থমথমে বিএসএমএমইউ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আজ বৃহস্পতিবার দুই শতাধিক চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। তবে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। চাকরিপ্রত্যাশীদের আন্দোলনের কারণেই মূলত ক্যাম্পাসে এ থমথমে অবস্থা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দুই শতাধিক চিকিৎসক নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে এবং দ্রুত নিয়োগের দাবিতে বুধবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর দুইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমানকে তার কার্যালয়ে অবরুদ্ধ করেন চাকরিপ্রত্যাশীরা। একই সঙ্গে, অনতিবিলম্বে নিয়োগ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন তারা।
ডা. সাহানা আখতার রহমানকে উদ্ধার করতে গিয়ে প্রো-ভিসি (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. রফিকুল আলম, প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ডা. মোজাফফর হোসেন ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আবদুল হান্নানও অবরুদ্ধ হন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চলে যান চাকরিপ্রত্যাশীরা।
বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিএসএমএমইউ ক্যাম্পাসের প্রবেশপথে আনসার সদস্যদের সরব উপস্থিতি। সেখানে প্রতিষ্ঠানটির আইডি কার্ডধারী স্টাফ, চিকিৎসক, শিক্ষক ও চলতি শিক্ষার্থী ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
হাসপাতালের প্রবেশ পথেও কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। সেখানেও পরিচয় ও পাসকৃত কার্ড ছাড়া কাউকে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না।
নূরে আলম নামে এক আনসার সদস্য জানান, গতকাল (বুধবার) থেকে ক্যাম্পাসে ঝামেলা চলছে। বহিরাগতরা যাতে ভেতরে ঢুকে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি তৈরি করতে না পারে, সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
সাংবাদিক পরিচয়ে ভেতের প্রবেশ করে দেখা যায়, ভিসি ভবনের দ্বিতীয় তলায় ভিসির কার্যালয়ের সামনে নেয়া হয়েছে অতিরিক্ত নিরাপত্তা। সেখানে আনসার সদস্যের পাশাপাশি অবস্থান করছেন পোশাকধারী পুলিশ সদস্যরাও।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা জানান, আজ বৃহস্পতিবার নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অদৃশ্য কারণে মঙ্গলবার (২৫ সেপ্টেম্বর) সিন্ডিকেটে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে প্রো-ভিসি (গবেষণা ও উন্নয়ন) অধ্যাপক ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার কথা বলবেন না বলে জানান। তবে তার পিএস মোক্তার হোসেন জানান, গতকালের ঘটনা ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত। এমন পরিস্থিতি আগে কখনও ঘটেনি। যে কারণে কেউ কথা বলতে চাইছেন না।
পরে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. আবদুল হান্নানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ভিসি মহোদয় ছাড়া কারও মন্তব্য করা ঠিক হবে না।
তবে এক ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এখন ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। অবরুদ্ধ দশা থেকে মুক্তি পেতে আমাদের পক্ষ থেকে চাকরিপ্রত্যাশীরকে অনুরোধ করা হয়েছিল। বসে আলোচনার প্রস্তাবও দেয়া হয়েছিল। প্রথমে ওরা মানেনি। তবে রাত সাড়ে তিনটার দিকে আলোচনার প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা ফিরে যান। তবে এখন পর্যন্ত কোনো সমাধান হয়নি। যে কোনো সময় ওরা ফের ভিসি ভবনে আসতে পারে। ওরা আজ বৃহস্পতিবার সকালে ফের দেখা করার কথা বলে গেছে।’
এ ব্যাপারে ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসেন সরদার জানান, পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সেখানে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চাইলে পুলিশ সহযোগিতা করবে।
বৃহস্পতিবার দুপুর একটা পর্যন্ত নিজ কার্যালয়ে আসেননি বিএসএমএমইউ ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া।
তবে তিনি বুধবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে জাগো নিউজকে বলেন, ‘সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রো-ভিসি, প্রক্টর ও রেজিস্ট্রারসহ সকলে আলোচনা করছেন। তবে শিক্ষার্থীরা এখনও প্রো-ভিসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ শান্ত রাখতে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্যাম্পাসে অবস্থান নিয়েছে। এছাড়া সামগ্রিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘সাড়ে ৮ হাজার আবেদনকারীর মধ্য থেকে সরাসরি ২০০ চিকিৎসককে নিয়োগ দেয়া যায় না। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিন্ডিকেটের সভায় নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়।’
এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা চিকিৎসক নিয়োগে তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল হাসান খানকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রেখেছিলেন।
২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চাকরিপ্রত্যাশী জুনিয়র চিকিৎসকদের সঙ্গে অধ্যাপক কামরুলের আলোচনা হয়। তখন তিনি তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনে প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০০ চিকিৎসক নিয়োগের পূর্ব সিদ্ধান্ত রয়েছে। দুই সপ্তাহের মধ্যে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞাপন দেয়া হবে।
এরপর ২০১৭ সালের ১ অক্টোবর ২০০ জন মেডিকেল অফিসার চেয়ে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এতে মেডিকেল অফিসার পদে ১৮০ জন এবং মেডিকেল অফিসার (ডেন্টাল সার্জারি পদে ২০ জনকে নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শীর্ষ দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জানান, চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে ২০০ পদের বিপরীতে প্রায় সাড়ে ৮ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। আন্দোলনকারীরা নিজেদের সরকারদলীয় পরিচয় দিয়ে শুধু তাদের নিয়োগ দিতে চাপ সৃষ্টি করছে। গত কয়েকদিন যাবত তারা ভিসি ও প্রো-ভিসিসহ সকলের ওপর চাপ সৃষ্টি করে আসছিলেন। এ কারণে দ্রুত সিন্ডিকেট সভা ডাকা হয়। সভায় ভিসি অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া উদ্ভূত পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে নিয়োগ পরীক্ষা গ্রহণ করতে আরও ছয় মাস সময় চান। ছয় মাস সময় বৃদ্ধির ব্যাপারে সিন্ডিকেট সদস্যরা একমত হন।
জেইউ/এসআর/জেআইএম