ঢাবি শিক্ষার্থীর আমরণ অনশনের নেপথ্যে
প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় নেয়াসহ চার দফা দাবিতে অমরণ অনশন করছেন আইন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র আখতার হোসেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে শুরু হওয়া এ অমরণ অনশন বুধবার সকাল পর্যন্ত চলছে।
ঠাণ্ডা বাতাসের মধ্যে টিএসসির সন্ত্রাসবিরোধী রাজু স্মারক ভাস্কর্যের সামনে কম্বল মুড়িয়ে সকালেও শুয়ে থাকতে দেখা যায় তাকে। প্রায় একদিন নাওয়া-খাওয়া ছাড়া অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন এ শিক্ষার্থী। এ সময় তার পেছনে কিছু প্ল্যাকার্ডে দেখা যায়, যাতে লেখা রয়েছে ‘যদি পরীক্ষা শুরুর এক মিনিট আগেও প্রশ্ন পাওয়া যায়, তবুও সেটা প্রশ্নফাঁস‘, ‘প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা চাই, ‘জালিয়াতদের বহিষ্কার চাই’, ‘হোতাদের বিচার চাই’, ‘অনশন’, ‘প্রশ্নফাঁস!!!? না, মেধাবীদের গলায় ফাঁস এ দায় নেবে কে?’
গতকাল রাতে তিনি জাগো নিউজকে জানান, ‘আমি ভর্তি পরীক্ষা বাতিলসহ চার দফা দাবিতে অমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছি। যতক্ষণ প্রশাসন আমার দাবি মানার কোনো আশ্বাস না দেবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমি কর্মসূচি চালিয়ে যাব।’
তার দাবি, অনুষ্ঠিত ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বাতিল, প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা, জালিয়াতদের গ্রেফতার ও বিচার এবং হোতাদের বিচার করা।
গতকাল অনশনরত অবস্থায় তাকে গাভী বিত্তান্ত নামে একটি বই পড়তে দেখা যায়। আহমদ ছফার লেখা বইটিতে আবু জুনায়েদ নাম দিয়ে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অনেকগুলো চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
আহমদ ছফার বইটির চরিত্রের সঙ্গে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের চরিত্রের মিল পায় অনেকে। বইটি কেন পড়ছেন জিজ্ঞেস করলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি এমনিই পড়ছি। তবে আশা করছি, এ বইটি পড়ার মাধ্যমে একটি ম্যাসেজ যাবে। যারা ম্যাসেজ নেয়ার তারা নেবে।’
আপনি কি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যকে আবু জুনায়েদ মনে করেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি তা বলতে চাই না। তবে যাদের ইচ্ছে তারা এখান থেকে ম্যাসেজ নিতে পারে।’
অনশন প্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নেওয়া এবং ফল প্রকাশ করা একাডেমিক কার্যক্রমের অংশ। গণতান্ত্রিক পরিবেশে সবাই দাবি পেশ করতে পারে, তবে কে, কী দাবি করছে তা তাদের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার।’
এর আগে গত ১২ অক্টোবর ঢাবির প্রথম বর্ষ স্নাতক শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষায় 'ঘ' ইউনিটে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে ৬ জনকে আটক করা হয়। শাহবাগ থানায় তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়।
এদিকে প্রশ্নফাঁসের পর নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানায় বাম ছাত্র সংগঠনসহ কয়েকটি সংগঠন। প্রশ্নফাঁসের বিতর্কের মধ্যেই গতকাল ফলাফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। যেখানে পাশের রেকর্ড হয়েছে। নিকটতম অতীতে কোনো ইউনিটে এত ভালো ফলাফল হয়নি।
প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, ‘ঘ’ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী সংখ্যা ১৮ হাজার ৪৬৩ জন। এ বছর ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৯৫ হাজার ৩৪১ জন। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ৭০ হাজার ৪৪০ শিক্ষার্থী। যা শতকরা হারে ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ। এর আগে ২০১৩-১৪ সেশনে ‘ঘ’ ইউনিটে পাসের হার ছিল ১১ দশমিক ৪ ভাগ, ২০১৪-১৫ সেশনে ছিল ১৬ দশমিক ৫৫ ভাগ, ২০১৫-১৬ সেশনে ৯ দশমিক ৯১, ২০১৬-১৭ সেশনে ৯ দশমিক ৮৩ এবং ২০১৭-১৮ সেশনে ১৪ দশমিক ৩৫ ভাগ।
এমএইচ/এনডিএস/এমএস