জুনিয়রদের অর্ধনগ্ন করে রাতভর র্যাগিং করল সিনিয়ররা
পরিচয়ের নামে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্ধনগ্ন করে রাতভর র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সিনিয়র শিক্ষার্থীরা তাদের জুনিয়র শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ঘটনা ঘটায়।
তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ না পেলেও তদন্ত সাপেক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ শাস্তি দেবেন বলে জানিয়েছে।
জানা যায়, পরিচয়ের নামে গত বৃহস্পতিবার রাত দশটার দিকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের ছয় নবীন শিক্ষার্থীকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকস্থ তপোবন আবাসিক এলাকার তাপাদার ভিলা নামক একটি মেসে নিয়ে যান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের কয়েকজন শিক্ষার্থী।
পরিচয়ের নামে তাদেরকে প্রথমে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন তারা। এমনকি তাদের কথা না শোনায় বেশ কয়েকজনকে মারধরও করেন তারা। পরবর্তীতে তাদেরকে বাধ্য করে অর্ধনগ্ন ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে বিভিন্ন অশ্লীল ক্যাপশন দিয়ে পোস্টও করান তারা। রাত দশটা থেকে পরদিন সকাল ছয়টা পর্যন্ত আটকে রাখে। বিষয়গুলো কাউকে জানানো হলে আবারও মেসে ডেকে নেয়া এবং শিক্ষাজীবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, ছয় শিক্ষার্থীর মধ্যে একজন এজমা রোগীও ছিলেন। রাতে তার শ্বাসকষ্টের সমস্যা শুরু হলেও তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে মেসে আটকে রাখেন তারা। তবে তাকেও মেস থেকে ছাড়েননি সিনিয়র শিক্ষার্থীরা।
ভুক্তভোগী কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয়টি নিয়ে তারা প্রচণ্ড রকমের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ নিয়ে তারা কারো সঙ্গে কথা বলতেও ভয় পাচ্ছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে তারা এখনও প্রশাসনের কাছে কোনো ধরনের অভিযোগ জানায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টারের ১৯ জন এবং পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের একই বর্ষের ১ জন শিক্ষার্থী এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এদের মধ্যে ৬ জন শিক্ষার্থী মারমুখি ও হিংসাত্মক ভূমিকায় ছিল।
শাবি ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের ওপর জিরো টলারেন্স আরোপ করা আছে। র্যাগিং একটি ক্রাইম। এ ঘটনায় জড়িতদের লিস্ট আমরা সংগ্রহ করছি। কাউকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। নবীন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ ধরনের ব্যবহার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মেনে নেবে না। অতি দ্রুত জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আর যারা হুমকি দিয়েছেন তারা বিশ্ববিদ্যালয় আইনের আওতার বাইরে নয় বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক জহীর উদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিতির নামে কোনো ধরনের মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন মেনে নেয়া হবে না। অতি শিগগিরই শৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ছবি তুলে পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করার বিষয়টি সাইবার ক্রাইমের আওতায় পড়ে বলে মন্তব্য করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. জহিরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিভিল অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুশতাক আহমেদ বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। বিভাগের নবীন শিক্ষার্থীদের ওপর এ ধরনের অত্যাচার করার কোনো অধিকার কোনো শিক্ষার্থীর নেই। বিষয়টি প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আব্দুল্লাহ আল মনসুর/এএম/জেআইএম