‘শিক্ষকদের মাঝে কাজের ভক্তি, দায়িত্ব অনুভূতি ও ত্যাগের অভাব’
শিক্ষকদের মাঝে নিজ কাজে ভক্তি, দায়িত্ব অনুভূতি ও ত্যাগের অভাব এবং এই প্রজন্মের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বিগ্ন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫ বছর পূর্তি ও ৬৬ বছর পদার্পণে সমস্যা ও সম্ভাবনা সম্পর্কে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাগো নিউজকে দেয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি একথা জানান।
অভিজ্ঞ শিক্ষকের অবসরে ভালো গবেষক, গবেষণা ও আদর্শ শিক্ষক হারাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। নতুন শিক্ষকরা আগের শিক্ষকদের অবস্থান ধরে রাখতে পারছেন না কেন এমন প্রশ্নে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাহা বলেন, গবেষণার কাজে দরকার হলো ডেভোশনস, কমিটমেন্ট, ডেডিকেশনস। তবে এই বিষয়টগুলো আমাদের মাঝে খুবই কম। গবেষণার জন্য যে অর্থ কম পাওয়া যাচ্ছে তা নয়। দেশে ও বিদেশে অনেকে আমাদের গবেষণার কাজ করছেন। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা অনেকে বলি হয়তো যে আমাদের ফান্ড নাই। তবে যেটুকু আছে তা দিয়ে কিছু শিক্ষক অনেক কাজ করছেন। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক, অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক, পদার্থের শিক্ষক অন্যান্য অনুষদের শিক্ষক কাজ করছেন। যা প্রশংসার দাবি রাখে।
কথা হলো তারা ফান্ড পাচ্ছেন কোথায়? বাইরের দেশেই হোক আর নিজের দেশেই হোক। তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে গবেষণাগারগুলোতে যন্ত্রপাতি সংকটের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে ইনস্ট্রুমেন্ট এর কথা বলছেন সেটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বল্প হলেও তো আছেই। তবে বিজ্ঞান গবেষণাগার, আইসিডিডিআরবি, বারডেম, সেন্ট্রাল বিজ্ঞান গবেষণাগার তো আছেই। কাজ করতে চাইলে সেখানে কোনো অসুবিধা নেই। আমাদের যে, কোনো কিছুর অভাব এমনটি নয় অভাব হলো মনের। এখন আমাদের ডেডিকেটেড মানসিকতার প্রয়োজন।
‘আর ইদানীংকালে আমি মনে করি বৈশয়িক বিষয়টি বেশি গ্রাস করেছে আমাদেরকে। আমি একটা বাড়ি করবো, গাড়ি করবো, একটা জায়গা থাকবে, ছেলে সন্তানকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করবো এমন চিন্তা ভাবনাই বড় করে দেখছি। আর বিভাগ পর্যায়ে যে আমার একটা ত্যাগ বা দায়িত্ব আছে সেটি ভুলে যাচ্ছি।’
বর্তমান শিক্ষার্থীদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দকুমার সাহা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করার পর অনেক শিক্ষার্থী কাঙ্ক্ষিত চাকরি পায় না। এজন্য অনেকে হতাশ হয়ে যায়। কেউ কেউ মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। এটা আমার কাছে অনেক বড় চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা কিন্তু তাদেরকে পাস করার পর ভালো একটা জায়গাতে দিতে পারছি না। আমাদের সন্তানেরা যদি চাকরির একটা নিশ্চয়তা পেত তাহলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে হতাশ শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যেত। আর মাদকাসক্তিতে এভাবে নিমজ্জিত হতো না।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায় এই বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার সমস্যা বা সম্ভাবনা বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য বলেন, পূর্বে একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলতে শিক্ষার পরিবেশের মধ্যে একটা টেরোরিজম ছিল। আমাদের ৪ বছরের কোর্স শেষ করতে ৮ বছর পর্যন্ত লেগে যেত। অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল। এখন সেই ক্ষেত্রে অস্ত্রের ঝনঝনানিটা অনেকটা কমেছে। পুরোপুরি কমেনি। ভবিষ্যতে যাতে না থাকে আমরা সেই চেষ্টাটাই করবো। আর শিক্ষার পরিবেশটা যাতে আরও উন্নত হয় এবং ছাত্র ছাত্রীদের সহিষ্ণুতা এবং শিক্ষকদের মধ্যে সহিষ্ণুতা আশা করবো।
এছাড়া তিনি বলেন, মেধাবী শিক্ষকরা এখানে আছেন তবে শিক্ষকদের কাছে আমার চাওয়ার বিষয় হবে তারা যেন তাদের সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য যেন সঠিকভাবে পালন করেন এটা আশা করবো। তারা যেন নিজ নিজ কাজে আরও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেন এমন আহ্বান জানান তিনি।
এদিকে শিক্ষকদের অভ্যন্তরিন দ্বন্দ্ব, আবাসন সংকট, লাইব্রেরিতে বইয়ের সংকট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অবকাঠামোগত, একাডেমিক ও অভ্যন্তরিন শান্তি শৃঙ্খলা সংকটসহ নানামুখি সংকটের বিষয়ে কথা হয় উপ-উপাচার্যের সঙ্গে।
তিনি বলেন, লাইব্রেরিতে বইয়ের সমস্যাকে আমি কিন্তু এখন বড় সমস্যা মনে করি না। তবে শিক্ষকদের মধ্যে দ্বন্দ্ব এটা বড় একটা সংকটের। যে সংকট উত্তোরণে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসবেন বলে আশাবাদী আমি।
এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে উপ-উপাচার্য বলেন, পূর্বেও যারা বিভিন্নভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করতে চেয়েছে সে যেই হউক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখনও যারা এরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উল্লেখ্য, আগামীকাল ৬ জুলাই ৬৫তম বছর পূরণ করে ৬৬ পদার্পণ করতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। ১৯৫৩ সালের এই দিনে প্রতিষ্ঠালাভ করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। যার প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক ইৎরাত হোসেন জুবেরী।
এমএএস/পিআর