবেই।
এর আগে গত ৭ সেপ্টেম্বর ‘লিটনকে বাঁচাতে প্রয়োজন ১০ লাখ টাকা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে জাগো নিউজ। পরে তার অসুস্থতার বিষয়টি সকলের নজরে আসে।
সজীব হোসাইন/এফএ/এমএস