শিক্ষক নিয়োগের অডিও ফাঁস : সেই দুই শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষক নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁসের ঘটনায় দুই শিক্ষককে সাময়িক অব্যাহতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ স্বাক্ষরিত বিবৃতির মাধ্যমে এ ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
অব্যাহতি পাওয়া শিক্ষকেরা হলেন- বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল ও ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের প্রার্থী ফারজানা আক্তার এবং তার স্বামী শাহরিয়ার আল মামুনের সঙ্গে অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ ও অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুলের নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস হয়। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে এরই মধ্যেই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে রয়েছেন আইসিটি বিভাগের অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, ছাত্র উপদেষ্টা ও বায়োটেকনোলজি অ্যান্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজওয়ানুল ইসলাম এবং ইংরেজি বিভাগের সভাপতি ও অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু। তদন্তে স্বচ্ছতা রক্ষার জন্যই এই শিক্ষকদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।
তাই, অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হল প্রভোস্টের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে। একইসঙ্গে ড. বাকী বিল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-ছাত্র মিলনায়তনের পরিচালকের দায়িত্ব থেকে সাময়িকভাবে বিরত রাখা হয়েছে।
এ সময়ের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হলের হাউস টিউটর এবং ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক বখতিয়ার হাসান হলের প্রভোস্টের দায়িত্ব পালন করবেন। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ বলেন, নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁসের ঘটনায় তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কাজ করেছে। এই তদন্ত কাজে স্বচ্ছতা আনতে অভিযুক্ত শিক্ষকদের প্রশাসনিক দায়িত্ব থেকে বিরত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে প্রশাসন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, ১৪ জুলাই শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি বিভাগে ৩৭ জন শিক্ষক নিয়োগে ২৪১তম সিন্ডিকেট চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। পরে প্রার্থী নিয়োগ নিয়ে অধ্যাপক বাকী বিল্লাহর সঙ্গে প্রার্থী ও তার স্বামীর অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়ে যায়। নিয়োগ প্রত্যাশী প্রার্থী ১০ লাখ টাকা নগদ প্রদান এবং বাকি ১০ লাখ টাকার চেক প্রদান করেছেন। তবে ওই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে না পারায় টাকা ফেরত দেয়া হয়েছে। ১৩ জুলাই রাতে ওই প্রার্থীর স্বামীকে ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরত দিয়েছেন বলেও অডিওতে বলা হয়েছে।
এর আগেও ১২ থেকে ১৫ লাখ টাকায় ইবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও রেকর্ড গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছিল। ওই অডিওতে ১২ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছিল।
প্রার্থী ফারজানা আক্তারের স্বামী শাহরিয়ার রাজ মামুন বলেন, চাকরির ৯৯ শতাংশ কনফার্ম করেছিল বলেই টাকা দিয়েছিলাম। আমার স্ত্রীর আর চাকরির বয়স নেই। আমি তাদের বিচার চাই।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, এটা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। রেকর্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি নিয়ে আমি বিব্রত।
আরেক শিক্ষক অধ্যাপক ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, রাজনীতি করার কারণে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হয়। তবে আমি কারো জন্য কখনো ভিসি স্যারের কাছে সুপারিশ করিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এ রকম কিছু প্রমাণিত হলে আমি চাকরি ছেড়ে দেব। আমি জানি না, ওই প্রার্থীর নিয়োগ হয়েছে কি না। তবে আমি এমন ধরনের কোনো বিষয়ে জড়িত নই।
গতকাল রোববার এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. হারুন-উর রশিদ আসকারী।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/এএম/আরআইপি