উইথআউট টিকিট ট্রেনে সারাদেশ ঘুরেছি : রাষ্ট্রপতি
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয় মূলত মুক্তচিন্তা বিকাশের জায়গা। জ্ঞান চর্চা ও গবেষণার মাধ্যমে এখানে জ্ঞান ও প্রযুক্তির জন্ম হয়। এসব জ্ঞান ও প্রযুক্তি সমগ্র বিশ্বের সম্পদে পরিণত হয়ে যায়। এর ফলে পৃথিবী সামনের দিকে এগিয়ে যায়।
শনিবার বিকেলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দশম সমাবর্তনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে এ সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে টিকে থাকা এবং এগিয়ে চলার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে। বাস্তবতার প্রয়োজনের দেশে পাবলিক-প্রাইভেট মিলে প্রায় দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে উঠেছে। উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে নিশ্চিত করতে হবে।
লিখিত বক্তব্য শেষ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, দেখেন খুব তাড়াতাড়ি পড়ছি। তাড়াতাড়ি পড়ার কারণ হইলো আর বেশি দেরি করলে এই হেলিকপ্টারে আজ যাইতে পারব না। পাঁচদিন ঘুইরা আইছি হাওর এলাকায়, দুর্গম এলাকায়, অনুন্নত এলাকায়। রাজশাহীতো অনেক উন্নত এলাকা। তবে এখানে গরম অনেক বেশি। আজকে আপনারা যেভাবে হাতের ব্যায়াম (বাতাস) করতাছেন এই ব্যায়াম দেইখা বেশি কথা বলার সাহস আমার নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য বলেন, আমি ভিসি সাহেবকে বলতে চাই- আসলে আমি কনভোকেশনে বিভিন্ন জায়গায় বারবার বলি, আপনারা ভেতরে একটু লাইট দেন, আপনারা তো শিক্ষার আলো ছড়ান। এই প্যান্ডেলের ভেতরে খালি অন্ধকার, কিচ্ছুই দেখি না। চেহারাও দেখা যায় না। গরম লাগছে। আর এখানে কিছু ফাঁকিবাজিও করছেন, ৯৫ পার্সেন্ট ফাঁকিবাজি করছেন। কেমন করছেন আপনারা গাউন লাগাইছেন শার্টের উপরে কিন্তু কোট পরেন নাই। আবার অনেকেই আছে, কিছু কিছু ফাঁক দিয়ে দেখি তাদের কনভোকেশন গাউনটা আছে ক্যাপটা নাই। আমি বুইড়া হয়ে গেছি তবে চোঁখের পাতা অত নষ্ট হয় নাই। আমি দেখি। অনেকেই ক্যাপটা পরিহার করছেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, এই রাজশাহীতে আমার অনেক ইতিহাস। এখানে এইচ এম কারারুজ্জামান হেনা ভাই ছিল, স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় একসঙ্গে যুদ্ধ করছি। উনি মেঘালয়ে আমার সঙ্গে পাঁচ-ছয়দিন ছিলেন। এখানে তার ছেলে খায়রুজ্জামান লিটন আছেন। আমার অনেক কিছুই মনে পড়ে। এই মেঘালয়ে যখন যুদ্ধের সময় বিভিন্ন ক্যাম্প পরিদর্শন করছিলাম তখন প্রায়ই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় থাকতে হত। থাকার জায়গা সংকুলান, ছোট্ট একজনের সিঙ্গেল খাটে দুইজনরে থাকতে হত। আমি মোটামুটি চিকন-চাকন ছিলাম আর হেনা ভাই মোটা-সোটা ছিল। আরও উপদ্রব ছিল। হেনা ভাইয়ের লগে ঘুমাইলে দুই-তিন মিনিট পরেই নাক এমন ডাকা ডাকতো, ঘুমের কাছে যাওয়ার যোগার নেই। আবার মাঝে মধ্যে উনি একটু নড়াচড়া করলে প্রায়ই ফ্লোরে পড়ে গেছি। এই অবস্থার মধ্যে ছিলাম।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ তার ছোট বেলার স্মৃতি উল্লেখ করে বলেন, আমি যখন ক্লাশ এইট থেকে নাইনে উঠি রেজাল্ট খারাপ হইছে দেখে আমার বাপ আমারে গালাগাল করছিল, তখন রাগ কইরা আমি আমার এক ফেন্ডরে লইয়া সারা বাংলাদেশ উইথআউট টিকিট ট্রেনে ঘুরছি। রাজশাহীও আমি আসছি। টমটমে রাজশাহী শহর ঘুইরা দু’দিন থাইকা গেছি।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, সমাবর্তন বক্তা আলমগীর মোহাম্মদ সিরাজুদ্দিন, রাবি উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান, উপ-উপাচার্য আনন্দ কুমার সাহা, চৌধুরী মোহাম্মদ জাকারিয়া, কোষাধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে বিকেল ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেই ছাত্রীদের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা হল ও ছাত্রদের জন্য শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল নামে দুইটি দশতলা বিশিষ্ট আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টেডিয়ামে সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন তিনি।
এবারের সমাবর্তনে উপমহাদেশের বিশিষ্ট কথা সাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও সেলিনা হোসেনকে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি-লিট) ডিগ্রি প্রদান করা হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠান শেষে বিকেল ৫টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে দেশবরেণ্য কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনসহ অন্যান্য শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন।
আরএআর/আরআইপি