ইবির ডাইনিংয়ে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাইনিংগুলোতে নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের অভিযোগ উঠেছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের বাসি, পঁচা খাবার খাওয়ানোরও অভিযোগ রয়েছে। এসব খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা আমাশয়, ডায়রিয়া, গ্যাস্ট্রিকসহ পাকস্থলি সংক্রান্ত বিভিন্ন দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাতটি আবাসিক হলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শিক্ষার্থী রয়েছেন। হলের ডাইনিংগুলো এবং কেন্দ্রিয় ক্যাফেটোরিয়ায় এসকল শিক্ষার্থীদের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়াও ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী মেসে অবস্থান করে হলের ডাইনিংয়ে খাবার গ্রহণ করেন এমন শিক্ষার্থীদের সংখ্যাও অনেক। এসকল শিক্ষার্থীদের তিন বেলা খাবার গ্রহণের একমাত্র ভরসা হলের ডাইনিং।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাজারের সব থেকে নিম্নমানের সস্তা তরকারি, কম দামি চাল, ডাল, তেলসহ স্বল্প মূল্যের দ্রব্যগুলো ক্রয় করা হয় ডাইনিংয়ের জন্য। এছাড়াও এক বেলায় থেকে যাওয়া বাসি, পঁচা ভাত-তরকারি অন্য বেলার খাাবারের সঙ্গে মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তাছাড়া ডাইনিংয়ের ডাল যেন ফুরানোর নয় এ বেলার থেকে যাওয়া ডাল অন্য বেলায় চলছে। এ অনিয়মই যেন নিয়ম ইবির ডাইনিংগুলোতে।
আবার এসব খাবার রান্না হয় অস্বাস্থ্যকর, দুর্গন্ধযুক্ত নোংরা পরিবেশে আর রাধুনিরাও রান্না করছেন অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্নভাবে। অপরদিকে, ডাইনিং ও খাবার টেবিলগুলোও অপরিষ্কার, নোংরা, স্যাঁতস্যাঁতে অস্বাস্থ্যকর। এছাড়াও যারা খাবার পরিবেশন করেন তারাও অপরিষ্কার ও ময়লাযুক্ত কাপড় পরিধান করেন। যা মোটেই রুচিসম্মত নয়। তাছাড়াও ভাত-তরকারিতে মরা মশা-মাছি, ইট-পাথরের খণ্ডাংশ এমনকি মরা টিকটিকি পর্যন্ত পাওয়া যায় এসব খাবারে।
শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী দিনাতিপাত করছেন এসব খাবার খেয়ে। ফলে পেটের পীড়ায় আক্রন্ত হয়ে প্রায়ই শিক্ষার্থীদের দ্বারস্থ হতে হয় তাদের একমাত্র ভরসা বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে। আবার এসব খাবারে শরীরের চাহিদানুযায়ী মানসম্মাত খাবার না খাওয়াতেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন রোগে আক্রন্ত হচ্ছেন। ফলে শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় ঠিকমতো মন দিতে পারছেন না।
সাদ্দাম হোসেন হলের আকাশ, রমজান আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আসিফ, নুর আলম, সলাউদ্দীন, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের তানিয়া, বৈশাখী, জিনিয়া অভিযোগ করে জাগো নিউজকে জানান, ডাইনিংয়ের খাবার খেয়ে প্রায়ই অসুস্থ হতে হয়। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিকের মতো জটিল ব্যধিও এরই মধ্যে তৈরি হয়েছে। তাছাড়া এ খাবার খেয়ে লেখাপড়ায় মন দেয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি ডাইনিংয়ের পরিবেশ রুচি ও সাস্থ্যসম্মত নয়।
নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের কারণ হিসেবে ডাইনিং ম্যানেজাররা জাগো নিউজকে বলেন, ভালো মানের খাবার পরিবেশনে আমাদের ইচ্ছা থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাইনিংয়ের জন্য ভর্তুকি বরাদ্দ কম থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের ফাও খাওয়ার কারণে তারা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেকটা বাধ্য হয়ে এমন খাবর পরিবেশন করছেন। তারা ডাইনিংয়ে ভর্তুকি বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান।
প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও লালন শাহ হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. ইকবাল হোসেন জাগো নিউজকে জানান, বাজারের দ্রব্যমূল্যের যে ঊর্ধ্বগতি এবং ছাত্রদের কাছ থেকে যে টাকা নেওয়া হয় তা দিয়ে ভালো মানের খাবার সরবারহ করা সত্যিই দুরূহ।
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডাইনিংগুলোর ভর্তুকি বাড়ানোর বিষয়ে ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। আশা করছি, একটি ভালো ফলাফল পাওয়া গেলে মানসম্পন্ন খাবার পরিবেশন সম্ভব হবে।
এমজেড/পিআর