জাবিতে সাংবাদিকসহ চারজনকে পেটাল ছাত্রলীগ কর্মীরা
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের দুই শিক্ষার্থী ও দুই বহিরাগতকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের ৮-১০ জন কর্মীর বিরুদ্ধে। সোমবার দুপুর ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে মানববন্ধনের আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও প্রক্টর বরাবর এ ঘটনায় পৃথক লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন মারধরের শিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৩ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী ও চ্যানেল আই অনলাইনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মাহমুদুল হক সোহাগ এবং একই বিভাগের ৪৬ তম আবর্তনের এক ছাত্রী। আর শারীরিক লাঞ্ছনা ও ছিনতাইয়ের বিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করেছেন বহিরাগত বিল্লাল হোসেন ও তার বান্ধবী।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের চার কর্মীকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করেছেন। তারা হলেন- নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের ৪২তম আবর্তনের শিক্ষার্থী নিজাম উদ্দিন চৌধুরী নিলয়, বাংলা বিভাগের ৪৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী শুভাশীষ ঘোষ, লোকপ্রশাসন বিভাগের ৪৭ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী সোহেল রানা ও ইয়া-রাফিউ শিকদার আপন। তারা সবাই শহীদ রফিক জব্বার হলের আবাসিক ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চলের অনুসারী। এদের মধ্যে নিলয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের আসন্ন হল কমিটিতে শহীদ রফিক জব্বার হলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী।
লিখিত অভিযোগ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুল এলাকায় ঘুরতে আসেন বিল্লাল হোসেন। সেখানে ইয়া-রাফিউ শিকদার আপনের নেতৃত্বে চারজন ছাত্রলীগ কর্মী বিল্লাল ও তার বান্ধবীর পরিচয় জানতে চান। কথা বলার একপর্যায়ে তাদের দুইজনের সঙ্গে থাকা মুঠোফোন, মানিব্যাগ ও পরিচয়পত্র ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করেন ওই ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ সময় বাধা দিতে গেলে বিল্লাল হোসেনকে চড়-থাপ্পড় দিতে থাকেন আপন।
মারধরের ঘটনা দেখে পাশে অবস্থান করা মাহমুদুল হক সোহাগ সেদিকে এগিয়ে যান। নিজের পরিচয় দিয়ে ঘটনা জানতে চান। ঘটনা জানতে পেরে বিল্লাল এবং তার বান্ধবীর মুঠোফোন ও মানিব্যাগ ফেরত দিয়ে ছাত্রলীগ কর্মীদেরকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। সেগুলো ফেরত দিয়ে সেখান থেকে চলে যান ছাত্রলীগ কর্মীরা।
পরে বিল্লাল হোসেন তার বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে সুইমিংপুলের পাশে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শারীরিক শিক্ষা ভবনের সামনে গেলে আবারও ছাত্রলীগের ওই চার কর্মী তাদের পথরোধ করে বিল্লালকে বেধড়ক মারতে থাকেন। এ সময় সোহাগ ঘটনাস্থলে আবারও উপস্থিত হন এবং বহিরাগত দুই জনকে মারধরে বাধা দেন। তখন সোহাগের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাগবিতণ্ডা ও ধাক্কাধাক্কি হয়।
এরপর সোহাগ, বিল্লাল হোসেন, তার বান্ধবী সেখান থেকে সামনে এগিয়ে জীববিজ্ঞান অনুষদ ভবনের পাশে এলে নিজাম উদ্দিন, শুভাশীষ ঘোষ, সোহেল রানা সহ ৮-১০ জন ছাত্রলীগকর্মী তাদের পথরোধ করে সোহাগকে মারধর করেন। এ সময় সোহাগকে উদ্ধার করতে তার বিভাগের এক ছাত্রী এগিয়ে আসলে তাকেও মারধর করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। এতে মাহমুদুল হক সোহাগ ও ওই ছাত্রীর শরীরের বিভিন্ন স্থান কেটে গিয়ে রক্তপাত হয়। পরে প্রক্টরিয়াল বডির সহায়তায় তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
অভিযোগের বিষয়ে জাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আবু সুফিয়ান চঞ্চল বলেন, ঘটনা শুনেছি। অভিযুক্তরা প্রথম বর্ষের ছাত্র। তারা সংগঠনের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নয়। তবে অভিযুক্তদের কেউ ছাত্রলীগ কর্মী হলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর শিকদার মো. জুলকারনাইন বলেন, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তারা কোনোভাবেই এমন ন্যাক্কারজনক ঘটনার সঙ্গে জড়িত হতে পারে না। এরা ছাত্রলীগ নামক কুলাঙ্গার। অভিযোগপত্রটি হাতে পেয়েছি। ঘটনার তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, প্রাথমিক তদন্তে অভিযুক্তরা দোষী সাব্যস্ত হলে তাদের সাময়িক বহিষ্কার করা হবে। পরবর্তীতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তে সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
হাফিজুর রহমান/আরএআর/পিআর